করোনা দূর্যোগের পর পরই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলতে হবে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের সম্পূর্ণ ঝুঁকিমুক্ত রাখতে চাই অটো স্যানিটাইজার মেশিন। এতে চমক দেখাল চট্টগ্রামে অবস্থিত বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি। প্রতিষ্ঠানটির ইন্জিনিয়াররা তৈরী করল অটোমেটিক হ্যান্ড স্যানিটাইজার মেশিন।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অঙ্গ-প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেরিন একাডেমির অফিসিয়াল সূত্রে জানা যায় এই করোনা প্রতিরোধে সহায়ক বিশেষ যন্ত্র উদ্ভাবনের বিষয়টি। এই অটোমেটিক হ্যান্ড-স্যানিটাইজার” মেশিনের সাহায্যে খুব দ্রুত অধিক সংখ্যক মানুষ তাদের হাতকে জীবাণুমুক্ত করতে সক্ষম হবে কোন কিছু স্পর্শ না করে। উল্লেখ্য, কিছুদিন আগে এই একাডেমিতে করোনা আক্রান্ত রোগীদের শ্বাস-কষ্ট প্রশমনে “নিউমেটিক কন্ট্রোল নিয়ন্ত্রিত ভেন্টিলেটর” ও মাস্কসহ নিত্যব্যবহার্য্য জিনিসপত্র জীবাণুমুক্ত করণে “আল্ট্রাভায়োলেট ডিসইফেক্ট্যান্ট ওভেন” উদ্ভাবিত হয়েছিল যা, বিভিন্ন মহলে যথেষ্ট প্রশংসিত হয়েছে।
আরো জানা যায়,
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এবং সুইডেনের ওয়ার্ড মেরিটাইম ইউনিভর্সিটির পার্টনার রিলেশনে উন্নীত এই একাডেমি, সর্বাধুনিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সমুদ্রগামী জাহাজের জন্য বিশ্বমানের সুদক্ষ মেরিটাইম প্রফেশনাল তৈরি করছে। পেশাগত প্রশিক্ষণের পাশাপাশি ক্যাডেটদের উদ্ভাবনী চিন্তার বিকাশ ও বিজ্ঞান-চর্চার আদর্শ পরিবেশ রয়েছে এই একাডেমিতে। ফলশ্রুতিতে কোভিড-১৯ মহামারি প্রতিরোধে ধারাবাহিকভাবে বেশ কয়েকটি উদ্ভাবন বাস্তবায়িত হয়েছে।
একাডেমির কমান্ড্যান্ট নৌপ্রকৌশলী ড. সাজিদ হোসেন এবারের উদ্ভাবন বিষয়ে বলেন, শীঘ্রই দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো চালু হবে এবং একাডেমির ক্যাডেট প্রশিক্ষণও চালু হবে। তখন করোনা মোকাবেলায় যে মৌলিক স্বাস্থ্যবিধি মানা; অর্থাৎ ঘন ঘন হাত জীবানুমুক্ত করা- এটা সকল শিক্ষার্থীদের মেনে চলা একটি গুরুত্বপুর্ণ বিষয় হয়ে দাড়াবে। তাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সকল অফিস/কারখানায় কর্মরত সবাই যাতে খুব দ্রুত (মাত্র ২/১ সেকেন্ডে), সহজে ও কম খরচে হাত জীবাণুমুক্ত করতে পারে সে ধরনের একটি চিন্তা থেকে আমাদের এবারের উদ্ভাবনের সুত্রপাত। ইতোমধ্যে এই “অটোমেটিক হ্যান্ড-স্যানিটাইজার” আমাদের নিয়ন্ত্রনকারী নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে এবং প্রশংসিত হয়েছে। মন্ত্রণালয় যন্ত্রটিতে আরো উন্নতি সাধন ও সহজলভ্য করার জন্যও নির্দেশনা দিয়েছেন।
যন্ত্রটির ডিজাইনার, একাডেমির ল্যাব প্রশিক্ষক মুঃ খালেদ সালাউদ্দিন জানান, তাদের উদ্ভাবিত এই যন্ত্রটি হাত জীবাণুমুক্ত করার কাজটি খুবই দ্রুত, সহজে ও স্পর্শহীনভাবে করতে সক্ষম। যেহেতু যন্ত্রটি ব্যবহারের সময় কোথাও কোন রকম স্পর্শ করার প্রয়োজন নেই, তাই এখানে বহুব্যবহারে সংক্রমণের সম্ভাবনা শূন্য। অর্থাৎ, যে কোনো প্রতিষ্ঠানের সবাই এটি ব্যবহার করতে পারবে। যন্ত্রটির কাঠামো নির্মাণে পরিত্যক্ত প্লাষ্টিক বোতল ও অন্যান্য জিনিস ব্যবহারের ফলে খুবই কম খরচে এটি তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। এছাড়া যন্ত্রটিতে জীবাণুনাশক ব্যবহারে ‘লস-রিডাকশন ফ্লুইড-মেকানিজম’ যুক্ত করায় কোন ধরনের অপচয় সম্পূর্ণভাবে রোধ করা সম্ভব, ফলে প্রচলিত ম্যানুয়াল হ্যান্ড-স্যানিটাইজার থেকে কেমিক্যাল খরচ অনেক কম হবে।
একাডেমির কমান্ড্যান্ট আরো বলেন, করোনা মহামারির এই কঠিন সময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া আধুনিক ও স্বনামধন্য এই মেরিটাইম প্রতিষ্ঠানে করোনা মোকাবেলায় যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকরী উদ্ভাবন সম্পন্ন হয়েছে তা নিঃসন্দেহে একাডেমির আধুনিক কারিগরী শিক্ষাব্যবস্থার উৎকর্ষের সমৃদ্ধি প্রমান করে।
বিশ্ববাজারে দক্ষ মেরিটাইম প্রফেশনাল যোগানের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা (বার্ষিক প্রায় ২৩০ মিলিয়ন ডলার; ২,০০০ কোটি টাকা) রাখার পাশাপাশি দেশের এই দুর্যোগকালীন সময়ে করোনা প্রতিরোধে বাংলাদেশ মেরিন একাডেমির এসব উদ্ভাবন গুরুত্বপূর্র্ণ ভূমিকা রাখবে বলে সংশ্লিষ্ট সবাই আশাবাদ ব্যক্ত করেন।