সাতকানিয়া কলেজ রোডে ময়লার স্তূূপ, দুর্গন্ধে নাকাল পৌরবাসী

সাতকানিয়া পৌরসভা গঠনের ১৮ বছর পার হলেও ময়লা–আবর্জনা ফেলার নির্দিষ্ট কোনো জায়গা ঠিক করতে পারেনি পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। দুর্গন্ধে দুর্বিষহ জীবন অতিবাহিত করছে পৌরবাসী। আবর্জনা ফেলা হচ্ছে রাস্তার পাশে খোলা জায়গায়। পৌরশহরের বিভিন্ন স্থান থেকে ময়লা–আর্বজনা এনে স্তূপ করে ফেলা হয় সাতকানিয়া কলেজ রোড চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের ডাক বাংলোর সামনে ফসলী একটি জমিতে। দু’য়েক বছর আগেও এ জমিতে ধান চাষসহ নানা ফসল উৎপাদিত হত। ময়লা আবর্জনা স্তূপ করে ফেলার কারণে মশার উপদ্রবের পাশাপাশি বাতাসে ছড়িয়ে পড়া দূুর্গন্ধে নাকাল পৌরবাসী।

অন্যদিকে স্তূপকৃত ময়লা পোড়ানোয় সৃষ্ট ধোঁয়ার ফলে শিশুদের মারাত্মক শ্বাসকষ্ট হতে পারে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। পৌরসভার এ গুরুত্বপূর্ণ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন স্কুল, কলেজ পড়ুয়া ছাত্র–ছাত্রীসহ হাজার হাজার মানুষের চলাচল। ময়লা–আর্বজনা পচে সৃষ্টি হয় দুর্বিষহ গন্ধ।

সাতকানিয়া মডেল হাই স্কুল, সাতকানিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, বিদ্যালয়ে যেতে আসতে নাক চেপে ধরতে হয়। দুর্গন্ধে বমি চলে আসলেও বাধ্য হয়েই এ রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করতে হয়। শহর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে দৃশ্যত নানা উদ্যোগ নিলেও পৌর কর্তৃপক্ষের এমন কাজে অসন্তোষ্টি রয়েছে পৌরবাসীর। বর্জ্য সংগ্রহে অব্যবস্থাপনার দাবি স্থানীয় এলাকাবাসীর। পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা ভোর ছ’টা থেকে ন’টার মধ্যে পৌর শহরের বিভিন্ন রাস্তা পরিষ্কার করে। কিন্তু ঘন্টা না যেতেই রাস্তাজুড়ে ফেলা হয় স্থানীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ময়লা আর্বজনা। পৌরবাসী এজন্য দায়ী করছেন পৌরসভার বর্জ অপসারণে সঠিক পরিকল্পনা এবং অব্যবস্থাপনাকে। পৌর নাগরিক ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের নিয়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনার অভিমত স্থানীয় সচেতন মহলের। ময়লার স্তূপের কয়েকগজ সামনেই জেলা পরিষদের ডাকবাংলো। জনপ্রতিনিধি, উচ্চ পর্যায়ের সরকারি প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ ডাকবাংলোতে নিত্য আনাগোনা থাকলেও অজ্ঞাত কারণে সবাই নীরব। স্থানীয় বিভিন্ন তরুণ নানা সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ফেসবুকে পোস্ট করে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন এবং মেয়রের।

এলাকাবাসী জানায়, দীর্ঘদিন ধরে এসব বর্জ্য অপসারনের দাবি জানিয়েও কোন কাজ হয় নি। সম্প্রতি পৌরসভার কলেজ রোডে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, আবর্জনার স্তূপ বেশি হয়ে গেলে আবর্জনাগুলো রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে দুর্গন্ধে অসহনীয় অবস্থার সৃষ্টি হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা পশ্চিম ঢেমশা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এজেড এম হেলাল চৌধুরী জানান,পৌরসভার নিজস্ব ডাম্পিং স্টেশন থাকার প্রয়োজন ছিল। নিজস্ব বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কোন সুযোগ না রেখে এমন একটি জনগুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ময়লা –আবর্জনা স্তূপ করা উচিত হয় নি।

সাতকানিয়া সরকারি কলেজ ছাত্রলীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম জানান, সাতকানিয়া সরকারি কলেজ, সাতকানিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সাতকানিয়া মডেল হাইস্কুলের অধিকাংশ শিক্ষার্থী এ রাস্তা দিয়েই নিয়মিত যাতায়াত।

এছাড়া হাট–বাজার, অফিস–আদালত সহ নানা কর্মব্যস্ততায় স্থানীয় এলাকাবাসীর একমাত্র যাতায়াতের মাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ সাতকানিয়া সরকারি কলেজ সড়ক। পৌর আওয়ামীলীগ নেতা ও স্থানীয় ব্যবসায়ী আবুল কালাম বলেন, সাতকানিয়া সরকারি কলেজ রোডটি যেহেতু খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়ক সেহেতু পৌরসভা কর্তৃপক্ষের উচিত এসব আবর্জনা অন্যত্র ফেলার ব্যবস্থা করা।

সাতকানিয়া পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ জোবায়ের এর সাথে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বর্জ্য থেকে সার উৎপাদনের জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে ২ একর জায়গা প্রদানের জন্য বলা হয়েছে। জায়গা নির্ধারণ করে দ্রুত ডাম্পিং স্টেশন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হবে। সহকারী কমিশনার (ভূমির) সাথে আলোচনা সাপেক্ষে এ বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ মোবারক হোসেন জানান, ডাম্পিং স্টেশনের জন্য যদি পৌর কর্তৃপক্ষ জমি অধিগ্রহণের জন্য চায় তবে আমরা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেব। এলাকাবাসী উপজেলা ও পৌরসদরের জনগুরুত্বপূর্ণ সাতকানিয়া সরকারি কলেজ সড়ক থেকে দ্রুত এসব বর্জ্য অন্যত্র অপসারণ করার দাবি জানিয়েছেন। খবর দৈনিক পূর্বকোণ।