সাতকানিয়া উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন নিয়ে চট্টগ্রাম-১৪ সংসদীয় আসন। ১৯৭৩ সালের পর থেকে গত ৯টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্যে শুধুমাত্র ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয় লাভ করেছিল। ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম চৌধুরী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন। এর মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ৪০ বছর পর এ আসনে বিজয়খরা ঘুচে আওয়ামী লীগের।
এর আগে ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী বিজয়ী হন। বাকি সবগুলো নির্বাচনে জেতে বিএনপি ও একবারের জন্য এলডিপি। বিশেষ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য ও বর্তমানে এলডিপি চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রম একাধিকবার জিতেছেন। এলাকায় একটি কথা প্রচলিত আছে, কর্নেল অলি মন্ত্রী থাকাকালীন এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কারণে জনগণের আস্থা অর্জন করেছিলেন। তা ডিঙ্গিয়ে অন্য কারো এ আসন দখল করা অনেকটা স্বপ্নের মতো। কিন্তু সে স্বপ্নসৌধ ভেঙে যায় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে।
স্থানীয়রা বলছেন, ৫ বছরে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এবং জনসম্পৃক্ততার ওপর ভিত্তি করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বর্তমান সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরীর আবার জিতে আসার সম্ভাবনা আছে। তবে দুই ভাগে বিভক্ত আওয়ামী লীগ এক না হলে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া কঠিন হবে বলে জানান স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের একাধিক নেতাকর্মী। এই আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্যসহ মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা ৯ জন। এবার এই আসনে মহাজোট থেকে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন জাসদ চট্টগ্রাম মহানগরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, লেখক ও গবেষক ওসমান গণি চৌধুরী। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আগামী নির্বাচনে চন্দনাইশ আসনে বিজয় নিশ্চিত করার জন্য আওয়ামী লীগকে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। দলীয় কোন্দল নিরসন করে সব নেতাকর্মীকে এক মঞ্চে আনতে না পারলে শক্ত প্রতিপক্ষকে মোকাবেলা করা কঠিন হতে পারে। উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা আজাদীকে বলেন, নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসবে, ঐক্য ততই সুদৃঢ় হবে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের আলাদা আলাদা গ্রুপের মধ্যে মারামারির পর স্থানীয় একটি অংশের উদ্যোগে আবারো ঐক্য গড়ে উঠেছে। তবে সেই ঐক্যের মধ্যেও ফাঁক রয়ে গেছে।
নেতাকর্মীরা জানান, নেতাদের মধ্যে ঐক্য হলেও ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড পর্যায়ে এখনো দলীয় কোন্দল রয়ে গেছে। বর্তমানে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশ এক হলেও স্থানীয় সংসদ সদস্যের সাথে এখনো এই অংশটির বিরোধ রয়ে গেছে। নির্বাচনের আর বেশি দিন নেই। এখনো স্থানীয় এমপির সাথে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহেদুল ইসলাম জাহাঙ্গীর ও সাধারণ সম্পাদক আবু আহমেদ এবং তরুণ শিল্পপতি আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল কৈয়ুম চৌধুরীর সাথে দূরত্ব রয়ে গেছে।
সেদিক থেকে একেবারে নির্ঞ্ঝাট আছে বিজিসি ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার আফসার উদ্দিন আহমদের পরিবার। তবে শারীরিক অসুস্থতার কারণে ইঞ্জিনিয়ার আফসার এবার নির্বাচন করবেন না বলে জানিয়েছেন। তার ছেলে ব্যারিস্টার ইমতিয়াজ উদ্দীন আহমদ আসিফ নির্বাচন করবেন বলে জানান।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু আহমদ জুনু আজাদীকে বলেন, নিজেদের মধ্যে কিছুটা সাময়িক ভুল বোঝাবুঝি থাকলেও নৌকা ও দল নিয়ে কোনো ভুল বোঝাবুঝি নেই। নির্বাচন এলে নৌকা প্রতীক যিনি পাবেন সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে নৌকাকে জয়ী করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়বে। সামনের জাতীয় নির্বাচন দেশের জন্য কঠিন পরীক্ষার। উন্নয়ন-অগ্রগতিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আবারো ক্ষমতায় আনতে হবে। না হলে দেশ আবার পাকিস্তানি ভাবধারায় ফিরে যাবে, সন্ত্রাস আর জঙ্গিবাদের জনপদে পরিণত হবে। এজন্য আমাদের মধ্যে যতই ভুল বোঝাবুঝি থাকুক না কেন, নির্বাচনে দলের স্বার্থে সবাই এক মঞ্চে চলে আসবে। তফসিল ঘোষণা করা হলেই দলের সকল স্তরের নেতাকর্মী ঐক্যবদ্ধ হয়ে পুনরায় এ আসনে বিজয় ছিনিয়ে নেওয়ার মন্ত্রে উজ্জীবিত হবে।
