শিক্ষাখাতে দুর্নীতি বন্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা শিক্ষা উপমন্ত্রীর

সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষায় একে অন্যের দোষ না ঘেঁটে, প্রতিযোগীতায় লিপ্ত না হয়ে ভাতৃত্ববোধ নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের নবগঠিত মন্ত্রীসভার শিক্ষা বিষয়ক উপমন্ত্রী ও দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যরিস্টার মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। শপথ নেওয়ার পর গতকাল শুক্রবার সকালে প্রথমবারের মত চট্টগ্রাম পৌঁছে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে দলের নেতাকর্মীদের সাথে কুশল বিনিময়ের পর এক ব্রিফিংয়ে এ আহ্বান জানান তিনি। শিক্ষাখাতে দুর্নীতি বন্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। গতকাল শুক্রবার সকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি একথা বলেন। মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘আমি আপনাদের সন্তান। আপনাদের সমর্থন নিয়ে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার প্রতি আস্থা রেখে যে দায়িত্ব দিয়েছেন তার প্রতিদান দেয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।’ তিনি বলেন, ‘শিক্ষাখাতে দুর্নীতি বন্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ এবং বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস রোধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে।’
চট্টগ্রামে নতুন করে স্কুল-কলেজ সরকারিকরণে উদ্যোগ নেওয়া হবে জানিয়ে নওফেল আরও বলেন, ‘যেসব সরকারি স্কুল-কলেজ আছে সেখানে আরও অবকাঠামো উন্নয়ন করে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হবে। স্কুল-কলেজে আসন সংখ্যা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নওফেলকে যে দায়িত্ব দিয়েছেন তা সম্পাদনে সবসময় আমরা তার পাশে থাকবো।’
মতবিনিময়ে নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন, ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল ও আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, নগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হাসিনা মহিউদ্দীন, নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, আইন বিষয়ক সম্পাদক শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরীসহ নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। পরে মহিবুল হাসান চৌধুরী প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক এম এ আজিজের কবর জিয়ারত করেন।
সার্কিট হাউজে উপস্থিত চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘মহানগর আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে আপনাদের নির্দেশনা অনুযায়ীই সাংগঠনিক কাজ করবো আমি। আর নির্বাহী কাজগুলোর ক্ষেত্রে যে যার অবস্থান থেকে সরকারের ভাবমূর্তি জনগণের সামনে ফুটিয়ে তুলবো।’ যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের উদাহরণ টেনে ব্যরিস্টার নওফেল বলেন, ‘যুক্তরাষ্টের সরকারকে যেমন ট্রাম্প এডমিনিস্ট্রেশন ডাকা হয়, আমাদের সরকারও তেমনি শেখ হাসিনার সরকার। আমাদের সমস্ত কাজকেই শেখ হাসিনার সরকারের কাজ হিসেবে নিতে হবে। যেন আগামী নির্বাচনে আমাদের আর বেগ পেতে না হয়। এ জন্য সকল বিরোধ মিটিয়ে ভাতৃত্ববোধ নিয়ে কাজ করতে হবে।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার মান আগের থেকে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশে স্বাক্ষরতার হার বৃদ্ধি পেয়েছে। ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার এ ধরনের দক্ষতাভিত্তিক গ্র্যাজুয়েটের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের পেশাজীবিরা কাজ করছে বলেই আমাদের আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটছে। মানের প্রশ্নে আমাদের কোন আপোষ নেই তবে, প্রচারমাধ্যম বাড়ার ফলে শিক্ষাখাতে অসংগতিগুলো বেশি ধরা পড়ছে। ঘাটতি সবসময়ই ছিলো, কিন্তু এখন প্রচার বেশি হচ্ছে বলে মানের বিষয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করার সুযোগ এসেছে। আমি বলবো না এটা খারাপ বিষয়। কারণ যত বেশি সমস্যা সামনে আসবে, তত বেশি এগুলো সমাধানের সুযোগ আসবে।’
কারিগরী শিক্ষা বিস্তারে দাতা সংস্থাদের সাথে নিয়ে ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের ইশতেহারে দেশে কর্মমুখী শিক্ষা বিস্তারের বিষয়টির পরিষ্কার উল্লেখ আছে। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মমুখী শিক্ষার বিষয়টি জোরালো করে তোলা হবে।’
প্রশ্নফাঁসের বিষয়ে নবনির্বাচিত শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, প্রশ্নফাঁস রোধের বিষয়টা সবসময় একটা চ্যালেঞ্জ। উন্নত বিশ্বেও এই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। প্রশ্নফাঁস রুখতে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। অভিভাবকদেরও এক্ষেত্রে অগ্রনী ভূমিকা রাখতে হবে।’
সভায় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদের যে মন্ত্রিসভা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তৈরি করেছেন, তা সারা দেশে সমাদৃত হয়েছে। এই মন্ত্রিসভায় চট্টগ্রামের কৃতি সন্তান হিসেবে সদস্য পদ লাভ করার জন্য চট্টলবীর মহিউদ্দিন চৌধুরীর পুত্র ব্যারিস্টার মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে আমার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে এবং মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানাই। আগামী ২৫ জানুয়ারী লালদিঘি ময়দানে নওফেলসহ চট্টগ্রাম থেকে মন্ত্রীসভায় সদস্যপদ লাভ করা চারজনের জন্য সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেন তিনি।’
সভায় অন্যদের দশ্যে উপস্থিত ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মফিজুর রহমান, সিটি কর্পোরেশনের প্যানাল মেয়র চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসিনা মহিউদ্দিন, মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর প্রমুখ।