সাতকানিয়ার ১১টি ইউনিয়ন, ১টি পৌরসভা ও লোহাগাড়ার ৯টি ইউনিয়ন নিয়ে চট্টগ্রাম-১৫ সংসদীয় আসন। এ আসনে অতীতের ১০টি নির্বাচনে ২ বার আওয়ামী লীগ, ৩ বার বিএনপি, ৩ বার জামায়াত ও ২ বার জাতীয় পার্টি জয়লাভ করেছে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ক্ষমতাসীন দলের অধ্যাপক ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী। তিনি বিএনপি-জামায়াত বিহীন বিগত নির্বাচনে একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বিএনএফের জয়নাল আবেদিন কাদেরীকে পরাজিত করে এমপি নির্বাচিত হন। এখানে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের এম ছিদ্দিক। এরপর দীর্ঘ ৩৫ বছর জয়ের মুখ দেখেননি আওয়ামী লীগ। দীর্ঘ অপেক্ষার পর দলীয় সাংসদ পেয়ে প্রাণের সঞ্চার সৃষ্টি হয়েছিল সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে। নতুন উদ্যম নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন দলের সকল স্তরের নেতা-কর্মীরা। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই শুরু হয় গৃহবিবাদ। দলীয় সাংসদের সাথে নানা বিষয় নিয়ে মনোমালিন্য সৃষ্টি হয় সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের। এক পর্যায়ে সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে দলের বড় একটি অংশ সাংসদ আবু রেজা মুহাম্মদ নেজাম উদ্দিন নদভীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। অপর অংশ সাংসদের সাথে রয়েছেন। এভাবে চলতে চলতে উপজেলা পর্যায়ের শীর্ষ নেতাদের সাথে সাংসদের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে রূপ নেয়। দলের অঙ্গ-সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও বিভক্ত হয়ে পড়েন। এক গ্রুপ অপর গ্রুপের বিরুদ্ধে কাদা ছোড়াছুঁড়িতে লিপ্ত হয়। তাদের সাথে সাথে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরাও দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে এ আসনে বর্তমান সাংসদসহ ১০ জন হেভিওয়েট প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মাঠে রয়েছেন। মনোনয়ন কার ভাগ্যে সেটা এখনো কেউই জানেন না। তারপরও সবাই দলের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন। সরেজমিনে নানা শ্রেণী পেশার মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চট্টগ্রাম-১৫, সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনে প্রার্থী যেমন বেশি দ্বন্দ্বও বেশি।
তবে মনোনয়ন যেই পাক-না কেন সবাই ঐক্যবদ্ধ ভাবে নৌকার পক্ষে নামবেন বলে জানিয়েছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। তারা হচ্ছেন বর্তমান সাংসদ অধ্যাপক ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী, রূপালী ব্যাংকের পরিচালক ও আওয়ামী লীগ নেতা সাংবাদিক আবু সুফিয়ান, বনফুল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ মোতালেব সিআইপি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি মঈনউদ্দিন হাসান চৌধুরী, চট্টগ্রাম জেলা পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এডভোকেট একেএম সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুহাম্মদ ইদ্রিচ, দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য মো. এরশাদুল হক ভুট্টো, স্বাচিপ’র কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান ও লোহাগাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খোরশেদ আলম চৌধুরী। মনোনয়নের জন্য দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা এলাকায় প্রচারণার পাশাপাশি দলের হাইকমান্ডের আস্থা অর্জনেরও চেষ্টা করছেন। নির্বাচনকে সামনে রেখে