দলীয় নেতৃবৃন্দের দাবি, আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে চন্দনাইশ-সাতকানিয়ায় আওয়ামী লীগের অবস্থান অনেক বেশি সুসংহত ও শক্তিশালী। সে শক্তি ও দলীয় ঐক্য বজায় রাখতে পারলে বিজয়ের পতাকা ওড়াতে বেশি বেগ পেতে হবে না।
উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা জানান, আওয়ামী লীগ দলীয় বর্তমান সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরী গত ৫ বছরে এলাকায় বিরোধী দলের কোনো নেতাকর্মীর ওপর দমন-পীড়ন চালাননি। মামলা মোকদ্দমা দিয়ে হয়রানি করেননি। তার সবচেয়ে বড় গুণ তিনি সার্বক্ষণিক এলাকায় থেকেছেন, মানুষের খোঁজখবর নিয়েছেন। প্রতিটি রাজনৈতিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে মানুষকে উৎসাহিত করেছেন। এ কারণে সাধারণ মানুষের কাছে তিনি বেশ প্রশসিংত। তবে দলীয় কোন্দলের কারণে নিজ দলের মধ্যে অনেকটা কোণঠাসা। ফলে এবার চট্টগ্রাম-১৪ আসে মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা বেশি। তবে মনোনয়ন পেলে সব ঠিক হয়ে যাবে বলে জানান আওয়ামী লীগের নেতারা।
আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে এই আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরী ছাড়াও মনোনয়নের মাঠে আছেন ছাত্রলীগ চট্টগ্রাম মহানগরীর সাবেক সভাপতি, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, তরুণ শিল্পপতি ও আওয়ামী লীগ নেতা, রিহ্যাব চট্টগ্রামের চেয়ারম্যান আবদুল কৈয়ুম চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার আফসার উদ্দিন আহমদ চৌধুরীর ছেলে ব্যারিস্টার ইমতিয়াজ উদ্দীন আহমদ আসিফ, চন্দনাইশ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহেদুল ইসলাম জাহাঙ্গীর, জাপান আওয়ামী লীগের সহসভাপতি প্রফেসর ড. নাসির উদ্দীন জয় এবং অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা বাচ্চু। এই আসনের একমাত্র মহিলা মনোনয়ন প্রত্যাশী দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ও জেলা পরিষদের সদস্য শাহিদা আক্তার জাহান।
চন্দনাইশের বরমা গ্রামের সাংবাদিক ও লেখক সৈয়দ শিবলী সাদিক কফিল জানান, সব দিক দিয়ে বিবেচনা করলে ক্লিন ইমেজের প্রার্থী হিসেবে রাজনীতিক, গবেষক ওসমান গণি চৌধুরীর (অভীক ওসমান) গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। উনি গুণী ব্যক্তি। উনার অনেক গবেষণা, প্রকাশনা বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে।
তবে তিনি জানান, বর্তমান সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে গত ৫ বছরে চন্দনাইশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। একই ভাবে সাতকানিয়া অংশেও হয়েছে। এমপি সাহেব এলাকার মানুষকে ভালোবাসেন। তিনি এলাকার প্রতিটি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে বছরব্যাপী মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেছেন। নেতাকর্মীদের মধ্যে সামান্য যে দূরত্ব বিরাজ করছে তা নিরসন করতে পারলেই তিনি হয়ে উঠবেন এই আসনের অপ্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী।
নিজে একজন প্রার্থী হয়েও চন্দনাইশের বর্তমান সংসদ সদস্য যদি মনোনয়ন পান তার জন্য সর্বশক্তি দিয়ে কাজ করবেন বলে জানান দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ও জেলা পরিষদের সদস্য শাহিদা আক্তার জাহান। তিনি বলেন, নজরুল ভাই একজন সৎ ও নিখাদ ভালো মানুষ। এলাকার মানুষের জন্য তিনি খুবই আন্তরিক। এক কথায় বলতে গেলে তিনি উন্নয়ন পাগল মানুষ। আমাদের এলাকায় শঙ্খের ভাঙন খুবই ভয়াবহ ছিল। তার নেতৃত্বে বেশির ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। তিনি এলাকায় টিআর-কাবিকা দিয়ে সর্বোচ্চ কাজ করার চেষ্টা করেছেন।
আগামী নির্বাচনে নিজের প্রস্তুতির ব্যাপারে জানতে চাইলে সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে আমি প্রথমবারের মতো চন্দনাইশ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছি। নির্বাচিত হওয়ার পর এখানে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। বিশেষ করে শঙ্খের ভাঙন প্রতিরোধে প্রায় দুইশ কোটি টাকার মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন, অর্ধ শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নতুন ভবন নির্মাণ, দেড় শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আধুনিকায়ন, দুই শতাধিক ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ ও সংসদীয় এলাকার ৯৫ ভাগ রাস্তাঘাট সংস্কার ও উন্নয়ন হয়েছে। স্বাধীনতার পরে সবচেয়ে বেশি প্রায় এক থেকে দেড় হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করেছি। কিছু কাজ অসমাপ্ত রয়েছে। সেগুলো এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে আগামী নির্বাচনেও মানুষ আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে বেছে নেবে।
