সাতকানিয়ায় শুরু হতে যাচ্ছে হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতা। জসিম উদ্দিন চৌধুরীর ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

নিউজ ডেস্ক : সাতকানিয়া লোহাগাড়াকে আরও আলোকিত করতে চট্টগ্রামে প্রথমবার বৃহৎ পরিসরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক মানের হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতা। এই মহতী ও ব্যতিক্রমী আয়োজনের উদ্যোক্তা সাতকানিয়া লোহাগাড়ার কৃতি সন্তান মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন চৌধুরী। তিনি এই উদ্যোগের আয়োজক প্রতিষ্ঠান জলিল-জাহান ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান। সামজিক কল্যানমুখী প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোগে এই প্রতিযোগিতায় অনেক প্রতিযোগি রেজিষ্ট্রেশন করেছেন।
আয়োজক সূত্রে জানা যায়, দুই বিভাগে আয়োজিত প্রতিযোগিতায় দেয়া হবে ছয়জনকে বিশেষ পুরস্কার। একই সঙ্গে ছয়জন বিজয়ীর পিতামাতাকে নেয়া হবে ওমরাহ হজে।
পূর্ণাঙ্গ ৩০ পারা ও ১৫ পারার ২টি পৃথক বিভাগে এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। ৩০ পারা বিভাগে ১ম পুরস্কার ১ লক্ষ ১ টাকা, ২য় পুরস্কার ৫০ হাজার ১ টাকা, ৩য় পুরস্কার ২৫ হাজার ১ টাকা এবং ৪র্থ থেকে ১০ম স্থান অর্জনকারীদের প্রত্যেকের জন্য থাকবে ১০ হাজার ১ টাকা পুরস্কার।
অনুরূপভাবে ১৫ পারা বিভাগে ১ম পুরস্কার ৫০ হাজার ১ টাকা, ২য় পুরস্কার ২৫ হাজার ১ টাকা এবং ৩য় পুরস্কার ১৫ হাজার ১ টাকা এবং ৪র্থ থেকে ১০ম স্থান অর্জনকারীদের প্রত্যেকের জন্য থাকবে ৫ হাজার ১ টাকা পুরস্কার। এছাড়াও উভয় বিভাগের ১ম, ২য় ও ৩য় স্থান অর্জনকারী অর্থাৎ মোট ৬ জনের গর্বিত পিতাদের জন্য থাকবে পবিত্র (ওমরাহ) হজ পালনের সুবর্ণ সুযোগ, যার পাসপোর্ট থেকে শুরু করে যাবতীয় খরচাদি জলিল-জাহান ফাউন্ডেশন বহন করবে এবং এই ৬ জন হাজী সাহেবানের খেদমতের জন্য ফাউন্ডেশনের একজন কর্মকর্তা উনাদের সফরসঙ্গী হবেন।


জানা যায়, গত ৮ মে ২০২৩ হতে প্রতিযোগিতার রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া শুরু হয়। ৩০ পারা বিভাগে অনুর্ধ্ব ১৬ বছর ও ১৫ পারা বিভাগে অনুর্ধ্ব ১৪ বছরের শিক্ষার্থীরা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পারবে। প্রতিযোগিতাটি প্রাথমিক পর্যায়ে সাতকানিয়ার কেরানীহাটস্থ সী-ওয়ার্ল্ড রিসোর্টে ১৭, ১৮, ১৯ ও ২০ জুলাই ৪ দিন ব্যাপী মোট ৪টি রাউন্ডে অনুষ্ঠিত হবে। প্রাথমিক পর্যায়ের প্রতিযোগীদের মধ্যে ৩০ পারা বিভাগ হতে ১৬ জন ও ১৫ পারা বিভাগ হতে ১৬ জন অর্থাৎ মোট ৩২ জন প্রতিযোগী চুড়ান্ত প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে তাদের বাবা-মাকে সাথে নিয়ে অর্থাৎ ৩২+৬৪ সর্বমোট ৯৬ জন সম্পূর্ণ ফাউন্ডেশনের খরচে ঢাকায় যাবেন ও চুড়ান্ত প্রতিযোগিতা শেষ হওয়া পর্যন্ত ফাউন্ডেশনের খরচে ঢাকায় অবস্থান করবেন। ঢাকায় অবস্থানকালীন এই ৩২ জন প্রতিযোগী তাদের বাবা-মায়ের সাথে বিভিন্ন দর্শনীয় ও ঐতিহাসিক স্থান যেমন পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, চিড়িয়াখানা, বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার বা তারামন্ডল, জাতীয় শহীদ মিনার, জাতীয় স্মৃতিসৌধ, জাতীয় সংসদ ভবন, জাতীয় জাদুঘর, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর (ধানমন্ডি ৩২), আহসান মঞ্জিল, লাগবাগ কেল্লা ইত্যাদি পরিদর্শন করবেন। দর্শনীয় স্থান পরিদর্শন ও ঢাকায় অবস্থানকালীন হাফেজ সালেহ আহমাদ তাকরিম ৩২ জন প্রতিযোগির সাথে সময় কাটাবেন; তাকরিমের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ তাঁর অভিভাবক ও শিক্ষকের