চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলায় সাম্প্রতিক টানাবর্ষণ, অতিবর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি পানির ঢলে নিম্নাঞ্চল ব্যাপকভাবে প্লাবিত হয়েছে।
এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বেঁড়িবাধের ভাঙ্গন, খাল ভাঙ্গন ও খাল পাড়বর্তী শতাধিক কাঁচা বসতঘর পানিতে বিলীন হয়ে গেছে। এ টানা বর্ষণে পুরো উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের চলমান অবকাঠামোগত উন্নয়ন কর্মকান্ডের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে।
এ ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে উপজেলায় অবকাঠামো খাতে প্রায় আড়াই কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম রাশেদ।
লোহাগাড়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত অর্থবছরে উপজেলার বড়হাতিয়া, চুনতি, কলাউজান, আধুনগর, আমিরাবাদ, পদুয়াসহ ছয়টি ইউনিয়নে ৪ কি.মি এলাকায় চলমান এইচবিবি (হেরিন বুন বুন) ব্রিক সলিন সড়কের জন্য ১ কোটি ৪৪ লক্ষ ২৮ হাজার ৪৩৮ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।
সাম্প্রতিক টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে নির্মিত এ ৪ কি.মি সড়কের উভয় পাশের মাটি সরে গিয়ে ঢলের পানিতে বিলীন হয়ে গেছে। ফলে এতে অন্তত ১০ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ১২টি কালর্ভাটের এপ্রোস সড়ক পানিতে বিলীন হয়ে অন্তত ১২ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়।
এছাড়া ৮০টি অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি প্রকল্পের (সড়কে মাটির কাজ) বিপরীতে ৩ কোটি ২০ লক্ষ টাকা বরাদ্ধ দেয়া হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে উক্ত প্রকল্পের মাটির কাজ সমূহ তলিয়ে গিয়ে প্রায় ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
তাছাড়াও ১৬৭টি টি.আর প্রকল্পের বিপরীতে ৮০ লক্ষ টাকা বরাদ্ধ দেয়া হয়। এ সব প্রকল্পের কাজ পানিতে তলিয়ে গিয়ে ২৫ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়। উপজেলার ৪৪টি কাবিখা (কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি) প্রকল্পের আওতায় ৪৮ লক্ষ টাকা বরাদ্ধ দেয়া হয়। এ প্রকল্পের অধিকাংশ রাস্তা পানিতে তলিয়ে যায়। এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ১৯টি কাবিখা প্রকল্পের আওতায় ১৩৩ মেট্রিক টন চাল (টাকার অংকে ৫২ লক্ষ টাকা) বরাদ্ধ দেয়া হয়।
এসব প্রকল্পে সড়ক সংস্কারে মাটির কাজ করা হয় কিন্তু পানিতে তলিয়ে গিয়ে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়।
এছাড়াও ৫ মেট্রিক টন চাউলে সদ্য নির্মিত উপজেলার পশ্চিম আমিরাবাদ মোস্তফা বর পাড়ার দক্ষিণে রাস্তার ভাঙ্গন সংস্কার প্রকল্পটি ডলু নদীতে একেবারে বিলিন হয়ে গেছে।
এদিকে, ডলু খালের ভাঙ্গনে সাতগড় এলাকায় ৫ বসতঘর, কুলপাগলী ও হাতিয়াখালের ভাঙ্গনে আধুনগরে খাল পাড়ের প্রায় শতাধিক বসতঘর, থমথমিয়া ও চিয়নখালের বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে বড়হাতিয়ার ৪০ বসতঘর, টংকাবতী খালের ভাঙ্গনে আমিরাবাদ ও চরম্বার প্রায় ৭৭ বসতঘর পানিতে বিলিন হয়ে গেছে।
লোহাগাড়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম রাশেদ জানান, সাম্প্রতিক টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে লোহাগাড়ায় ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। চলমান উন্নয়ন কর্মকান্ড একেবারে ভেস্তে গেছে। সব মিলিয়ে প্রায় আড়াই কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শামীম হোসেন জানান, টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে লোহাগাড়ায় কৃষি সেক্টরে বা ফসলের তেমন কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। বৃষ্টির পূর্বেই ফসলাদি উঠে গেছে।