সবাই এখন এলাকামুখি। বলতে গেলে চট্টগ্রামের একেবারে দক্ষিণ প্রান্তের এই আসনটিতে সবার আগেই নির্বাচনী আমেজ বইতে শুরু করে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার প্রধান-প্রধান সড়ক ছাড়াও প্রত্যন্ত অঞ্চলও বর্তমান এমপিসহ সম্ভাব্য অন্যান্য প্রার্থীদের ব্যানার, পোস্টার ও বিলবোর্ডে ছেয়ে গেছে। প্রত্যেক নেতাই এলাকায় পড়ে রয়েছেন। এলাকার প্রতিটি সামাজিক-ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন তারা, নিজেদের অবস্থানের জানান দিচ্ছেন। অতীতে বিভিন্ন কারণে দুরত্বে থাকা দলীয় নেতা-কর্মীদের মন গলানোর চেষ্টাও করছেন তারা।
স্থানীয় সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীর পাশাপাশি তার সহধর্মিনী রিজিয়া রেজা চৌধুরীও সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলে নারীদের নিয়ে কাজ করছেন। সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরছেন। এলাকায় এলাকায় নানা কর্মকাণ্ডে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন। এলাকার নারীদেরকে তিনি সংগঠিত করার কাজ করছেন।
সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি মাস্টার ফরিদুল আলম বলেন, দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে বর্তমান সাংসদ আবু রেজা মুহম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী হলেন যোগ্য প্রার্থী। তিনি দলের দুঃসময়ের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন করেছেন। নদভীর এলাকায় জনসম্পৃক্ততা বেশি। এ আসনে নৌকাকে বিজয়ী করতে চাইলে নদভীকে মনোনয়ন দিলে তিনি আবারো জিতবেন।
সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ফয়েজ আহমদ লিটন বলেন, বর্তমান সাংসদ আবু রেজা নদভী একজন অত্যন্ত সৎ ব্যক্তি। যার কোন লোভ-লালসা নাই। এমপি থাকা অবস্থায় সরকারি অর্থ লুটপাট করেননি। দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হয় এরকম কোন কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হননি। এলাকার উন্নয়নে সার্বক্ষণিক নিজেকে নিবেদিত রেখেছেন। সপ্তাহে ৩-৪ দিন এলাকায় আসেন এবং দলের নেতা-কর্মীদের খোঁজখবর নেন। সরকারি বরাদ্দের পাশাপাশি আল্লামা ফজলুল্লাহ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমেও এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন।
ছদাহা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোরশেদুল আলম দুলু বলেন, সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের ভোট দিয়ে দলীয় প্রার্থী বিজয়ী হতে পারবে না। দলের বাইরেও সাধারণ মানুষের সাথে ঘনিষ্টতা রয়েছে এমন নেতাকে মনোনয়ন দিতে হবে। সেক্ষেত্রে বনফুল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ মোতালেব অনেকটা এগিয়ে আছেন। তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি এলাকার মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন। এলাকার হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান করেছেন। সাতকানিয়া-লোহাগাড়াবাসী তাকে ভালোবাসেন। তিনি আরো বলেন, বর্তমান সাংসদ আবু রেজা নদভীর সাথে এলাকার অনেক নেতা-কর্মীর সম্পর্ক নেই। তাই নৌকার সম্মান রক্ষার্থে এম এ মোতালেবকে মনোনয়ন দিলে এলাকাবাসী বিপুল ভোটের ব্যবধানে তাকে নির্বাচিত করবেন। আমরা এলাকাবাসী প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাকে মনোনয়ন দেয়ার জন্য আকুল আবেদন জানাচ্ছি।
