উপলক্ষ বা বিশেষত্ব- এসবের কমতি ছিল না ম্যাচটিতে। প্রথম বিশেষত্ব পঞ্চপাণ্ডবে। মাশরাফি বিন মুর্তজা, তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ একত্রে শততম ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন। বাকি দুটি বিশেষত্ব অধিনায়ক মাশরাফিতে। এই ম্যাচ দিয়ে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ৬৯টি ওয়ানডেতে অধিনায়কত্ব করা হাবিবুল বাশারকে ছুঁয়ে ফেলেছেন তিনি। আরেকটি যে বিশেষত্ব, সেখানে আবেগ আর বেদনার সুর মেশানো। এই ম্যাচটিই হয়ে যেতে পারে মিরপুরে মাশরাফির শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ!
অনেক উপলক্ষের ম্যাচটি অবশ্য মধুর হয়নি। উইন্ডিজ ওপেনার শাই হোপের তোপে অসহায় হয়ে পড়া বাংলাদেশকে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে মেনে নিতে হয়েছে চার উইকেটের হার। মূলত ম্যাচসেরা হোপের ব্যাটিংয়েই অনেক উপলক্ষের ম্যাচটি শেষশেষ বাংলাদেশের কাছে হয়ে ওঠে চরম যন্ত্রণার। তবে ব্যাট হাতে শেষ পাঁচ ওভারে মাত্র ২৬ রান তোলার ব্যাপারটিও হারের অন্যতম কারণ হতে পারে। ১২ বলে ২২ থাকতে ৪৯তম ওভারে মুস্তাফিজুর রহমানের দেওয়া ১৬ রানও হারের পেছনে ভূমিকা রেখেছে, সেটাও বলা যায়।
মঙ্গলবার মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে আগে ব্যাটিং করা বাংলাদেশ ওপেনার তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিমের হাফ সেঞ্চুরিতে সাত উইকেট ২৫৫ রান তোলে। জবাবে শুরু থেকে শেষপর্যন্ত একাই বাংলাদেশের বোলারদের শাসন করা শাই হোপ ১৪৬ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে উইন্ডিজকে চার উইকেটের দারুণ এক জয় উপহার দেন। এই জয়ে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ১-১ সমতা ফেরালো ক্যারিবীয়রা।
২৫৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে ভালো শুরু হয়নি উইন্ডিজের। যদিও শুরুর ব্যাপারটি তাদের ইনিংসে প্রভাব ফেলতে পারেনি। দলীয় ৫ রানে চন্দরপল হেমরাজের উইকেট হারালেও দলকে সেটা বুঝতে দেননি চোখ ধাঁধানো সেঞ্চুরি করা ডানহাতি ওপেনার শাই হোপ ও ড্যারেন ব্রাভো। এই জুটিতে ৭০ রানে পৌঁছে যায় ক্যারিবীয়রা। এমন সময় ৩০ রান করা ব্রাভোকে ফেরান রুবেল হোসেন।
দ্বিতীয় উইকেট হারানো উইন্ডিজ আবারও ইনিংস গুছিয়ে নেয় হোপ ও মারলন স্যামুয়েলসের ব্যাটে। এই জুটি থেকে আসে ৬২ রান। স্যামুয়েলস ২৬ রান করে ফিরে গেলে দ্রুত আরও দুটি উইকেট হারায় সফরকারীরা। কিন্তু একপাশ আগলেই রাখেন হোপ। এরপর রস্টন চেজকে সঙ্গে নিয়ে লড়াই চালিয়ে যান ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলা উইন্ডিজ এই ব্যাটসম্যান। চেজ আউট হলে কেমো পলকে সঙ্গে নিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করেন ১৪৬ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলা হোপ। ক্যারিয়ার সেরা এই ইনিংসটি খেলতে তার খরচা হয়েছে ১৪৪ বল। চার হাঁকিয়েছেন ১২টি এবং ছক্কা তিনটি।
এরআগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশের শুরুটা হয়েছে হোঁচটে। প্রথম ওয়ানডের মতো এদিনও চার ওপেনারের সুবিধা নিতে পারেনি মাশরাফি বিন মুর্তজার দল। দলীয় ৫ রানের মাথায় গোড়ালির চোটে মাঠ ছাড়েন লিটন কুমার দাস। তার এই এই চোট আরও বিপদ ডেকে আনে। উইকেটে যান ইমরুল কায়েস। ছয়টি বল বোকাবেলা করলেও রানের খাতা খোলা হয়নি প্রথম ওয়ানডেতেও নিজের ছায়া হয়ে থাকা বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানের।
