সাতকানিয়ার মক্কার বলীখেলায় জীবন বলী ও মাহাসন যৌথ চ্যাম্পিয়ন

দক্ষিণ চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সাতকানিয়া মক্কার বলীখেলার ১৩৯ তম আসরে এবারের মক্কার বলী খেলার দীর্ঘ লড়াইয়ে কেউ কাউকে পরাজিত করতে না পারায় খেলার আয়োজক যৌথভাবে মো. জীবন বলী ও মাহাসনকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করেছেন।

প্রধান অতিথি হিসেবে শুক্রবার এ বলীখেলা উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম-১৫ আসনের সাংসদ প্রফেসর আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান মোল্লা, সাতকানিয়া থানার ওসি (তদন্ত) মজিবুর রহমান, মাদার্শার চেয়ারম্যান আ ন ম সেলিম উদ্দিন চৌধুরী ও এওচিয়ার চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মানিক।

দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার মাদার্শা ইউনিয়নে পাহাড়ঘেরা সমতল ভূমিতে জমজমাট মক্কার বলীখেলা দেখতে জড়ো হয়েছিল হাজারো মানুষ। উপজেলার ঐতিহ্যবাহী মক্কার বাড়ির পাহাড়ঘেরা মাঠে এ বলীখেলার ১৩৯তম আসর বসেছিল এবার। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা বলীদের শ্বাসরুদ্ধকর লড়াই হয়। পাশাপাশি জমে ওঠে হস্তশিল্প আর গ্রামীণ খাবারদাবারের বেচাকেনা।

কক্সবাজার, উখিয়া, চকরিয়া, বাঁশখালী, খুলনা ও মহেশখালী উপজেলা থেকে বলীরা এসেছিল এবারের আসরে। খেলার মূল আকর্ষণ ছিল মহেশখালীর মো. জীবন বলী ও চকরিয়ার মো. মাহাসন বলী। দুজনের মধ্যে তুমূল যুদ্ধ চলে অনেকক্ষণ। মক্কার বলীখেলা উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী চলছে গ্রামীণ পণ্যের মেলা। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মৃৎশিল্পীরা এসেছিল পসরা নিয়ে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, খাবার ও নানা ধরনের খেলনার বিকিকিনি হয়েছে এ মেলায়। বলীখেলা ছিল মেলার মূল আকর্ষণ।

শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে আয়োজকরা ঢোল-বাজনার তালে তালে বলীদের সঙ্গে নিয়ে মাঠে নামেন। মুহূর্তের মধ্যে মক্কার বাড়ির মাঠ কানায় কানায় ভরে ওঠে। দেখতে দেখতে লোকেলোকারণ্য হয়ে ওঠে মাঠ। জায়গার সংকুলান না হয়ে পাশের উঁচু পাহাড়ে এবং গাছের ডালে উঠে বসেছে অনেকে বলীখেলা উপভোগ করার জন্য। খেলায় রানার্সআপ হন বাদশা।

খেলার আয়োজক মাদার্শা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নাজমুল আলম বলেন, ১৩৮ বছর আগে তার দাদা মোহাম্মদ আবদুল কাদের বক্স চৌধুরী বাঙালির ঐতিহ্য আর কৃষ্টি ধরে রাখার জন্য এ খেলার আয়োজন করেছিলেন। তার ধারাবাহিকতায় প্রতি বছর ৭ বৈশাখ এ খেলা অনুষ্ঠিত হয়। সাতকানিয়া, বাঁশখালী, লোহাগাড়া, চন্দনাইশ, পটিয়া, আনোয়ারা ও বোয়ালখালীসহ আশপাশের গ্রামে বাঁশ, বেত, মৃৎশিল্প, কৃষিপণ্য ও গৃহস্থালির নানা সামগ্রী বিক্রি হয় বলীখেলা উপলক্ষে বসা এ মেলায়। অনেকে মেলায় আসেন সারা বছরের ব্যবহার্য জিনিসপত্র সংগ্রহ করতে।

নলুয়ার বাসিন্দা মো. সাবের বলেন, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার মিলনমেলায় পরিণত হয় এ মেলা। আমি প্রতি বছরের মতো এবার মেলায় এসে কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস ক্রয় করি।