হালদায় ব্যাপক হারে মাছ মরছে

তিন খালের দুষিত পানিতে ব্যাপক হারে মরছে হালদার মাছ। গত কয়েকদিন ধরে স্মরণকালের ভয়াবহ দুষনের শিকার হয়েছে দেশের অন্যতম মৎস প্রজনন কেন্দ্র চট্টগ্রামের হালদা। দুষিত পানির বিষাক্ততায় শুধু মাছ নয় মরছে হালদার অন্যান্য জীবও। তবে আজ পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলে দাবী হালদা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মঞ্জুরুল কিবরিয়ার।

গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও পরিবেশ অধিদপ্তরের বিশেষজ্ঞ টিম নদীর ১০টি পয়েন্টে পানির নমুনা পরীক্ষা করেছেন। নমুনা পরীক্ষার পর হালদার ১০টি পয়েন্টের পানিতে ভয়াবহ চিত্র পেয়েছে বিশেষজ্ঞ টিম।

হালদার পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ায় গণহারে মাছ মরছে বলে তাঁরা জানান। বিশেষজ্ঞ টিমের সদস্যরা জানান, সাধারণত প্রতি লিটার পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের স্বাভাবিক মাত্রা থাকে ৫ মিলি গ্রাম। কিন্তু হালদার পানিতে পাওয়া গেছে ২ মিলি গ্রামের চেয়েও কম। এত কম পরিমাণ অক্সিজেনের মধ্যে মাছ বেঁচে থাকা সম্ভব নয়।

স্থানীয়রা জানান, গত মঙ্গল ও বুধবার হালদায় ছোট ছোট মাছ মারা পড়লেও বৃহস্পতিবার পাওয়া গেছে প্রচুর বড়বড় মৃত মাছ। এর মধ্যে রুই জাতীয় (রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালিবাউশ) মাছও রয়েছে।রুই জাতীয় মাছের মধ্যে ১৫ কেজি ওজনের একটি মৃগেল মাছও পাওয়া গেছে। পরে এটি মাটি চাপা দেওয়া হয়েছে। দূষণে বিপর্যস্ত হালদা নদীতে মরে ভেসে উঠেছিল মা–মাছটি।এতটাই পচে গেছে মাছটি শেষ পর্যন্ত মাটি খুঁড়ে চাপা দেওয়া হলো কঙ্কাল সংগ্রহের জন্য।

এছাড়া বড় বড় কাতলা, আইড়, চিংড়ি, বাইন, টেংরাসহ নানা প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণী মরে ভেসে উঠছে হালদায়।হুমকির মুখে পড়ছে জীববৈচিত্র্য।উদ্বেগ–উৎকণ্ঠায় রয়েছেন হালদা পারের মানুষ।

হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. মো. মনজুরুল কিবরীয়া বলেনন, ‘গত দুই যুগের বেশি সময় ধরে হালদায় কাজ করছি। কিন্তু হালদার পানি এত ভয়াবহ দূষণ হতে দেখিনি। বৃহস্পতিবার নদীর কর্ণফুলীর মুখ, খন্দকিয়া খালের মুখ, কাটাখালী খালের মুখ, মাদারিখালের মুখ, রামদাশ হাট এলাকা, নাপিতের ঘোনা, আজিমের ঘাট, মাছুয়াঘোনা, সর্তার ঘাট এলাকাসহ ১০টি পয়েন্টে পানির নমুনা পরীক্ষা করি। পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন খুব কম পাওয়া গেছে যা মাছের বসবাসের উপযোগী নয়। নমুনা পরীক্ষায় নদীর উজানের চেয়ে ভাটি এলাকায় দূষণের মাত্রা বেশি পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রাউজানের আজিমের ঘাট থেকে মদুনাঘাট পর্যন্ত প্রায় ৮কিলোমিটার এলাকায় দূষণের মাত্রা তুলনামূলক বেশি ছিল।

মনজুরুল কিবরীয়া বলেন, ‘সাধারণত প্রতি লিটার পানিতে দ্রবীভূতঅক্সিজেনের স্বাভাবিক মাত্রা থাকে ৫ মিলি গ্রাম। কিন্তু হালদার পানিতে রয়েছে ২ মিলিগ্রামের চেয়েও কম। এত কম পরিমাণ অক্সিজেনের মধ্যে মাছ বেঁচে থাকা সম্ভব নয়।তাই রুই জাতীয় মাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ মরে ভেসে উঠছে। পচন ধরে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে নদীতে।

প্রসঙ্গত, গত কয়েকদিনে ভারী বর্ষণ ওপাহাড়ি ঢলে রাউজান, ফটিকছড়ি ও হাটহাজারীতে বন্যা দেখা দেয়। বন্যার পানি নামার পর কয়েকদিন ধরে হালদার মাছ মরে ভেসে ওঠার বিষয়টি নজরে পড়ে মানুষের।নদীর পানি কালো রং ধারণ এবং দুর্গন্ধছড়াতে থাকে। মঙ্গল ও বুধবার নদীতে ছোট আকারের মরা মাছ দেখা গেলেও বৃহস্পতিবার সকাল থেকে প্রচুর পরিমাণের রুই জাতীয়সহ বিভিন্ন প্রজাতির বড় মাছ ও জলজ প্রাণী মরে ভেসে উঠতে দেখা যায়।নদী দূষণ ও মাছ মরে যাওয়ার কারণ নির্ণয়ের জন্য গতকাল মাঠে নামে বিশেষজ্ঞ টিম। তাদের পরীক্ষায় নদীর পানি দূষণের এইভয়াবহ চিত্র উঠে আসে।

প্রফেসর কিবরিয়া বলেন, নমুনা পরীক্ষা করে রিপোর্ট সরকারের উর্ধতন মহলে পাঠানো হয়েছে। তাঁরা রিপোর্ট পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।