সাতকানিয়া মডেল হাই স্কুলের বেহাল দশা

সাতকানিয়া উপজেলার স্কুল রোড হয়ে উপজেলা ও পৌরসভা সদরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে প্রাচীনতম সাতকানিয়া হাই স্কুলের মাঠ। ফুটবল, ক্রিকেট খেলার মাধ্যমে সকাল সন্ধ্যা মাতিয়ে রাখে এলাকার শিশু, কিশোর, যুবকসহ নানা বয়সের মানুষ। এ মাঠে গ্রীষ্মকালীন, শীতকালীন খেলার আয়োজন হয় নিয়মিত। ক্রীড়ানুরাগীরা বলে আলাদা একটা খ্যাতি আছে সাতকানিয়া হাইস্কুল মাঠের। উপজেলার প্রাচীনতম এ মাঠটি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে অবহেলায় অযতেœ পড়ে আছে। একটি মাত্র গ্যালারি রয়েছে, সংস্কারের অভাবে সেটিরও টুকরো টুকরো পলেস্তারা খসে পড়ছে। বৃষ্টিতে মাঠে জমে হাঁটু পরিমাণ পানি। সীমানা প্রাচীর না থাকায় প্রতিদিন গোচারণভূমি হিসেবেও মাঠটি ব্যবহৃত হচ্ছে। এ মাঠে প্রশাসনের বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনের সময় হলেই হিড়িক পড়ে জোড়াতালি সংস্কারের। মাঠেই নিয়মিত আয়োজন হয় বিভিন্ন মেলার। স্কুল কর্তৃপক্ষ মাঠের একপাশ দখল করে তৈরি করেছে দোকানঘর। এ মাঠে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসসহ সকল জাতীয় কর্মসূচি পালন করা হলেও আজ পর্যন্তউপজেলা প্রশাসন, স্কুল কর্তৃপক্ষ বা কোন জনপ্রতিনিধি মাঠের উল্লেখযোগ্য কোন উন্নয়ন বা সংস্কারের উদ্যোগ নেয়নি। রাজনৈতিক সভা, মেলাসহ নানা আয়োজন করতে গিয়ে নিয়মিত ক্ষতবিক্ষত হয় মাঠটি। খেলার মাঠে গরুর হাট ইজারা দেয়ার অনুমতি না থাকলেও প্রভাবশালী একটি মহল জেলা প্রশাসনকে পাশর্^বর্তী অন্য স্থান দেখিয়ে মূলত স্কুল মাঠেই গরুর হাট বসায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাঠের নিয়মিত একজন খেলোয়াড় জানান, মাঠটি ব্যবহার করে কর্তৃপক্ষ এবং প্রশাসন আয় করলেও তার ন্যূনতম অংশও এ মাঠের সংস্কারের জন্য ব্যয় করে না। সংস্কারের উদ্যোগ তো দূরের কথা, কোন প্রশাসনিক কর্মকর্তা কিংবা স্কুল কর্তৃপক্ষ কারো মুখে কোনদিন মাঠ নিয়ে কোন পরিকল্পনার কথা শোনা যায়নি। এ মাঠে নিয়মিত খেলে যুব গেমসে অংশ নেয়া ফুটবল খেলোয়াড় মিনহাজুর রহমান বিজয় জানায়, বর্ষা মৌসুমে জমে থাকা ময়লা পানিতে খেলে পায়ে দেখা দেয় নানা সমস্যা। মাঠে খেলায় অংশ নেয়া স্থানীয় বড় ভাইদের সহযোগিতায় প্রায়শই সংস্কার করে খেলাধুলা করি। আশা করছি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ক্রীড়ামোদিদের কথা ভেবে মাঠের উন্নয়নের জন্য এগিয়ে আসবেন। উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক কুতুব উদ্দিন চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, সাতকানিয়া মডেল হাইস্কুল মাঠটি ক্রীড়ামোদীদের ক্রীড়া চর্চার একমাত্র সম্বল। যেহেতু মাঠটি স্কুলের নিজস্ব, সেহেতু স্কুল কর্তৃপক্ষ যদি সঠিক ব্যবস্থাপনা বা পরিকল্পনা হাতে নিয়ে নিয়মিত সংস্কার করে, তাহলে মাঠটি খেলার উপযোগী