আবারো অবৈধপন্থায় মাছ ধরতে শঙ্খ নদে বিষ প্রয়োগ করেছে দুর্বৃত্তরা। চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত মিঠাপানির মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র হিসাবে পরিচিত খরস্রোতা এ শঙ্খনদে মাত্র এক বছরের ব্যবধানে আবারো বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে।
বিভিন্নভাবে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, গত ৩০ জানুয়ারি দিবাগত রাতের কোন এক সময়ে শঙ্খনদের উজানের কোনস্থানে বিষ প্রয়োগ করে দুর্বৃত্তের দল। এতে করে নদে থাকা সব ধরনের ছোটবড় মাছ বিশেষ করে চিংড়ি মাছই মরে পানির উপরে ভেসে উঠে।
গতকাল ৩১ জানুয়ারি ভোর হওয়ার আগেই নদের পানিতে ভেসে উঠা মাছ ধরে নিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তের দল।
সকাল হওয়ার পর নদ উপকূলবর্তী পাড়াগুলোর লোকজনের মাঝে মাছ ভেসে উঠার খবর ছড়িয়ে পড়লে তারা কুয়াশা ভেদ করেই ভিড় জমায় মাছ ধরতে। জড়ো হওয়া লোকজনের মধ্যে কেউ মশারি জাল, কেউ হাত জাল, কেউ চালুনি, কেউ বা শাড়ি লুঙ্গি নিয়ে মাছ ধরতে যায়। বেলা বাড়ার সাথে সাথে মাছ ধরার জন্য মানুষের ভিড়ও বাড়তে থাকে।
অবশ্য বেলা দশটার পর থেকে মৃতপ্রায় মাছের সংখ্যাও ধীরে ধীরে কমে আসে। চন্দনাইশ উপজেলার ধোপাছড়ি, দিয়াকুল দোহাজারী, চাগাচর, সাতকানিয়া উপজেলার পুরানগড়, বাজালিয়া, ধর্মপুর, উত্তর কালিয়াইশ ও কাটগড় এলাকায় শঙ্খনদের পানিতে নারী, পুরুষ, শিশু ও কিশোরদের বিষক্রিয়ায় জ্ঞান হারিয়ে পানিতে ভেসে উঠা মরা এবং আধামরা মাছ ধরতে দেখা যায়।
বিষক্রিয়ায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলা ও মরে যাওয়া মাছ ধরতে নামা লোকজন জানিয়েছে মঙ্গলবার রাতেই নদের কোথাও না কোথাও বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে। তারা জানান, বিষ প্রয়োগের কারণে শুধু বড় মাছ নয় সকল প্রজাতির মাছের পোনাও ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। দুর্বৃত্তরা মূলতঃ চিংড়ি মাছ ধরতে নদীতে বিষ প্রয়োগ করে থাকে। এ বিষ পানিতে পড়ার আধা ঘণ্টার মধ্যেই ছোটবড় সব চিংড়িমাছ পানিতে ভেসে উঠে অথবা মরে যায়।
মাছ ধরতে আসা মামুন, শওকত, হোসেন, শুক্কুরসহ আরো অনেকেই জানান তারা দুই ঘণ্টা মাছ ধরে জনপ্রতি এক দেড় কেজি করে মাছ পেয়েছেন। তাদের হাতে ধরা পড়া মাছের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছে চিংড়ি মাছ। তবে অন্যান্য প্রজাতির মাছও মরেছে বলে তাদের কাছ থেকে জানা যায়। অন্য প্রজাতির মাছের সংখ্যা খুব বেশি নয় বলেও তারা জানিয়েছেন।
তাছাড়া বিষাক্ত রাসায়নিক প্রয়োগের কারণে নদে বসবাসরত কাকড়াসহ নানা প্রজাতির অসংখ্য জলজ প্রাণী মারা পড়ছে বলেও জানান তারা।
গত ২০১৬ সালের ২১ নভেম্বর এবং ২০১৭ সালের ৬ জানুয়ারি একই কায়দায় শঙ্খনদে আরো দুইবার বিষ প্রয়োগ করেছিল দুর্বৃত্তের দল। শঙ্খনদে অবৈধপন্থায় মাছ ধরতে দুর্বৃত্তের দল প্রতি বছর কমপক্ষে তিন থেকে চারবার বিষ প্রয়োগ করে মাছ মারলেও মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে কোন পদক্ষেপ কখনো নিতে দেখা যায়নি।
শংখপাড়ের জেলে জহরলাল জলদাশ, প্রদীপ জলদাশ, অধির জলদাশসহ অনেক জেলেই জানিয়েছেন প্রতিবছর শীত মৌসুম এলে নদীর পানি কমে যায়। আর এসময় এক শ্রেণির দুর্বৃত্ত শঙ্খে বিষ প্রয়োগ করে থাকে। বিষ প্রয়োগের কারণে মাছের পোনাও মরে যাওয়ায় মিঠাপানির মাছের আধার হিসাবে খ্যাত এ নদে মাছের সংখ্যাও কমে আসছে। তবে কেউ কেউ জানিয়েছেন, ধোপাছড়ি এলাকায় এ বিষ প্রয়োগের ঘটনা বারবার ঘটে আসছে।
চন্দনাইশ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হিসাবে অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা কামাল উদ্দীন চৌধুরী বলেন, এ ব্যাপারে তাকে কেউ কিছু জানায়নি। এখন তিনি এ ব্যাপারে খবরাখবর নিয়ে বিষ প্রয়োগকারীদের চিহ্নিত করতে ব্যবস্থা নেবেন।