সাতকানিয়ায় উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা সভায় বিশৃঙ্খলা, তুমুল বাকবিতণ্ডা

উপজেলা আইন–শৃঙ্খলা কমিটির সভায় চরম বিশৃঙ্খলা ও তুমুল বাকবিতণ্ডা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল সোমবার দুপুরে উপজেলা বিআরডিবি ভবনে অনুষ্ঠিত এ সভায় চট্টগ্রাম–১৪ (চন্দনাইশ–সাতকানিয়া আংশিক) আসনের সাংসদ নজরুল ইসলাম চৌধুরীর উপস্থিতিতে এ ঘটনা ঘটে। আগামীতে এ ধরনের বিশৃঙ্খলা হলে আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভা বর্জনের হুমকি দিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যানরা।

গতকাল উপজেলা মাসিক আইন–শৃঙ্খলা কমিটির পূর্ব নির্ধারিত সভা ছিল। দুপুর ১১ টার দিকে উপজেলা বিআরডিবি ভবনে সাতকানিয়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপাঙ্কর তঞ্চঙ্গ্যার সভাপতিত্বে সভার কার্যক্রম শুরু হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সাংসদ নজরুল ইসলাম চৌধুরী। সভার মাঝামাঝি পর্যায়ে ধর্মপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম ইলিয়াছ চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেন, সম্প্রতি তার ইউনিয়নে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মসভায় কিছু লোক অতর্কিতভাবে হামলা চালিয়েছে। সেখানে ইউপি সদস্যসহ কয়েকজন আহত হয়েছেন। এরপরও পুলিশ মামলা নেয়নি। তখন চেয়ারম্যানের বক্তব্যের প্রতিবাদ করেন সাতকানিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবু তাহের এলএমজি। তিনি জানান, ওই ধর্ম সভায় চট্টগ্রাম–১৪ আসনের সাংসদ নজরুল ইসলাম চৌধুরী প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল। কিন্তু স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ইলিয়াছ ষড়যন্ত্র করে সনাতনী ধর্মাবলম্বী লোকজনকে হুমকি দিয়ে জোরপূর্বক ভাবে নিজে প্রধান অতিথি হয়েছেন। ধর্ম সভার আয়োজকদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর খাটিয়ে প্রধান অতিথি হওয়ার কারণে চেয়ারম্যান এবং তার লোকজনের উপর সাধারণ মানুষ হামলার চেষ্টা করেছে। এতে মামলা হওয়ার মতো কিছুই ঘটেনি। তখন দুই জনের মধ্যে চরম তর্কাতর্কি ও হৈ চৈ শুরু হয়। পরে বাজালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান তাপস কান্তি দত্ত এবং ছদাহা ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোসাদ হোসেন চৌধুরীসহ আরো কয়েকজন চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবু তাহের এলএমজির বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে অশ্লীল বাক্য বিনিময় হয়। সভাস্থলে বিশৃঙ্খলার আওয়াজ শুনে বাহিরে লোকজন ভিড় করতে থাকে।

অন্যদিকে, সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক সাইদুর রহমান দুলাল তাঁর বক্তব্যে সাংসদ নজরুল ইসলাম চৌধুরীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, বিজয় দিবসে মসজিদের সামনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করায় দক্ষিণ ছদাহা বায়তুশ শরফ মসজিদের মুয়াজ্জিন মনজুর আলমকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে বলে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখার আহবান জানান তিনি। তখন ছদাহা ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোসাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, জাতীয় পতাকা উত্তোলন করায় তাকে বিদায় করা হয়নি। অন্যান্য সমস্যার কারণে সামাজিক লোকজন তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়েছে। তখন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবু তাহের এলএমজি বলেন, জাতীয় পতাকা উত্তোলন কোন অপরাধ নয়। এ অপরাধে তাকে চাকরিচ্যুত করা হলে তাকে পুনরায় চাকরিতে রাখতে হবে। তখন চেয়ারম্যান মোসাদ হোসেন চৌধুরী প্রতিবাদ করে বলেন, সব কথার উত্তর আপনি দেন কেন? এটাতো আপনার বিষয় নয়। সভায় উপস্থিত একজন জানান, তখন দুই জনের মধ্যে বাকবিতণ্ডা শুরু হয় এবং তারা একে অপরকে অশ্লীল ভাষায় আক্রমণ করতে থাকেন। এসময় বাজালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান তাপস কান্তি দত্ত আবু তাহের এলএমজির কথার প্রতিবাদ করেন। পরে সাংসদ নজরুল ইসলাম চৌধুরী এবং সভার সভাপতি সহকারী কমিশনার (ভূমি) দীপাঙ্কর তঞ্চঙ্গ্যার হস্ত েপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আসে।