টপ অর্ডারের দুজন ব্যাটসম্যান হারানোর চাপ অবশ্য বুঝতে হয়নি দলকে। তৃতীয় উইকেটে জুটি গড়ে এই চাপ সহজেই সামলে নেন ওপেনার তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিম। তৃতীয় উইকেটে ১১১ রান তুলে বাংলাদেশ শিবিরে স্বস্তি এনে দেন এই দুই ব্যাটিং কান্ডারী। এই জুটিতে ১২৫ রানে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। মাঝে তামিম-মুশফিক দুজনই হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করে নেন। এই ইনিংস দিয়ে তিন ফরম্যাট মিলিয়ে ১২ হাজার রানের মালিক হয়ে যান তামিম।
যা এশিয়ার বাঁহাতি ওপেনারের মধ্যে তৃতীয় ও বিশ্বের মধ্যে নবম সেরা। এশিয়ায় তামিমের সামনে আছেন কেবল শ্রীলঙ্কার সনাৎ জয়সুরিয়া ও পাকিস্তানের সাঈদ আনোয়ার। তিন ফরম্যাট মিলিয়ে ১২ হাজার রানের মাইলফলক ছুঁয়ে উইকেটে আর টিকতে পারেননি দেশসেরা এই ব্যাটসম্যান। ৬৩ বলে চারটি চার ও একটি ছক্কায় ৫০ রান করে সাজঘরে ফেরেন ৪৩তম ওয়ানডে সেঞ্চুরির দেখা পাওয়া তামিম।
তামিমের বিদায়ে আবারও বিপাকে পড়তে হয় বাংলাদেশকে। কারণ কিছুক্ষণ পরই তামিমের পথে হাঁটেন ৩২তম ওয়ানডে হাফ সেঞ্চুরি করা মুশফিক। বাংলাদেশের ইনিংসে প্রথম আঘাত হানা ওশানে থমাসের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান তিনি। ফেরার আগে ৮০ বলে পাঁচটি চারে ৬২ রানের দারুণ একটি ইনিংস খেলেন বাংলাদেশের হয়ে ১৯৭টি ওয়ানডে খেলা মুশফিক।
দ্রুত দুই উইকেট হারানোর ব্যাপারটি বাংলাদেশকে পেছনে ঠেলতে পারেনি। পঞ্চম উইকেটে হাল ধরেন সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এই জুটির ৬১ রানে দুশর কাছাকাছি পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। দুজনকেই বেশ সাবলীল দেখাচ্ছিল। এমন সময় রভম্যান পাওয়েলের বলে কভারে ক্যাচ তুলে বিদায় নেন ৩০ রান করা মাহমুদউল্লাহ। সৌম্যও পারেননি উইকেটে টিকতে। ৬ রান করেই থামেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান।
সৌম্যর বিদায়ের পর মাঠে ফেরেন গোড়ালিতে চোট পাওয়া লিটন। এবারও কিছু করা হয়নি তার। সৌম্যর মতো ছয় রানেই বিদায় নিতে হয় তাকে। অন্য পাশে ঠিকই ব্যাট ঘুরাচ্ছিলেন ৪০তম ওয়ানডে হাফ সেঞ্চুরি করা সাকিব। অধিনায়ক মাশরাফিকে নিয়ে বাকিটা পথ পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। কিন্তু পারেননি। ৬২ বলে ছয়টি চার ও একটি ছক্কায় ৬৫ রান করে আউট হন বিশ্বের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডার।
৪৭ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ তখন সাত উইকেটে ২৩৯। পরের তিন ওভারে কেবল হতাশাই মিলেছে। এই তিন ওভারে মাত্র ১৬ রান যোগ করেন মাশরাফি ও মেহেদী হাসান মিরাজ। অবশ্য হতাশা মিলতে শুরু করে আরেকটু আগে থেকে। শেষ পাঁচ ওভারে এসেছে মাত্র ২৬ রান। এখানেই পিছিয়ে পড়তে দ্বিতীয় ম্যাচ দিয়েই সিরিজ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মাঠে নামা বাংলাদেশকে। শেষপর্যন্ত যার খেসারত দিতে হয় ম্যাচ হেরে।