সাকিব আল হাসান আর তামিম ইকবালের মতো দুই মহাতারকা নেই। বাংলাদেশের জন্য সেটা বড় ধাক্কা। ছোটখাটো চোট সমস্যায় ভুগছেন আরও কয়েকজন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মিরপুরে আজ শুরু হওয়া তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে তাই সেরা দলটা পাচ্ছে না স্বাগতিকরা। এরপরও ফেভারিট মাশরাফি বিন মতুর্জার দল, সেটা প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে বলেই।
একটা সময় জিম্বাবুয়ে ছিল বাংলাদেশের প্রবল প্রতিপক্ষ। তাদের বিপক্ষে প্রথম জয়ের দেখা পেতে অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে ১৩টি ম্যাচ (দুটি পরিত্যক্ত)। টানা ১০ ম্যাচে হারের পর মিলেছিল আরাধ্য জয়। তখন বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে লড়াইয়ে নিরঙ্কুশ ফেভারিট ছিল জিম্বাবুয়ে। এখন দিন পাল্টেছে। এখন নিরঙ্কুশ ফেভারিট সবশেষ ১০ ম্যাচেই জয় তুলে নেয়া বাংলাদেশ। ২০১৩ সালের পর টাইগারদের আর হারের স্বাদ দিতে পারেনি জিম্বাবুয়ে। ওয়ানডেতে ঘরের মাঠে এই দলটির বিপক্ষে বিগত আট বছর কেবল বিজয়কেতনই উড়িয়েছে টাইগাররা। এমন পরিস্থিতিতে নিজেদের আঙিনায় যখন আরেকটি সিরিজ শুরু হচ্ছে, বাংলাদেশ তো নিরঙ্কুশ ফেভারিটের তকমা পাবেই। সেটা সাকিব-তামিমের মতো সেরা খেলোয়াড় দলে না থাকার পরও!
প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়েকে অবশ্য সমীহই করছে বাংলাদেশ। কোচ স্টিভ রোডসের চোখে প্রতিপক্ষ ‘আহত বাঘ’। তারা এবার পাল্টা আঘাত হানতে চাইবে। অধিনায়ক মাশরাফির মতে, এই জিম্বাবুয়ে অভিজ্ঞতায় পূণর্ সেরা খেলোয়াড়দের নিয়ে গড়া, তারা চ্যালেঞ্জ জানাবেই। সফরকারী অধিনায়ক হ্যামিল্টন মাসাকাদজাও বলে রেখেছেন, এবার প্রতিদ্ব›িদ্বতাপূণর্ এক সিরিজ হবে। আসলেই কি তাই? ক্রিকেট মাঠে দলটির সাম্প্রতিক অতীত কিন্তু তেমন ইঙ্গিত দেয় না। বিসিবি একাদশের কাছে যারা পাত্তা পায় না, তারা বাংলাদেশ দলের সামনে মাথা তুলে দঁাড়াতে পারবে, এমনটা হয়তো জিম্বাবুয়ের একনিষ্ঠ সমথর্কও এখন আর আশা করছেন না। তাহলে মাসাকাদজা যে প্রতিদ্ব›িদ্বতার কথা বললেন! আসলে অধিনায়ককে তো এসব গৎবঁাধা কথা বলতেই হয়, ময়দানে নামার আগেই তো আর হার স্বীকার করা যায় না!