থাকে। তিনি আরো জানান, স্কুল কর্তৃপক্ষ যদি সঠিক কোন পরিকল্পনা করে সহযোগিতার জন্য ক্রীড়া সংস্থাকে জানায়, ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে। তিনি স্কুল কর্তৃপক্ষ, উপজেলা প্রশাসন এবং ক্রীড়া সংস্থার সমন্বয়ে মাঠের সংস্কার ও উন্নয়নশীর্ষক একটি আলোচনা সভা আয়োজনেরও প্রস্তাব করেন। সাতকানিয়া মডেল হাই স্কুল পরিচালনা পর্ষদ সভাপতি ও পৌর মেয়র মোহাম্মদ জোবায়েরকে মাঠের জলাবদ্ধতাসহ বর্তমান বেহাল অবস্থার কথা জানিয়ে এ বিষয়ে তার বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি জানান, এটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের একটি অংশ। বিল্ডিং ভরাট হয়ে একটি নতুন ধরনের সমস্যা তৈরি হয়েছে। দীর্ঘদিন হতে সৃষ্ট কোন সমস্যা নয়। মাঠের সংস্কার বা উন্নয়নের কোন পরিকল্পনা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, জলাবদ্ধতার কথা মাথায় রেখে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা হিসেবে নদীর সাথে সংযুক্ত রেখে একটি ড্রেনের পরিকল্পনা করা হয়েছে যা আশা রাখছি অতিসত্বর বাস্তাবায়ন হবে। পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থার আগে কোন সংস্কার করা হলে তা টেকসই ও মজবুত হবে না। বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে দ্রুত সীমানা নির্ধারণের উদ্যোগ নেয়াসহ গ্যালারি নির্মাণের পরিকল্পনার কথা জানান মেয়র মোহাম্মদ জোবায়ের। মাঠ নিয়ে নানা পরিকল্পনা থাকলেও অর্থাভাবের জন্য মেয়র দুঃখ প্রকাশ করেন। থানা থেকে উপজেলায় রূপান্তরিত হওয়ার পর মাঠের পশ্চিম পাশে গ্যালারিগুলো নির্মিত হয়। প্রকৃত রঞ্জন চাকমা ইউএনও থাকাকালীন সর্বশেষ উপজেলা প্রশাসন মাঠের পশ্চিম-দক্ষিণ পাশে গ্যালারিগুলো নির্মাণ করেন। গ্যালারি নির্মাণের প্রকল্প পরির্বতন করে পাবলিক হল ও পাবলিক লাইব্রেরি সংলগ্নে তৎকালীন উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ওমর আলী ক্রীড়া সংস্থার কার্যালয় নির্মাণের উদ্যোগ নিলে ক্রীড়ামোদিদের বাধার মুখে তা ভেস্তো যায়। বিভিন্ন সময় নামমাত্র মাটিভরাট ও জোড়াতালি সংস্কার হলেও এরপর উল্লেখযোগ্য কোন কাজ বা সংস্কার হয়নি মাঠের।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মোবারক হোসেন জানান, যেহেতু এ মাঠে সমস্তা জাতীয় দিবসাদি পালন করা হয় এবং উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়, সেহেতু উপজেলা প্রশাসনের একটি পরিকল্পনা আছে সাতকানিয়া হাইস্কুল মাঠ, পাবলিক হল ও পাবলিক লাইব্রেরি নিয়ে। উপজেলা প্রকৌশলীকে বলা হয়েছে প্রজেক্ট তৈরি করে দেয়ার জন্য। তিনি আরো জানান, প্রজেক্ট তৈরি হলে তদবির করে মাঠ সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হবে।
মাঠটি পরিকল্পিতভাবে দ্রুত সংস্কার ও উন্নয়ন করে খেলার উপযোগী করে তোলার দাবি স্থানীয় ক্রীড়ামোদি ও এলাকাবাসীর। খবর দৈনিক পূর্বকোণ