তিনি বলেন, এলাকার মানুষ আমাকে ভালোবাসে। সারা বছর মানুষের পাশে থেকেছি, সাধ্যমতো উন্নয়ন করেছি। পুরো এলাকা শান্তির জনপদে পরিণত হয়েছে। নিজের মনোনয়ন পাওয়া এবং বিজয়ী হয়ে আসার ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী নজরুল ইসলাম বলেন, দল থেকে নৌকা প্রতীকে অন্য কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হলেও তার পক্ষে তিনিসহ তৃণমূলের সকল নেতাকর্মীকে নিয়ে জন্য কাজ করব। বর্তমান সময়ে চন্দনাইশ উপজেলার প্রত্যেকটি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ সবচেয়ে শক্তিশালী ও সুসংহত। সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় আগামী নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ এ আসনে বিজয়ীর বেশে ঘরে ফিরবে-এমন আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এদিকে রিহ্যাবের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ও চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কমিটির চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের তরুণ মুখ আবদুল কৈয়ুম চৌধুরী বলেন, আমি রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। ছোটকাল থেকেই রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে বড় হয়েছি। ছাত্রলীগ করেছি, এখন আওয়ামী লীগ করছি। মনোনয়ন চাইব। দলের সভানেত্রী যদি মনোনয়ন দেন তাহলে নির্বাচন করব। আমাকে না দিয়ে দলের অন্য কাউকে দিলেও তার জন্য সর্বশক্তি দিয়ে কাজ করব।
তিনি বলেন, তরুণ বয়স থেকে চন্দনাইশের মানুষের জন্য কাজ করে আসছি। আমার বড় ভাই চন্দনাইশ উপজেলা চেয়ারম্যান। আমি রাজনীতির পাশাপাশি নানা সামাজিক ও শিক্ষামূলক কর্মকাণ্ড নিয়ে কাজ করছি। আমার মনে হয় বর্তমান সময়ে নেত্রী ক্লিন ইমেজের প্রার্থীর খোঁজ করছেন। আমি মনে করি, নেত্রীর সম্মান রক্ষা করতে পারব। বিষয়টি কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকেই জানেন।
এই আসনে মহাজোটের শরিক দল জাসদ (ইনু) চট্টগ্রাম মহানগরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওসমান গণি চৌধুরীও (অভীক ওসমান) মনোনয়ন প্রত্যাশী। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের অতিথি শিক্ষক। ১৯৮২ সালের মধ্যভাগে মাস্টার্সের রেজাল্ট বের হওয়ার আগেই পশ্চিম পটিয়া এ জে চৌধুরী কলেজের প্রতিষ্ঠাতা প্রভাষক হিসেবে শিক্ষকতা শুরু করেন। পরবর্তীতে বরমা ডিগ্রি কলেজে প্রতিষ্ঠাকালীন অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অভীক ওসমান বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ইতিহাসে একজন সফল সংগঠক। তিনি কবি, নাট্যকার ও গবেষকও।
১৯৭০ সালে কাজেম আলী হাই স্কুল ছাত্রলীগের এজিএস হিসেবে ছাত্র রাজনীতিতে তার হাতেখড়ি। ১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের প্রেসিডেন্ট হিসেবে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন এবং কারাবরণ করেন। একই সময়ে তিনি মহানগর ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ছিলেন। ৯০-এর দশকে নুরউদ্দিন জাহেদ মনজুর জাসদ সিটি কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশার ব্যাপারে তিনি বলেন, আমার ধ্যান-জ্ঞান ও সাধনা হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও শেখ হাসিনার উন্নয়নের নেতৃত্ব। ছাত্রজীবন থেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি করে আসছি। এখনো মনে-প্রাণে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী। তাই এবার মহাজোট থেকে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সারা দেশে পরিচ্ছন্ন, গ্রহণযোগ্য ও ক্লিন ইমেজের প্রার্থীর খোঁজ করছেন। আমি প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন অগ্রযাত্রার একজন সৈনিক হিসেবে কাজ করতে চাই।
এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, যেহেতু দীর্ঘদিন থেকে রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত, সেহেতু মনোনয়ন চাওয়াটাই স্বাভাবিক। মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী মফিজ বলেন, দলের হাই কমান্ড তাকে বিবেচনা করলে চট্টগ্রাম-১৪ আসনটি পুনরায় শেখ হাসিনাকে উপহার দিতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাব। তবে তাকে ছাড়া অন্য যে কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হলে তার পক্ষেও সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নেমে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে বিজয়ী করে আনার ব্যাপারে দলীয়ভাবে কাজ করব। দলে কোনো বিরোধ বা বিভক্তি নেই উল্ল্লেখ করে তিনি বলেন, দক্ষিণ চট্টগ্রামে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। সেই উন্নয়নের আলোকে দক্ষিণ চট্টগ্রামের সবকটি আসনে এবার আওয়ামী লীগ প্রার্থীরাই জয়ী হয়ে আসবে; তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
ব্যারিস্টার ইমতিয়াজ উদ্দীন আহমদ আসিফ বলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী যদি মনোনয়ন দেন তাহলে অবশ্যই নির্বাচন করব। আর মনোনয়ন না পেলেও দলের জন্য কাজ করব। ২০০১ সালে দেশে আসার পর থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত। বঙ্গবন্ধু হত্যার মামলা করেছি। আওয়ামী লীগের সকল কর্মকাণ্ডে আছি। তাই নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি।
নির্বাচন করার ব্যাপারে চন্দনাইশ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহেদুল ইসলাম জাহাঙ্গীর বলেন, উপজেলার সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে এলাকায় থেকে দলকে সংগঠিত করে তোলার পাশাপাশি সরকারের সামগ্রিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে কাজ করছি। যে কারণে মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে তিনি আশাবাদী এবং মনোনয়ন পেলে নির্বাচন করতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত আছেন বলে জানান।
মনোনয়ন প্রত্যাশী তরুণ ব্যবসায়ী আবদুল কৈয়ুম চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বর্তমানে তরুণদের প্রাধান্য দিচ্ছে। এলাকায় তার কর্মকাণ্ড বিবেচনা করে মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে তিনি শতভাগ আশাবাদী। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের যে সংকট, সে সংকট থেকে উত্তরণে বিগত দিনের মতো এবারও ভূমিকা রাখতে মনোনয়ন চাইবেন জানিয়ে বলেন, মনোনয়ন পেলে বিজয়ী হওয়ার ব্যাপারে তিনি শতভাগ আশাবাদী।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী চন্দনাইশে রাজনীতির মাঠে নতুন মুখ ড. নাসির উদ্দীন জয় বলেন, ব্যক্তিগত ইমেজ, জনপ্রিয়তা, দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে সুসম্পর্ক এবং দীর্ঘদিন এলাকায় থেকে নির্বাচনের মানসিক প্রস্তুতি, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি অবিচল আস্থা আমাকে মনোনয়ন প্রত্যাশী করেছে। মনোনয়ন পেলে বিজয়ী হওয়ার ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী বলে জানান জাপান প্রবাসী এ আওয়ামী লীগ নেতা।
অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তফা বলেন, এলাকার উন্নয়ন ও জনগণের সেবা করার জন্য নির্বাচন করতে চাই। দলের কোনো পদে না থাকলেও আওয়ামী লীগকে আমি ভালোবাসি। সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড জনগণের কাছে তুলে ধরি। তাই আমার মনোনয়ন চাওয়া। মনোনয়ন পেলে নির্বাচন করতে প্রস্তুত আছেন বলে জানান তিনি।
ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ তৃণমূল ও দক্ষিণ জেলার প্রার্থী কাজী মুহম্মদ মুফিজুর রহমান। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সাবেক এ কর্মকর্তা দীর্ঘদিন ইসলামী ছাত্রসেনা কেন্দ্রীয় পরিষদের সিনিয়র সহসভাপতি ও চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি এবং শহীদ লিয়াকত স্মৃতি সংসদের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় পরিষদের সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগরের যুগ্ম সম্পাদক। তিনি নগরীর ওয়াসিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিম মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ পদে কর্মরত আছেন। এছাড়া বিভিন্ন ক্রীড়া ও সমাজসেবামূলক কাজে সম্পৃক্ত। পাশাপাশি জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস বিরোধী কর্মকাণ্ড, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে গণসচেতনতা সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখেন।
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম-১৪ চন্দনাইশ-সাতকানিয়া (আংশিক) আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৫ হাজার ১৩২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার হচ্ছে ১ লাখ ৭২৯ জন এবং মহিলা ভোটার ১ লাখ ৪ হাজার ৪০৩ জন।
তথ্যসূত্রে- দৈনিক আজাদী