নলুয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগ নেতা সৈকত চৌধুরী জানান, আমরা রাজনৈতিক নেতাদের পাশাপাশি আমাদের এলাকায় একজন পেশাজীবী সাংবাদিক নেতাকে পেয়েছি। তিনি আবু সুফিয়ান। তিনি ছাত্র জীবন থেকে রাজনীতি করেছেন। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। আমরা জানি তিনি প্রধানমন্ত্রীর খুবই আস্থাভাজন একজন। তিনি এলাকা প্রিয় মানুষ। সপ্তাহে অনেকবার তিনি এলাকায় ছুটে আসেন। এমন প্রার্থীই দরকার। তিনি নিজের উদ্যোগে এলাকার উন্নয়নে সাধ্যমত চেষ্টা করেছেন। উনার মতো ক্লিন ইমেজের প্রার্থী মনোনয়ন পেলে সাতকানিয়া লোহাগাড়াবাসী স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে মাঠে মেনে পড়বেন।
লোহাগাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য ও ব্যবসায়ী নেতা মামুনুর রশিদ চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগকে অন্তরে লালন করেন এমন কাউকে মনোনয়ন দেয়া হোক। দলীয় নেতা-কর্মীদের মিথ্যা মামলায় হয়রানি করবে এমন কেউ যেন মনোনয়ন না পায়। তিনি বলেন, আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় উপ-দপ্তর সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান। তিনি ছাত্র অবস্থা থেকে দলের সাথে জড়িত। ২০০১ সালে ষড়যন্ত্রের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পরাজিত হওয়ার পর থেকে তিনি দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা এবং এলাকার নেতা-কর্মীদের সাথে ছিলেন। ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের রায়কে কেন্দ্র করে সাতকানিয়া-লোহাগাড়া জুড়ে জামায়াত শিবিরের নৃশংস তাণ্ডব চলাকালে আমিনুল ইসলাম আমিন এলাকায় এসে দলের নেতা-কর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। দুঃসময়ের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা হিসেবে আমিনুল ইসলাম আমিনকে মনোনয়ন দিলে বিপুল ভোটে আমরা বিজয়ী করতে পারবো।
এদিকে সাতকানিয়ার এলাকার শিক্ষক সুমন মহাজন জানান, মঈনউদ্দিন হাসান চৌধুরী যখন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন তখন পুরো বাংলাদেশে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার বক্তৃতা মানুষ মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনে। এলাকায় তার ভালো অবস্থান আছে। কোন গ্রুপিংয়ে তিনি বিশ্বাস করেন না। তাই তাকে মনোনয়ন দিলে তিনি সহজেই জয়লাভ করতে পারবেন। প্রধানমন্ত্রীও তাকে খুব পছন্দ করেন। তিনি ৯৬ সালে মনোনয়ন পেয়েছিলেন। গ্রুপিংয়ের কারণে জিততে পারেননি।
লোহাগাড়া এলাকার এনজিও কর্মী মফিজুর রহমান জানান, চট্টগ্রাম জেলা পিপি ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এডভোকেট একেএম সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ২০০৮ সালে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন। তখন নানা সমীকরণে তিনি নির্বাচিত হতে না পারলেও এবার যদি মনোনয়ন পান তাহলে তিনি নির্বাচিত হতে পারবেন।
আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে বর্তমান সাংসদ অধ্যাপক ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী বলেন, মনোনয়ন পাওয়া এবং নির্বাচনে জয়লাভ করার বিষয়ে আমি শতভাগ আশাবাদী। সন্ত্রাসের জনপদ সাতকানিয়া-লোহাগাড়াকে আমি শান্তির জনপদে রূপান্তরিত করেছি। এক সময় হত্যা, সন্ত্রাস, ছিনতাই, চাঁদাবাজ ও ডাকাতের ভয়ে লোকজন গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে গিয়েছিল। এখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভাল থাকায় মানুষ আর শহরে ছুটছে না। আমি এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন করেছি। আল্লামা ফজলুল্লাহ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে দীর্ঘদিন যাবৎ মসজিদ, মাদ্রাসা নির্মাণ ছাড়াও কুয়েত এবং কাতার পল্লী করে কয়েক শত পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা করেছি। দলীয় কোন্দলের কথা স্বীকার করে নদভী বলেন, কোন্দলের জন্য আমি মোটেও দায়ী নয়। আমি এমপি হওয়ার আগে উপজেলা কমিটিগুলো গঠিত হয়েছে। এরপরও আমার কর্মকাণ্ডে সন্তুষ্ট হয়ে কমিটির বেশির ভাগ লোক আমার পক্ষে রয়েছেন। দলে যাদের অবদান আছে তারা আমার পক্ষে। অন্যরা আমার বিরোধিতা করছে। সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ মোতালেব ও সাধারণ সম্পাদক কুতুবের সাথে অনেক বৈঠক করেছি। আমার মনে হয় মনোনয়ন যেই পাক শেষ মুহূর্তে সবাই এক মঞ্চে চলে আসবেন।
আবু রেজা নদভী আরো বলেন, সাতকানিয়া-লোহাগাড়া এখন আর জামায়াতের দুর্গ নয়। এখানে তাদের ৪-৫ শ’ ক্যাডার রয়েছে। তারাও এখন এলাকা ছাড়া। এখানে ধর্মভীরু মানুষ বেশি। জামায়াত শিবির এক সময় ক্যাডার দিয়ে ভোট আদায় করেছে। কিন্তু এখন মানুষ সচেতন হয়ে গেছে। আমি এলাকার অন্তত ৪০টি মসজিদে জুমার খুৎবা দিয়েছি। ইসলামের সঠিক ব্যাখ্যা দিয়ে জামায়াতের ভণ্ডামি সম্পর্কে বুঝিয়ে দিয়েছি। তারা এখন আর জামায়াতকে ভোট দেবে না। এছাড়া উন্নয়নের কারণে সর্বস্তরের মানুষ আমাকে ভোট দেবে। আমাকে মনোনয়ন দিলে আমি আবারো নেত্রীকে এ আসনটি উপহার দিতে পারবো।
সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বনফুল গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ মোতালেব সিআইপি বলেন, মনোনয়নের বিষয়ে আমি আশাবাদী। কারণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই আমাকে কাজ করতে বলেছেন। ছাত্রলীগ দিয়ে রাজনীতি শুরু করেছি আর বিরতিহীন ভাবে এখনো আছি। আওয়ামী লীগই আমার শেষ ঠিকানা। সাতকানিয়ার প্রত্যেকটি ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ডে আমি নিজে উপস্থিত থেকে সম্মেলন করেছি। নেতা-কর্মীদের সুখে দুঃখে পাশে দাঁড়িয়েছি। মসজিদ, মাদ্রাসায় অনুদান ছাড়াও সকল ধরনের সামাজিক কাজে সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ করে আসছি। লোহাগাড়ায়ও দলীয় নেতা-কর্মীদের সাথে আমার অত্যন্ত সুসম্পর্ক রয়েছে। তিনি আরো বলেন, সাতকানিয়া-লোহাগাড়া ব্যবসায়ীদের এলাকা। চট্টগ্রামস্থ সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার সকল ব্যবসায়ীদের সাথে আমার ঘনিষ্টতা রয়েছে। আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বনফুল ও কিষোয়ানে সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার ৪ হাজারের অধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে। গ্রুপিংয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, আমার সাথে সবার সম্পর্ক রয়েছে। এছাড়া নৌকার সাথে কারো দ্বন্দ্ব নেই। আমি মনোনয়ন পেলে সবাইকে এক সাথে নিয়ে কাজ করতে পারবো। নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দিলে আমি বিজয়ী হতে পারবো।
মনোনয়ন প্রত্যাশী চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি, রূপালী ব্যাংকের পরিচালক ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ নেতা সাংবাদিক আবু সুফিয়ান বলেন, আমি গতবারেও মনোনয়ন চেয়েছিলাম, এবারও চাইবো। আমি রাজনীতিকে সেবা মনে করি। কলেজ জীবন থেকেই ছাত্রলীগ, তারপর আওয়ামীলীগের রাজনীতি করে আসছি। আমি সবাইকে নিয়ে দলের জন্য-সরকারের জন্য কাজে বিশ্বাসী। আমি সব সময় দলের জন্য রাজপথে থাকি। সুখে দুঃখে মানুষের পাশে থাকি। অনলাইনেও দিনরাত দলের এবং সরকারের সাফল্য নিয়ে কাজ করে যাাচ্ছি। যোগ্য মনে করলে নেত্রী এবার আমাকে মনোনয়ন দিবেন। আমাকে মনোনয়ন দিলে জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদি। ১৯৭৩ সালে ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতি শুরু করেছি। এলাকার উন্নয়নে সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। দলের সকল স্তরের নেতা-কর্মীর সাথে আমার সুসম্পর্ক রয়েছে। আমি কোন গ্রুপিংয়ে বিশ্বাস করি না। আমি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কাজ করে যাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, আমি যদি মনোনয়ন না পায় সেক্ষেত্রে নৌকা প্রতীক নিয়ে যেই আসুক তার পক্ষে নিবেদিত ভাবে কাজ করবো।