অবশেষে শংখ নদীর উপর নির্মিত হচ্ছে চৌকিদার ফাঁড়ি শংখসেতু। দক্ষিণ চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী পৌরসভাধীন “লালুটিয়া চৌকিদার ফাঁড়ি” ও সাতকানিয়া উপজেলার পুরানগড় ইউনিয়নের “নয়াহাট” দুটি পাশাপাশি গ্রাম। কিন্তু গ্রাম দু’টিকে শত শত বছর থেকে বিভাজন করে রেখেছে বিশাল খরস্রোতা শংখনদ। শুধু এই দুইটি পৌরসভা ও ইউনিয়ন নয় আশেপাশের ধোপাছড়ি, বাজালিয়াসহ আরো কয়েকটি ইউনিয়নের লোকজনদের এ শংখনদ নৌকাযোগে পেরিয়ে এপার ওপার আসা যাওয়া করা ছাড়া আর কোন উপায় ছিলনা। খবর আজাদী
বর্ষাকালে এ দুর্ভোগ আরো চরমে উঠতো যখন খরস্রোতা এ নদে পানি বৃদ্ধি পেত। বিশেষ করে স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদেরকেই সীমাহীন কষ্ট ভোগ করতে হতো। তাছাড়া প্রতিবার নৌকাযোগে এ নদ পাড়ি দিতে ইজারাদারের হাতে নগদ টাকা প্রদানের বিষয়টিও ছিল অনেকটা শাখের করাতের মতো।
এপার ওপারের লোকদের দীর্ঘ ৪৭ বছর চরম দুর্ভোগের মাঝেই কাটাতে হয়েছে। আর এ একটি কারণে দোহাজারী পৌরসভা ও পুরানগড় ইউনিয়নসহ আশেপাশের ইউনিয়নগুলোর লোকজনের মাঝে বিভাজনের একটি ধারা প্রবাহিত হয়ে আসছিল এই খরস্রোতা শংখনদের জলরাশির মধ্যদিয়ে। ফলে পুর্বপাড়ের প্রায় ৩০টি গ্রামের স্কুল–কলেজ পড়ুয়া ছাত্রছাত্রী, কৃষক, ব্যবসায়ী, চাকরীজীবী থেকে শুরু করে সকলেরই দুর্ভোগ লেগে থাকতো ফি বছর।
সংসদের প্রথম অধিবেশনে বক্তব্য প্রদানকালেই সাংসদ নজরুল ইসলাম চৌধুরী অন্যান্য বিষয়ের সাথে শংখনদের উপর চৌকিদার ফাঁড়ি সেতু নির্মাণের যৌক্তিকতা এবং শংখের ভাঙ্গনের ভয়াবহতার চিত্র জোরালোভাবে তুলে ধরেন।
এ দু’টি সমস্যা নিয়ে এলাকার সাংসদ আগাগোড়া সরব ভূমিকা পালন করার কারণে পৌঁছে যায় সফলতার দ্বারপ্রান্তে। গত অর্থবছরে প্রায় ২০০ কোটি টাকার বরাদ্দ নিয়ে এসে শংখনদের দু’পাড়ে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে শংখনদকে যেমন পুরোপুরি শাসনের আওতায় নিয়ে এসেছে। ঠিক তেমনিভাবে সাংসদের জোরালো ভূমিকার কারণেই নতুন বছরে কাজ শুরুর প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে চৌকিদার ফাঁড়ি শংখসেতুর।
ইতিমধ্যে ৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ২২০ মিটার দীর্ঘ এ সেতুটির নির্মাণ প্রস্তবনা একনেকে পাস হয়ে আসার খবরটি খুব দ্রুত দু’পাড়ের জনগণের মাঝে পৌঁছে গেলে হাজার হাজার জনতা উল্লাসে মেতে উঠে।
অবশেষে সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে গত ২৯ ডিসেম্বর এলাকার সাংসদ নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে ঢাকা থেকে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধদল চৌকিদার ফাঁড়ি–নয়াহাট এলাকায় প্রস্তাবিত শংখসেতুর স্থান নির্বাচন, পরিবেশগত সমস্যা এবং ব্যয় বরাদ্দের ব্যাপারে পরিদর্শনে আসে। প্রতিনিধি দলের সদস্যের মধ্যে যারা উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ঢাকা প্রধান কার্যালয়ের মৃত্ত্বিকা বিশেষজ্ঞ ড. মোহাম্মদ অসীম উদ্দীন, পরিবেশ পরামর্শক আশরাফুল আলম, অর্থ পরামর্শক আশীষ ধর ও চন্দনাইশ উপজেলা প্রকৌশল বিভাগের উপ সহকারী প্রকৌশলী সুবোধ চন্দ্র পাল।
সেতুর স্থান পরিদর্শন শেষে উপস্থিত লোকজনের উদ্দেশ্যে সাংসদ নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, দীর্ঘ অর্ধশত বছর পর ২০ হাজার জনগণের স্বপ্নের এই সেতু নির্মাণের প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরু করতে পেরে তিনি আনন্দিত ও গর্বিত।
তিনি আরো বলেন, এলাকার মানুষের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই তিনি এখানে একটি সেতু নির্মার্ণের স্বপ্ন দেখে আসছেন এবং এ ব্যাপারে তার তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন। যে কারণে আজ দীর্ঘদিনের লালিত এ সেতু বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তার স্বপ্ন সফল হওয়ায় তিনি এ সময় পরম করুণাময়ের কাছে শোকরগোজারীও করেন। স্ব
উল্লেখ্য এ সেতুটি নির্মিত হলে দু’টি উপজেলার সাথে যেমন সংযোগ সাধিত হবে তেমনি নৌকাযোগে শংখনদ পাড়ি দেওয়ার দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবে হাজার হাজার মানুষ। পাশাপাশি দু’পাড়ের পাঁচ সহস্রাধিক কৃষক তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি শতভাগ নিশ্চিত হবে এবং পার্বত্যজেলা বান্দরবানে যাওয়ার একটি বিকল্প যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরী হবে।
তবে সবচেয়ে খুশীর খবর হচ্ছে সেতুটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলে দক্ষিণ চট্টগ্রামের সবজিভান্ডার হিসাবে খ্যাত এ অঞ্চলের কৃষকদেরকে আর তাদের উৎপাদিত সবজি বা অন্যান্য ফসল বিক্রি করতে যেমন হিমশিম খেতে হবেনা তেমনি তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তিও নিশ্চিত হবে।