চলতি মৌসুমে লামা ও আলীকদম উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় সিদ্ধ ভুট্টা বিক্রি করে চলছে চাষীদের জীবন-জীবিকা। অনেকে নিজ জমিতে উৎপাদিত ভুট্টা সিদ্ধ করে বিক্রি করছেন। আবার অনেকেই চুক্তি মূল্যে অন্যের ভুট্টা বিক্রি করে টাকা রোজগার করছেন। কাঁচা ভুট্টাকে হলুদ এবং লবণ দিয়ে সিদ্ধ করার পর ভুট্টা স্থানীয়ভাবে “মক্কাগুলা” হিসেবে নতুন নামে পরিচিতি পায়। শিশু থেকে শুরু করে কিশোর, যুবক, বৃদ্ধসহ সকল স্তরের নারী পুরুষের কাছে রয়েছে এ মক্কাগুলার সমান চাহিদা।
লামা ও আলীকদম উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার সরজমিনে পরিদর্শনকালে সর্বত্রই ফেরী করে এ সিদ্ধ ভুট্টা বা “মক্কা গুলা” বিক্রি করতে দেখা গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মক্কাগুলা বিক্রি করে বর্তমানে চলছে অসংখ্য পরিবারের জীবন-জীবিকা। প্রতিদিন হাজার হাজার টাকার মক্কা গুলা বিক্রি হচ্ছে উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভুট্টা সাধারণত ভাজি করে খাওয়া কিংবা আটা করে রুটি বানিয়ে খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। এ ছাড়া বর্তমানে দেশ- বিদেশের সর্বত্রই এ ভূট্টা দিয়ে পোল্ট্রি খাদ্য তৈরি হলেও কবে থেকে এতদাঞ্চলে ‘ মক্কাগুলা ’ নাম দিয়ে সিদ্ধ করে ভুট্টা খাওয়ার প্রচলন শুরু হয়েছে তা সঠিক করে জানা যায়নি। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, তাদের বাপ-দাদার আমল থেকে দেখে আসছেন ভুট্টা সিদ্ধ করে খায়। তারা ভুট্টাকে “মক্কাগুলা” নামেই বেশি চিনেন।
ইতি পূর্বে উপজাতি সমপ্রদায়ের জুমে উৎপাদিত ভুট্টার কদর ছিল মক্কাগুলা নামে। দিন দিন এর চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে সমপ্রতি বছরগুলোতে উপজেলায় হাইব্রীড জাতের ভুট্টার আবাদ শুরু হয়েছে। লামা উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা রতন কান্তি দেব জানান, চলতি মৌসুমে উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় ১১০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও ভালো হয়েছে। আলীকদম উপ-সহকারি উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা অভিজিত বড়ুয়া জানান, আলীকদম উপজেলায় ৬২ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে। কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় ১৮০টি প্রদর্শনী প্লটের বিপরীতে ৩৫০ জন কৃষককে ভুট্টা বীজ ও প্রয়োজনীয় সার প্রদান করা হয়েছে। তিনি জানান, ক্রমান্বয়ে এ উপজেলায় ভুট্টা চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
জানা গেছে , কেবল খেতেই সুস্বাদু নয়, ভুট্টার রয়েছে নানা পুষ্টিগুণও। প্রতি ১০০ গ্রাম ভুট্টায় ১৯ গ্রাম কার্বোহাইড্রেইট, ২ গ্রাম ফাইবার, ৩ গ্রাম প্রোটিন, ১.৫ এর কম চর্বি এবং ৮৬ ক্যালোরি থাকে। ভুট্টায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে লৌহ বা আয়রন যা রক্তের লোহিত কণার প্রয়োজনীয় খনিজের চাহিদা পূরণ করে। ফলে রক্তশূন্যতা দূর হয়। তবে ভুট্টার কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও রয়েছে বলে জানা গেছে। যেমন ‘ইনজেস্টিবল প্রোটিন’ থাকায় ভুট্টা থেকে অনেক সময় অ্যালার্জি হতে পারে। বেশি পরিমাণে খেলে হজমের সমস্যা দেখা দেয়। কাঁচা ভুট্টা খেলে ডায়রিয়া হতে পারে। অতিরিক্ত ভুট্টা ওজন বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় নুনারঝিরি এলাকার কৃষক মোঃ আবুল হোসেন ৩৩ শতক জমিতে ভুট্টা চাষ করেছেন। তিনি জানান, তার যে পরিমাণ পুঁজি খরচ হয়েছে, উৎপাদিত ভুট্টা বিক্রি করে তার তিনগুণ বেশি অর্থ তিনি আয় করবেন। আলীকদমের চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের রেপার পাড়া বাজার এলাকার জামাল উদ্দিন (৪২) বলেন, কম পয়সায় এর থেকে ভালো খাবার নাই। ১০ টাকা দিয়ে একটি মক্কা গুলা খেলে মজা পাওয়া যায়, পেটও ভরে। কম পয়সায় ক্ষুধা নিবারণের জন্য একটি উৎকৃষ্ট খাবার মনে করে লামা ও আলীকদমের নিম্ন আয়ের মানুষদের কাছে সিদ্ধ ভট্টা বা মক্কাগুলার কদর ক্রমেই বাড়ছে ।