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন বলেন, রাজনীতি আমার কাছে একটি ব্রত। শুধুমাত্র এমপি-মন্ত্রী হওয়ার জন্য আমি রাজনীতি করি না। তারপরও একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের কাছে মানুষের ভালবাসার স্বীকৃতি আদায়ের একমাত্র মাধ্যম হলো নির্বাচন। আমারও একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসাবে এলাকার মানুষের ভালবাসার স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য নির্বাচন করার ইচ্ছা আছে। এছাড়া দলের তৃণমূল নেতা-কর্মীরাও চায় আমি নির্বাচন করি। কারণ দুঃসময়ে তারা আমাকে কাছে পেয়েছে। গ্রুপিংয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি গ্রুপিংয়ে বিশ্বাস করি না। নেতা-কর্মীদের মধ্যে পছন্দের ভিন্নতা থাকতে পারে। আমার বিশ্বাস আমি মনোনয়ন পেলে সবাই ঐক্যবদ্ধ ভাবে আমার পক্ষে কাজ করবে। আর এলাকায় আমার জনপ্রিয়তার বিষয়টি আপনারা খবর নিলেই জানতে পারবেন।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মঈনউদ্দিন হাসান চৌধুরী বলেন, মনোনয়নের ব্যাপারে আমি আশাবাদি। কারণ এ আসনে ১৯৯৬ সালে আমি নির্বাচন করেছি। নির্বাচনে পরাজিত হলেও কখনো মাঠ ছেড়ে যায়নি। সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার প্রত্যেকটি ইউনিয়ন, ওয়ার্ড এবং অলিগলি আমার চেনা। এখানকার তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সাথে আমার একটা নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। দলের সকল স্তরের নেতা-কর্মীর সাথে আমার নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। এলাকায় দলীয় কর্মসূচিগুলোতেও অংশগ্রহণ করছি। গ্রুপিংয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, আমার সাথে কারো গ্রুপিং নেই। আমি নির্বাচন করলে সকল গ্রুপ ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবে। এজন্য আমি মনোনয়ন পেলে এ আসনটি নেত্রীকে উপহার দিতে পারবো।
চট্টগ্রাম জেলা পিপি ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এডভোকেট একেএম সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, মনোনয়নের বিষয়ে আমি শতভাগ আশাবাদি। কারণ আমি ২০০৮ সালে নির্বাচন করেছি। গতবারও মনোনয়ন চেয়েছিলাম। স্বাধীনতার পর এ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের মধ্যে আমিই সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছি। ছাত্রজীবন থেকে এ পর্যন্ত দলের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছি। এলাকার সকল স্তরের নেতা-কর্মীর সাথে আমার অত্যন্ত সুসম্পর্ক রয়েছে। আমাকে মনোনয়ন দিলে আমি এ আসনটি নেত্রীকে উপহার দিতে পারবো।
স্বাচিপ’র কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান বলেন, আমি দীর্ঘ ৩৫ বছর যাবত নিরবচ্ছিন্ন ভাবে রাজনীতি করে আসছি। কখনো পদ-পদবীর তোয়াক্কা করিনি। গত সংসদ নির্বাচনে সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় চরম প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নেত্রীর নির্দেশ মেনে নতুন যোগদানকারী প্রার্থীর প্রধান এজেন্টের দায়িত্ব নিয়ে দলের প্রার্থীকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিয়েছিলাম। তখন অনেক নেতা ভোটের দিন কেন্দ্রও যায়নি। পৌরসভা নির্বাচনেও প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে প্রার্থীকে জিতিয়ে নিজেকে প্রমাণ করেছি। মনোনয়ন পেলে বর্তমান সাংসদ এবং দলীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে সৃষ্ট দূরত্বের কারণে দলের অভ্যন্তরীন সংকট কাটিয়ে বিএনপি-জামায়াত প্রার্থীকে পরাজিত করতে পারবো বলে আমার বিশ্বাস।
