নেপালের বিরুদ্ধে ন্যুনতম ড্র করলেই বাংলাদেশ পৌঁছে যাবে সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশীপের সেমিতে। এমনই ছিল সমীকরণ। কারণ আগের দু’ম্যাচে ভুটান এবং পাকিস্তানকে হারায় তারা। কিন্তু মানুষ ভাবে এক হয় আরেক। নেপালের কাছে হেরে এবারের সাফ ফুটবলকেই বিদায় জানাতে হল স্বাগতিক বাংলাদেশকে। নেপালের কাছে হারে বাংলাদেশ,পাকিস্তান এবং নেপাল তিন দেশের পয়েন্ট হয়ে যায় সমান। প্রত্যেকেই পায় ৬ পয়েন্ট করে। কিন্তু গোল ব্যবধানে বাংলাদেশের চাইতে পাকিস্তান এবং নেপাল এগিয়ে থাকায় তারাই উঠে গেল সেমিফাইনাল পর্বে। বাংলাদেশের পক্ষে ছিল ৩ এবং বিপক্ষে ২ গোল। পাকিস্তানের পক্ষে ছিল ৫ এবং বিপক্ষে ২ গোল। অন্যদিকে নেপালের পক্ষে ছিল ৭ এবং বিপক্ষে ২ গোল। গ্রুপের শেষ ম্যাচে নেপালের কাছে ২–০ গোলে হেরে বিদায় নিতে হয়ে বাংলাদেশকে। এই ম্যাচ জিতে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেমিফাইনালে উঠল নেপাল, তাদের সঙ্গী পাকিস্তান। গতকালের খেলায় আক্রমণে শুরু থেকে এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ। তাদের রক্ষণভাগও ছিল অপ্রতিরোধ্য। ৭ মিনিটে রোহিতের পাস থেকে সুজল বাংলাদেশের বঙে ক্রস দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশি ডিফেন্ডার বুক চিতিয়ে রুখে দেন। ১৩তম মিনিটে মামুনুলের বাঁ পায়ের কর্নার কিক কাছের পোস্টে রুখে দেন নেপালি ডিফেন্ডার আদিত্য। দ্বিতীয় কর্নার ঠেকান গোলরক্ষক কিরণ চেমজং। ১৪ মিনিটে বাংলাদেশের বঙে সুনীলের হেড জোরালো হতে দেননি জামাল ভূঁইয়া। ৫ মিনিট পর তপু বর্মণ নেপালের বক্সের মধ্যে হেড করেছিলেন, কিন্তু সেটা লক্ষ্যের দিকে না ছোটায় সহজেই বিপদমুক্ত করেন নেপালি ডিফেন্ডাররা। ২৪ মিনিটে নেপাল ফাউল করলে ফ্রি কিক পায় বাংলাদেশ। মামুনুলের শট ভরতের হাতে লাগলে দ্বিতীয় ফ্রি কিক থেকে মিনিটে ওয়ালি ফয়সালের শট ক্রসবারের অনেক উপর দিয়ে চলে যায়। আধ ঘণ্টা পার হওয়ার কিছুক্ষণ পরই অবাক করা গোলে এগিয়ে যায় নেপাল। ৩৩ মিনিটে বিমল ঘারতি মাগারের ফ্রি কিক বাংলাদেশের জালে ঢোকে গোলরক্ষক শহীদুল আলমের বোকামিতে। লম্বা কিকটি উঁচু দিয়ে এসেছিল, বাংলাদেশি গোলরক্ষক ফিস্ট করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তার হাত ফসকে জালে জড়ায় বল। এই গোলেই স্বাগতিকদের আত্মবিশ্বাস চুরমার হয়ে যায়। বিরতির পর গোল শোধে মরিয়া ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ৫৩ মিনিটে তাদের জালে আরেকবার বল বল জড়ানোর সুযোগ তৈরি করেছিল নেপাল। ভারতের বাঁ পায়ের শট রুখে দেন শহীদুল। ফিরতি শট গোলপোস্টের পাশ দিয়ে চলে যায়। তার দুই মিনিট আগে বিমলের আরেকটি ফ্রি কিক এবার ঠেকাতে সফল হন শহীদুল। ৬৪ মিনিটে বাংলাদেশের রক্ষণভাগের চাপে পড়ে লক্ষ্যে শট নিতে পারেনি নেপাল। ৭০ মিনিটে ওয়ালির ক্রস শাখাওয়াত রনি হেড করেছিলেন। কিন্তু ক্রসবারের ঠিক পেছনে জালের উপর বল পড়ে। রনি ৭৬ মিনিটে আবারও বঙের মধ্যে বল পান। কিন্তু তার হেড ঠিকভাবে নিতে দেননি নেপালের ডিফেন্ডাররা। ৩ মিনিট পর আবারও বাংলাদেশের ১০ নম্বর জার্সিধারী শট নেন লক্ষ্যে। ছোট বক্সের কিছুটা দূর থেকে রনি বাঁ পায়ে শট নিলেও পোস্টে বল রাখতে পারেননি। ৮২ মিনিটে নবযুগের ক্রসে সুজল জাল খুঁজে পান। কিন্তু অফসাইডের কারণে নেপালের গোলটি বাতিল হয়। ৬ মিনিট পর সুনীল বালের ডান দিক থেকে নেওয়া শট দারুণ সেভ করেন শহীদুল। কিন্তু নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার এক মিনিট আগে নবযুগ দুর্দান্ত গোল করে ব্যবধান বাড়ান। বিশাল রায়ের পাস পেয়ে সুযোগের সদ্ব্যবহার করেন তিনি। ডান পায়ের গতিময় শটে নেপালের দ্বিতীয় গোল করেন নবযুগ। ইনজুরি সময়ে চার মিনিট যোগ করা হলেও এই গোলে বাংলাদেশের শেষ আশারও সমাধি ঘটে। সাফে এ নিয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে তৃতীয় জয় পেল নেপাল। ৭ বারের মুখোমুখিতে বাংলাদেশের জয় ৪টি। ফিফার দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২২ বারের মুখোমুখি লড়াইয়ে নেপাল পেল সপ্তম জয়ের দেখা।
সাফ ফুটবলে তিন ম্যাচের তিনটিতে হেরে আসর থেকে বিদায় নেওয়া ভুটানকে ফিরতে হয়েছে খালি হাতে। ‘বি’ গ্রুপ থেকে সবার আগে সেমি ফাইনালে উঠেছে ভারত। গ্রুপের অন্য দুই দল শ্রীলঙ্কা এবং মালদ্বীপের মধ্যকার ম্যাচটি ড্র হয়। ভারত ২–০ গোলে হারিয়েছিল লঙ্কানদের। আর মালদ্বীপ–শ্রীলঙ্কা ম্যাচটি গোলশূন্য ড্র হয়।