সাতকানিয়ায় জায়গা-জমির বিরোধকে কেন্দ্র আপন দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে কেরোসন ঢেলে তিনটি ঘর পুরিয়ে দেওয়া অভিযোগ পাওয়া গেছে গত শুক্রবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে উপজেলার সোনাকানিয়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড বোচার বাপের বাড়ি এলাকায় এ
ঘটনা ঘটে করে তবে এই ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। এ ঘটনায় বাদি হয়ে ৯জনের নাম উল্লেখ করে গতকাল (শনিবার) দুপুরে সাতকানিয়া থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন নুরুল আমিনের স্ত্রী মমতাজ বেগম। থানায় দায়েরকৃত অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার সোনাকানিয়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের বোচার বাপের বাড়ির নুরুল আমিন ও তার আপন ভাই ছিদ্দিক আলী গং এর সাথে দীর্ঘ ১০বছরেও অধিক সময় ধরে জায়গা-জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। বিরোধের জের ধরে উভয়পক্ষের মধ্যে বিভিন্ন সময় ঝগড়া বিবাদ লেগেই ছিল। এরমধ্যে একজন অন্যজনকে ফাঁসাতে নারী নির্যাতন মামলাও হয়েছিল। বিষয়গুলো নিয়ে থানা ও স্থানীয় চেয়ারম্যানরা অনেকবার বিচার-শালিস করে সমাধান করতে চেয়েও ব্যর্থ হন। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকালে নুরুল আমিন ঘরের পাশ্ববর্তী দোকান থেকে মোবাইলের কার্ড কিনে ঘরে ফেরার সময় ছিদ্দিক আলী ও তার গংরা মিলে তাকে (নুরুল আমিন) বেধড়ক মারধর করে। একইদিন বিকালে পুনরায় দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ছিদ্দিক আলীরা নুরুল আমিনের ঘরে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে। পাশাপাশি ৩ দিনের মধ্যে ঘর ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি দেয়। না হয় মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকতে কাফনের কাপড় ঘরে কিনে রাখার জন্য বলে স্থান ত্যাগ করে। অভিযোগ থেকে আরো জানা যায়, এরই জের ধরে গত শুক্রবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে ছিদ্দিক আলী ও তার গংরা মিলে নুরুল আমিনের একই পরিবারে থাকা ছেলে জয়নাল আবেদীন, মো. আবদুল্লাহ ও আবদুল গণির ঘরের দরজার বাইরে হুক লাগিয়ে এবং ঘরে কেরোসিন ছিটিয়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়। পরে নুরুল আমিনের স্ত্রী মমতাজ বেগম জানালা দিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে পাশ্ববর্তী মসজিদে গিয়ে আগুন লাগার খবর মাইকে মাওলানা দিয়ে প্রচার করলে স্থানীয়রা এসে অনেক চেষ্টা করে আগুন নিভিয়ে ফেলে। কিন্তু এরই মধ্যে আগুনে পুড়ে ঘরের সব জিনিসপত্র ছাই হয়ে যায়।
এ ব্যাপারে নুরুল আমিনের স্ত্রী ও থানায় অভিযোগকারী মমতাজ বেগম বলেন, ছিদ্দিক আলীরা জায়গা-জমির বিরোধের কারণে বিভিন্ন সময় আমাদের পরিবারের উপর নির্যাতন করে আসছিল। গত শুক্রবার রাত ৩টার দিকে আমার গায়ে আগুনের তেজ অনুভব হলে দ্রুত ঘুম থেকে জেগে উঠি। প্রথমে দরজা খুলতে চাইলেও ঘরের বাইরে দরজায় হুক থাকায় দরজা খোলা সম্ভব হয়নি। পরে তড়িঘড়ি করে জানালা দিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে দেখি, ছিদ্দিক আলী ও তার ছেলে, রশিদ আহমদ, টিপু ও আবদুল হামিদের ছেলে মানিকসহ বেশ কয়েকজন ঘরের পাশ্ববর্তী পুকুরের পূর্ব পাশ দিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। আমার সাথে সাথে পরিবারের অন্যান্যরাও জানালা দিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে পড়ে। পরে পাশ্ববর্তী মসজিদে গিয়ে মাওলানাকে বলে মাইকে আগুন লাগার খবর প্রচার করি। তিনি আরো বলেন, স্থানীয়রা দ্রুত এসে আগুন নেভালেও আমার মেঝ ছেলে জয়নাল আবেদীন গাড়ি কেনার জন্য আমার কাছে রাখা নগদ ১ লাখ ২০হাজার টাকা, আমাদের ভাড়াটিয়া রাশেদা বেগমের নগদ ৫০ হাজার টাকা এবং ঘরের আসবাবপত্রসহ সাড়ে ৬ লক্ষাধিক টাকার
ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ ঘটনায় আমি নিজে বাদি হয়ে ৯ জনকে অভিযুক্ত করে থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছি।
অভিযুক্ত ছিদ্দিক আলী ও তার গং রশিদ আহমদ বলেন, নুরুল আমিন ও ছিদ্দিক আলী আপন ভাই। উভয়ের সাথে জায়গা-জমি নিয়ে দীর্ঘ ১০বছরেরও অধিক সময় ধরে বিরোধ থাকলেও ঘরে আগুন দেওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। আমাদের ফাঁসানোর জন্য এরকম গল্প সাজানো হয়েছে। এছাড়া গত প্রায় ৪বছর আগেও তার ছেলের বউ দিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন মামলা দিয়েছিল। মামলাটি আদালত খালাস করে দিয়েছে।
এ অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তা সাতকানিয়া থানার এস.আই নজরুল ইসলাম বলেন, সোনাকানিয়া ইউনিয়নে কয়েকটি ঘর পুড়ে যাওয়ার ঘটনায় থানায় একটি অভিযোগ দেয়া হয়েছে। অভিযোগটি তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।