শনিবার দুপুরে মিরপুরে অনুশীলনে নামার আগে সিরিজপূবর্ সংবাদ সম্মেলনে মাসাকাদজা যেমন বললেন, বাংলাদেশকে হারানোর সক্ষমতা তাদের আছে। তবে এই সক্ষমতার প্রমাণ তারা বিগত পাঁচ বছরে রাখতে পারেনি। নিজেদের ক্রিকেটের সুদিন হারিয়ে ফেলা দলটি অবশ্য নতুন করে জেগে উঠতে চাইছে। ব্রেন্ডন টেলর, কাইল জাভিের্সর মতো ক্রিকেটাররা ইংলিশ কাউন্টির ক্লাবগুলোর সঙ্গে ‘কলপ্যাক’ চুক্তি শেষে আবার ফিরেছেন জাতীয় দলের তাবুতে। ক্রেগই আরভিন, শন উইলিয়ামস, সিকান্দার রাজারাও আছেন। টাইগার দলপতি মাশরাফির চোখে তাই এই জিম্বাবুয়ে কিছুটা ভিন্ন। তারা চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে। তাছাড়া নিরঙ্কুশ ফেভারিট হওয়ার বাড়তি একটা চাপও থাকছে স্বাগতিকদের ওপর।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশ জিতলে সেটা হবে স্বাভাবিক। হেরে গেলেই বিপত্তি। মাঠে তাই নিজেদের শতভাগ নিংড়ে দেয়ার বিকল্প দেখছেন না মাশরাফি, ‘আমাদের ১০০ ভাগ দিয়েই খেলতে হবে। হয়তো জিতলে সবাই বলবেÑ এটাই হওয়ার কথা ছিল। হারলে কিন্তু ভিন্ন কথা হবে, এটাই স্বাভাবিক।’ সামনেই বিশ্বকাপ। ইংল্যান্ডে আগামী বছর অনুষ্ঠেয় ওই আসরটিকে ভাবনায় রেখেই আসন্ন সিরিজগুলো খেলবে বাংলাদেশ। এমন পরিস্থিতিতে নিজেদের ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়–ক, এমনটা চান না মাশরাফি। টাইগার দলপতি তরুণদের দেখে নিতে চান এই সিরিজ থেকেই, ‘কিছু নতুন খেলোয়াড় দলে নেয়া হয়েছে, সামনে বিশ্বকাপকে চিন্তা করে। তাদের দেখে নেয়ার এটাই সুযোগ। সেটাও মাথায় রাখতে হবে। একই সঙ্গে ম্যাচ জেতাটাও খুবই গুরুত্বপূণর্।’
যেকোনো সিরিজের শুরুটা ভালো হলে পরের কাজটা অনেক সহজ হয়ে যায়। তরুণদের নিয়ে বাংলাদেশ এখন সেই ভালো শুরুর অপেক্ষায়। নতুনদের জন্য এই সিরিজ দারুণ এক সুযোগ। অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা ফজলে রাব্বি, দলে ফেরা অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনকে দেখা যেতে পারে আজকের একাদশে। চোট সমস্যা রয়েছে রুবেল হোসেনের। মাশরাফি আর মুস্তাফিজের সঙ্গে তৃতীয় পেসার হিসেবে সাইফউদ্দিনই এখন টিম ম্যানেজমেন্টের প্রথম পছন্দ, তবে আরেক বঁাহাতি পেসার আবু হায়দার রনির সঙ্গে লড়াই করেই একাদশে ঢুকতে হবে তাকে। নাজমুল ইসলাম অপুকে নিয়ে স্পিন আক্রমণ সামাল দেবেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ব্যাট হাতে ইনিংসের সূচনায় লিটন দাসের সঙ্গী কে হবেন, সেটা নিয়ে ধেঁায়াশা রয়েছে। সবশেষ এশিয়া কাপের ফাইনালে লিটনের সঙ্গে ওপেন করেছিলেন মিরাজ। তবে এবার ভাবনায় আছেন নাজমুল হোসেন শান্ত আর ইমরুল কায়েস।
একাদশ কেমন হবে, শনিবারের সংবাদ সম্মেলনে সংগত কারণেই বিষয়টা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেননি মাশরাফি। সিদ্ধান্ত হবে উইকেট দেখে। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের ওই উইকেটও নাকি এখন বড় এক ধঁাধা! মাশরাফিই যেমন বললেন, ক্ষণে ক্ষণে চরিত্র বদলায় উইকেট। তবে ওই উইকেটও ‘নিরঙ্কুশ ফেভারিট’ বাংলাদেশের জয়ের লক্ষ্য বদলাতে পারছে না।