সাথে যোগাযোগ রাখছে। এই ৩২ জন প্রতিযোগীকে ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে পাঞ্জাবি, পায়জামা, টুপি, ঘড়ি, জুতা, আতর, জায়নামায, তাসবিহ ও মেসওয়াক উপহার হিসেবে দেওয়া হবে এবং প্রত্যেকের বাবা-মায়ের জন্য পাঞ্জাবি-পায়জামা ও শাড়ির ব্যবস্থা করা হবে। চুড়ান্ত প্রতিযোগিতাটি দেশের স্বনামধন্য এক বা একাধিক জাতীয় টিভি চ্যানেলে সম্প্রচার করা হবে। চট্টগ্রামের প্রাথমিক পর্যায়ে অংশগ্রহণকারী প্রতিযোগীদেরকে যাতায়াত ভাড়া, প্রতিদিন দুপুরের খাবার, বিকেলের নাস্তা, বই, সার্টিফিকেট প্রদান করা হবে। এছাড়াও সকল প্রতিযোগীর সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের অনুরূপভাবে খাবার ও যাতায়াত ভাড়া প্রদান করা হবে।
এ বিষয়ে আরও জানতে চাইলে জলিল-জাহান ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বিগত বেশ কয়েক বছর যাবত বাংলাদেশের ক্ষুদে হাফেজরা আন্তর্জাতিক মন্ডলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের হাজারো প্রতিযোগীদেরকে পেছনে ফেলে শীর্ষস্থান অর্জনের মাধ্যমে দেশের জন্য সুনাম, খ্যাতি ও সম্মান বয়ে আনছেন। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি হাফেজ সালেহ আহমাদ তাকরিম দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতায় বিশ্বের ৬৫টি দেশকে পেছনে ফেলে ১ম স্থান অর্জন করেন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় আমাদের দেশের ক্ষুদে হাফেজরা বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে বিজয়ী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে ও দেশপ্রেমের অনন্য দৃষ্টান্ত রেখে যাচ্ছে। এর অন্যতম কারণ দেশে জাতীয় পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতাসমূহ। কারণ জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতাগুলোতে শীর্ষস্থান অর্জনকারীরাই পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতাগুলোতে শীর্ষস্থান অর্জন করছেন। এসব প্রতিযোগিতা ক্ষুদে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের পবিত্র কুরআন হিফ্জ ও তাজবীদের প্রতি অধিক যত্নবান হতে অনুপ্রাণিত করে এবং এই ধরনের প্রতিযোগিতাগুলোকে কেন্দ্র করেই প্রতি বছর আমাদের দেশে তৈরি হচ্ছে বিশ্বমানের হাফেজে কুরআন।
তিনি আরও বলেন, প্রাথমিক ও চুড়ান্ত পর্যায়ের প্রতিযোগিতা সম্পন্ন হওয়ার পর আগামী ১৯ আগস্ট সাতকানিয়ার কেরানীহাটস্থ সী-ওয়ার্ল্ড রিসোর্টে সকল প্রতিযোগী, সংশ্লিষ্ট শিক্ষকবৃন্দ,সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার সকল বীর মুক্তিযোদ্ধা, সকল মসজিদের খতিব, ইমাম ও মুয়াজ্জিনগণ, প্রশাসনের স্থানীয় কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দের জন্য মেজবানের আয়োজন করা হবে। উক্ত মেজবান অনুষ্ঠানে সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাকে ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ফাউন্ডেশন চেয়ারম্যানের লিখিত বই, উত্তরীয় ও সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দকেও তাঁর লিখিত বই ও ফাউন্ডেশনের টি-শার্ট উপহার দেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, সাতকানিয়া লোহাগাড়ার কৃতি সন্তান জসিম উদ্দিন চৌধুরী একজন সমাজকর্মী, রাজনীতিবিদ ও শিক্ষানুরাগী হিসেবে এলাকায় বেশ সুপরিচিত। বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজে সম্পৃক্ত থাকায় তিনি ইতোমধ্যে দেশ ও বিদেশে সুখ্যাতি পেয়েছেন। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপ- কমিটির সদস্য এবং আমরা ক’জন মুজিব সেনা কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সহ- সভাপতি।