এদিকে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুহাম্মদ ইদ্রিচ বলেন, সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় আমিই এখন সবচেয়ে প্রবীন আওয়ামী লীগ নেতা। বিগত ৫৬ বছর ধরে ধারাবাহিক ভাবে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে আসছি। এছাড়া আমি একজন মুক্তিযোদ্ধের সংগঠক ও সক্রিয় মুক্তিযোদ্ধা। এলাকার জনগণের নিকট আমার ক্লিন ইমেজ রয়েছে। দলের পরীক্ষিত ও ত্যাগী নেতা হিসেবে আমি মনোনয়নের দাবীদার। আমি মনোনয়ন পেলে দলের সকল স্তরের নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করবে এবং আমি বিজয়ী হতে পারবো।
দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য মো. এরশাদুল হক ভুট্টো আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দল থেকে মনোনয়ন চাইবেন বলে জানান। তিনি বলেন, আমার জীবন-যৌবন সব রাজনীতিতে ব্যয় করেছি। স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিয়েছি। দলের জন্য নিঃস্বার্থ ভাবে দুর্দিনে কাজ করেছি। কখনো কিছু চাইনি। এখন নেতাকর্মীরা চায়-নির্বাচন করি। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি নির্বাচনের জন্য। আগামী নির্বাচনে দল থেকে মনোনয়ন চাইবো। দলের সভাপতি-প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনোনয়ন দিলে নির্বাচন করবো নইলে দলের জন্য কাজ করবো।
এদিকে, লোহাগাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খোরশেদ আলম চৌধুরী বলেন, আমি নিজে মনোনয়ন চাইব। এটা এলাকার নেতা-কর্মীদের দাবি। আমাকে মনোনয়ন না দিলেও নেত্রী এবং মনোনয়ন বোর্ডের নিকট অনুরোধ করবো বর্তমান সাংসদ আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীকে যেন মনোনয়ন না দেন। তিনি বলেন, আমরা চাই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং কর্মীবান্ধব কোন নেতাকে মনোনয়ন দেয়া হোক। তখন নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে তার পক্ষে ঝাঁপিয়ে পড়বে। তবেই এখানার আওয়ামী লীগ ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পাবে।
সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কুতুব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আমরা চাইবো দল ও তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সাথে সর্ম্পক আছে এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে নির্ভেজাল ভাবে বুকে লালন করে এমন কাউকে মনোনয়ন দেয়া হোক। দলের নেতা-কর্মীদেরকে বাদ দিয়ে আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে বলয় তৈরি করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সবকিছু যারা করছে তাদেরকে বাদ দিয়ে ক্লিন ইমজের প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হোক, তাহলে আমরা সবাই মাঠে ঝাপিয়ে পড়বো নৌকার বিজয়ের জন্য।
লোহাগাড়া-সাতকানিয়ায় সর্বমোট ২০টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা রয়েছে। আসনটিতে বর্তমানে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৮ শ’৯ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৩ হাজার ৭ শ’৩ জন এবং মহিলা ভোটার ১ লাখ ৮৪ হাজার ১ শ’ ৬ জন