ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, দেশের প্রথম যোগাযোগ উপগ্রহ ‘বঙ্গবন্ধু-১’ উৎক্ষেপণের তারিখ পুনর্নির্ধারণ করে ৭ মে করা হয়েছে। এর আগে ৪ মে ফ্লোরিডা থেকে ‘বঙ্গবন্ধু-১’ উৎক্ষেপণের কথা ছিলো, তবে এখন নতুন করে ৭ মে নির্ধারণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি) মিলনায়তনে ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট : পটেনশিয়ালিটি ইন স্পেস’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে মন্ত্রী এই নতুন তারিখের কথা জানান।
মন্ত্রী বলেন, ‘৭ মে উৎক্ষেপণের সম্ভাব্য তারিখ আমরা জানি, তবে উৎক্ষেপণের আগেও পুনরায় তারিখ পরিবর্তন হতে পারে।’
তিনি বলেন, ৪২ সদস্যের একটি টিম উৎক্ষেপণকালে ফ্লোরিডায় থাকবে এবং উৎক্ষেপণের পরে জাতীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই ঘটনা উদযাপন করা হবে। আমরা বঙ্গবন্ধু-১ নিয়ে কাজ করছি তবে আমরা বঙ্গবন্ধু ২, ৩ এবং ৪ নিয়ে কাজ করবো এবং বঙ্গবন্ধু ২ হবে বঙ্গবন্ধু-১ এর সম্পূরক।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন, আমেরিকান সংস্থা স্পেসএক্স উপগ্রহটি কক্ষ পথে উৎক্ষেপণ করবে। আজ সকালে সংস্থাটি জানিয়েছে উপগ্রহটি উৎপক্ষেপণের জন্য ৭ মে অনুকূল আবহাওয়া থাকবে।
মন্ত্রী বলেন, আমরা আশা করছি এই তারিখ (৭মে) উৎক্ষেপণের চূড়ান্ত তারিখ হবে। তবে ফ্লোরিডার আবহাওয়া পরিস্থিতির ওপর বিষয়টি নির্ভর করছে। তিনি বলেন, তারা (স্পেসএক্স) ৪ থেকে ৫ দিন আগে আমাদের জানাবে।
বঙ্গবন্ধু-১ প্রকল্প ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মেজবাহ উজ্জামান বলেন, উৎক্ষেপণের জন্য গ্রাউন্ড স্টেশনের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে এবং অন্যান্য প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। স্পেসএক্স ফ্যালকন ৯ রকেট ৩.৫ মেট্রিকটন ওজনের বঙ্গবন্ধু-১ যোগাযোগ উপগ্রহ কেপ কেনাভেরাল উৎক্ষেপণ মঞ্চ থেকে কক্ষপথে নিয়ে যাবে। এটি কক্ষপথের নির্ধারিত অবস্থানে পৌঁছাতে ৮ দিন সময় লাগবে।
উপগ্রহটি নির্মাণ করে ফ্রান্সের থ্যালেস এলেনিয়া স্পেস। উৎক্ষেপনের পর এটি মহাকাশে ১১৯ দশমিক ১ পূর্ব দ্রাঘিমায় অবস্থান করবে।
এর আগে ২০১৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর ফ্যালকন-৯ রকেট ব্যবহার করে স্যাটেলাইটটি উৎপক্ষেপণের পরিকল্পনা করেছিল স্পেসএক্স কিন্তু হারিকেন ইরমার কারণে সেটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে তখন ওই উৎক্ষেপণ স্থগিত করা হয়।
২০১৫ সালের মে মাসে সরকার বঙ্গবন্ধু-১ প্রকল্পের অনুমোদন দেয় এবং একই বছরের নভেম্বরে ২৪৮ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে থ্যালেস এলেনিয়াকে এ কাজের দায়িত্ব দেয়া হয়।
থ্যালেস এলেনিয়া কয়েক মাস আগে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের নির্মাণ কাজ শেষ করে এবং সেটি ফ্রান্সের ক্যানেসে একটি পণ্যাগারে রাখে। আরো পরে ২৯ মার্চ স্যাটেলাইটটি ফ্লোরিডায় স্থানান্তর করা হয়।
এই স্যাটেলাইট নিয়ন্ত্রণের জন্য গাজীপুরের জয়দেবপুরে এবং রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ায় ইতোমধ্যে দুটি গ্রাউন্ড স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে। কু-ব্যন্ড বাংলাদেশ ও এর বঙ্গোপসাগর অঞ্চল, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকা, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইন কভার করবে। অপরদিকে সি-ব্যন্ড বাংলাদেশ, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, মিয়ানমার, ভুটান, নেপাল, শ্রীলংকা, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান ও কাজাখস্তানের একাংশ কভার করবে।
বঙ্গবন্ধু-১ এর মাধ্যমে ডাইবেক্ট-টু- হোম (ডিটিএইচ), ভিডিও সার্ভিস, ই-লার্নিং, টেলিমেডিসিন, পরিবার পরিকল্পনা, কৃষি বিষয়ক কাজ ইত্যাদি সুবিধা পাওয়া যাবে।
অপরদিকে সেলুলার বেকহোলে ভয়েস সার্ভিস ও দুর্যোগ থেকে রক্ষা ইত্যাদি এবং ইন্টারনেটের জন্য ডাটা সার্ভিস, এসসিএডিএ, এসওএইচও-এর পাশাপাশি বিজনেস-টু বিজনেস (ভিএসএটি) ইত্যাদি সুবিধাও পাওয়া যাবে।