সাতকানিয়ায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের উপর দিয়ে যাওয়া পল্লী বিদ্যুতের ১১ হাজার ভোল্টের বিদ্যুৎ লাইনে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটেছে। এ সময় আতংকে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা দিগি¦দিক ছুটতে থাকেন। ছেঁড়া তার বিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী বিলে পড়লে ব্যাপক অগ্নিকা–ের ঘটনা ঘটে। পাশাপাশি কেঁপে উঠে পুরো বিদ্যালয় ভবন। তবে বিদ্যালয় থেকে দ্রুত বের হয়ে যাওয়ায় অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পায় ৩৫০ শিক্ষার্থী ও দায়িত্বরত শিক্ষকরা। এতে ঘটেনি কোন ধরণের হতাহতের ঘটনা। বিলে ছড়িয়ে পড়া আগুন প্রায় আধঘণ্টা স্থায়ী ছিল। পল্লী বিদ্যুতের কেন্দ্র থেকে সঞ্চালন লাইন বন্ধ করে দিলে আগুন নিভে যায়। গতকাল (সোমবার) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার এওচিয়া ইউনিয়নের আলীনগর শহীদ জামাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পার্শ্ববর্তী বিলে এ ঘটনা ঘটে। অন্যদিকে, বিগত ২০১৩ সালে বিদ্যালয় ভবনের উপর থেকে বিদ্যুতের এ সঞ্চালন লাইন সরানোর জন্য তৎকালীন প্রধান শিক্ষক ও এলাকাবাসী যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম’কে অবগত করলেও দীর্ঘ ৫বছরেও বিষয়টির সুরাহা না হওয়ায় এ ভয়াবহ বিদ্যুৎ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। ভাগ্যের জোরে শিক্ষক–শিক্ষার্থীরা প্রাণে রক্ষা পায় বলে এলাকাবাসী মনে করছে। ঘটনা সংগঠিত হওয়ার পর পল্লী বিদ্যুতের পক্ষ থেকে বিদ্যুতের তার পুনঃসংযেগের উদ্যোগ গ্রহণ না করায় বিদ্যালয়সহ পার্শ্ববর্তী গ্রামের প্রায় ৭০০ পরিবার অন্ধকারে নিমর্জ্জিত।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ১৯৯১ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের পর উপজেলার এওচিয়া ইউনিয়নের আলীনগর শহীদ জামাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দক্ষিণ–পূর্ব কোণায় পল্লী বিদ্যুৎ ১১হাজার ভোল্টের একটি বৈদ্যুতিক খুঁটি স্থাপন করে বিদ্যালয় ভবনের উপর দিয়ে বৈদ্যুতিক তার অন্য খুঁটিতে নিয়ে যায়। এরপর থেকে স্থানীয় এলাকাবাসী মৌখিকভাবে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানালেও কোন কাজ হয়নি। এভাবে চলতে থাকে দীর্ঘ প্রায় ২২ বছর। পরবর্তীতে ২০১৩সালের দিকে এ বিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক অলি আহমদ ও স্থানীয় এলাকাবাসী মিলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সাতকানিয়া পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম এর কাছে লিখিত আবেদন করেও কোন ফল পাননি। নিরূপায় হয়ে অনেকটা মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে চলতে থাকে এ বিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রম। সর্বশেষ নেমে আসে ভয়াবহ বিপর্যয়। গতকাল (সোমবার) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিদ্যালয় ভবনের উপর দিয়ে যাওয়া পল্লী বিদ্যুতের ১১হাজার ভোল্টের তারে ঘটে ভয়াবহ বিস্ফোরণ।
বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাকিবুল ইসলাম ও তাহমিনা আহমেদ ওহি জানায়, তারা তখন শ্রেণি কক্ষে। স্যার ক্লাস নিচ্ছিল। দেখা গেল স্কুলের বাইরে বিলে আগুন জ্বলছে। আবার হঠাৎ করে কেঁপে উঠে বিদ্যালয় ভবন। তখন তারাসহ ক্লাসের সবাই হুড়োহুড়ি করে স্কুল থেকে বের হয়ে মাঠে চলে যায়।
বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ সদস্য ও অগ্নিকা–ের সময় বিলে কাজরত আক্তার হোসেন চৌধুরী (মুক্তি) বলেন, আমি তখন স্কুলের পার্শ্ববর্তী বিলে কাজ করছিলাম। তখন বিদ্যুতের একটি তার বিলে পড়ে আগুন লেগে যায়। চিৎকার দিয়ে বিল থেকে উঠে জীবন রক্ষা করি। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুক্তি রাণী ধর বলেন, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে। হঠাৎ করে স্কুল ভবন কেঁপে উঠলে তাড়াহুড়ো করে স্কুল থেকে ছাত্র–শিক্ষক সবাই আতংকিত হয়ে বের হয়ে পড়ি। পরে দেখি স্কুলের উত্তর পার্শ্বে বিলে আগুন জ্বলছে। খবর পেয়ে স্কুলের পার্শ্ববর্তী এলাকার অভিভাবকরা কান্না করতে করতে স্কুলে এসে তাদের সন্তানদের বাড়ি নিয়ে যায়। পরে আগুন নিভে গেলে অন্যান্য ছাত্রদের নিয়ে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করি। বিষয়টি স্কুল কমিটির সভাপতি ও আমার উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানিয়েছি।
এওচিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মানিক বলেন, আমি বিষয়টির ব্যাপারে স্থানীয় এমপি, ইউএনও সাহেবকে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেছি।
সাতকানিয়া পল্লী বিদ্যুতের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) জাকির হোসেন কামাল বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে কাঞ্চনা পল্লী বিদ্যুৎ অফিস থেকে তাৎক্ষণিক লাইন বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং ঘটনাস্থলও পরিদর্শন করেছে আমাদের লোকজন। অতি দ্রুত খুঁটিটি সরিয়ে লাইন ঠিক করে দেওয়া হবে।