ঘটনার বিষয়ে ছদাহা ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোসাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, এমপির সাথে চেয়ারম্যানদের অনেক বিষয়ে কথা থাকতে পারে। চেয়ারম্যানরা বিভিন্ন দাবি নিয়ে এমপির সাথে কথা বললে আবু তাহের এলএমজি অন্যায়ভাবে হস্তক্ষেপ করেন। চেয়ারম্যানদের নিয়ে নানা ধরনের কটূক্তি করেন। অনেক সময় উল্টা পাল্টা কথা বলে এমপিকে চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলার চেষ্টা করেন। গতকালও তিনি অপ্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বিশৃঙ্খলা করেছেন। আগামীতে এ ধরনের কর্মকাণ্ড হলে চেয়ারম্যানরা আইন–শৃঙ্খলা সভা বর্জন করবে বলে জানান মোসাদ হোসেন।

ধর্মপুর ইউপি চেয়ারম্যান এম ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, আমার ইউনিয়নের হিন্দুদের ধর্ম সভায় কিছু লোক হামলা চালিয়েছে। ওই ধর্ম সভায় সাংসদ নজরুল ইসলাম চৌধুরী প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল। কিন্তু উনি আসতে অপারগতা প্রকাশ করায় আয়োজকরা আমাকে প্রধান অতিথি করেন। আর আমি যাওয়ার পর চিহ্নিত কিছু সন্ত্রাসী ধর্ম সভায় হামলা করে। বিষয়টি নিয়ে আইন–শৃঙ্খলা কমিটির সভায় বক্তব্য রাখলে আবু তাহের এলএমজি অযৌক্তিক ভাবে প্রতিবাদ এবং সভায় বিশৃঙ্খলা করেন। এতে আইন শৃঙ্খলা সভার পরিবেশ নষ্ট হয়।

সাতকানিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবু তাহের এলএমজি জানান, ছদাহা ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোসাদ হোসেন চৌধুরী বন বিভাগের জায়গা দখল করে বাগান করেছেন। হাঙ্গর খাল থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করছেন। এসব বিষয়ে বক্তব্য রাখায় তিনি আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়েছেন। অন্যদিকে, ছদাহায় একটি মসজিদের সামনে বিজয় দিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করায় চেয়ারম্যানের ইন্ধনে মুয়াজ্জিনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। আমি ওই মুয়াজ্জিনকে চাকরি ফিরিয়ে দেয়ার প্রস্তাব করেছি। এতে অন্যায় কিছু করিনি। এছাড়া ধর্মপুরের চেয়ারম্যান এম ইলিয়াছ চৌধুরী সাংসদকে আক্রমণ করে কথা বলছিল। তাই প্রতিবাদ করেছি। এমপির সাথে বেয়াদবি করলে তা আমরা বরদাশত করবো না। আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় যাবতীয় বিশৃঙ্খলার জন্য চেয়ারম্যান মোসাদ হোসেন চৌধুরী এবং এম ইলিয়াছ চৌধুরী দায়ী বলেও তিনি দাবি করেন।

আইন–শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি সাতকানিয়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপাঙ্কর তঞ্চঙ্গ্যা জানান, আইন–শৃঙ্খলা সভায় কোন ধরণের বিশৃঙ্খলা হয়নি। খুবই সুন্দর, চমৎকার ও প্রাণবন্ত পরিবেশে সভা হয়েছে।

চট্টগ্রাম–১৪ আসনের সাংসদ নজরুল ইসলাম চৌধুরী জানান, তেমন কোন বিশৃঙ্খলা হয়নি। তবুও আমি সবাইকে সতর্ক করেছি যাতে আগামীতে সবাই আরো অধিক সহনশীল ভাষায় কথা বলেন।

সূত্র:দৈনিক আজাদী