রাঙ্গুনিয়ায় হচ্ছে বিশ্বমানের হাসপাতাল, নার্সিং ইনস্টিটিউট, মেডিকেল কলেজ

সংযুক্ত আরব আমিরাতের শেখ জায়েদ বিন আল নাহিয়ান ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার গুনগুনিয়া বেতাগী এলাকায় নাহিয়ান ফাউন্ডেশনের ১১০ একর পরিত্যক্ত জমিতে বিশ্বমানের বিশেষায়িত হাসপাতাল নার্সিং ইনস্টিটিউট ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ৬৪ শয্যা দিয়ে শুরু করা হলেও ক্রমান্বয়ে তা ১২০ শয্যা করা হবে বলে প্রকল্পটির ডিটেইল প্ল্যানে প্রস্তাব করা হয়েছে। আধুনিক মেটারনিটি সেবা নিশ্চিত করতে একটি অপারেশন থিয়েটারকে সার্বক্ষণিক দুজন সার্জনসহ প্রস্তুত রাখা হবে। অপর অপারেশন থিয়েটার ব্যবহার হবে জেনারেল সার্জারিতে। মা ও শিশুদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হবে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের উন্নত হাসপাতালগুলোর ন্যায় সব ধরনের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা হবে নির্মিতব্য রাঙ্গুনিয়া শেখ জায়েদ বিন আল নাহিয়ান হাসপাতালে। এটিকে বাংলাদেশের অন্যতম বিশেষায়িত জেনারেল হাসপাতালে পরিণত করা হবে। রাঙ্গুনিয়া থেকে নির্বাচিত সাংসদ তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ শেখ জায়েদ বিন আল নাহিয়ান ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেন। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরব আমিরাত সফরকালে সে দেশের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনায় রাঙ্গুনিয়ায় তাদের পরিত্যক্ত ভূমিতে হাসপাতাল নির্মাণের বিষয়টি নজরে আনলে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে আসেন তারা। ২০২০ সাল নাগাদ হাসপাতালটির নির্মাণ কার্যক্রম শুরু করার লক্ষ্য নিয়ে এগুচ্ছে শেখ জায়েদ বিন আল নাহিয়ান ফাউন্ডেশন। রাঙ্গুনিয়ায় তাদের পরিত্যক্ত ১১০ একর জমিতে বিশ্বমানের হাসপাতাল ছাড়াও নার্সিং ইনস্টিটিউট ও মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন সেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। হাসপাতাল, নার্সিং ইনস্টিটিউট ও মেডিকেল কলেজ নির্মাণের জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবি ফান্ড ফর ডেভেলপ্মেন্টের উচ্চ পর্যায়ের দুই সদস্যের প্রতিনিধি দল মঙ্গলবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাঙ্গুনিয়াস্থ নাহিয়ান ফাউন্ডেশনের প্রকল্প এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করেন। সারাদিন তারা প্রকল্প এলাকার বিভিন্ন খুঁটিনাটি ঘুরে দেখেন। আবুধাবি ফান্ড ফর ডেভেলপ্মেন্টের প্রজেক্ট ম্যানেজার আলী হুমাইদ আলদিরি, একই প্রতিষ্ঠানের প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার আবদুল্লাহ মুবারক আল মেহরিবী প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। তাদের সাথে বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব মো. জসিম উদ্দিন, রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমান, সহকারী ভূমি কমিশনার পূর্বিতা চাকমা, উপজেলা প্রকৌশলী দিদারুল আলম এবং নাহিয়ান ট্রাস্টের প্রতিনিধি উপস্থিত থেকে প্রকল্পের বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেন। পরিদর্শনকালে স্থানীয় সাংবাদিক, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ইদ্রিছ আজগর চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার শামসুল আলম তালুকদার, পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফুল ইসলাম চৌধুরী, পোমরা আ.লীগের সভাপতি ছৈয়দুল আলম, সম্পাদক জাহেদুল ইসলামসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সাথে কথা বলেন তারা। এসময় হাসপাতালের সম্ভাব্যতা যাচাই করলে বিভিন্ন তথ্য দিয়ে পরিদর্শন টিমকে সহায়তা করেন তারা। আমিরাতের প্রতিনিধিরা হাসপাতালসহ বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠান নির্মাণে স্থানীয়দের আগ্রহে অভিভূত হন। এর আগে ২০১৪ সালে আরব আমিরাতের শীর্ষ স্থানীয় নির্মাণ সংস্থা আরটেক এর প্রধান প্রকৌশলী আসাদ আল খিলালি ও প্রকৌশলী ওয়ায়েল প্রকল্পটি পরিদর্শন করেছিলেন। তারা ১১০ একরের প্রকল্প এলাকায় ২৫ হাজার স্কয়ার ফুটের হাসপাতাল নির্মাণের স্থান নির্ধারণ করেছিলেন। এরপর তারা হাসপাতালের অবকাঠামো নির্মাণের জন্য আরব আমিরাত থেকে জাহাজে করে মালামাল চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে কর্ণফুলী নদী পথে রাঙ্গুনিয়ায় আনার জন্য উপজেলার গোডাউন এলাকায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের জেটি পরিদর্শন করেছিলেন। দীর্ঘদিন পর আবারো আমিরাতের প্রতিনিধি দল পরিদর্শনে আসায় প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখবে বলে স্থানীয়রা আশা করছেন।
সংশ্লিস্ট সূত্র জানায়, ১৯৮৯ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের আমন্ত্রণে চট্টগ্রামে আসেন তখনকার আরব আমিরাতের বাদশা শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ান। এসময় তিনি হেলিকপ্টারে চড়ে চট্টগ্রামের প্রকৃতি ও রাঙ্গুনিয়ায় স্থাপিত রওশন পল্লী দেখার সময়ে এরশাদের কাছে রাঙ্গুনিয়ায় কর্ণফুলী নদীর তীরে প্রাকৃতিক পরিবেশে সুবিশাল জায়গাটি দেখে সেখানে একটি প্রাসাদ ও অবকাশ যাপনকেন্দ্র নির্মাণের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। আমিরাতের বাদশার পছন্দ ও ইচ্ছে অনুযায়ী এরশাদ সরকার মাত্র ১০১ টাকা প্রতীকি মূল্যে তাকে রাঙ্গুনিয়ার পোমরা এলাকায় ১১০ একর ওই জমিটি হস্তান্তর করেন। এরপর জায়গাটিতে সুবিশাল তিনটি তোরণসহ সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করলেও প্রাসাদসহ অবকাশ যাপনকেন্দ্র নির্মাণ করা যায়নি। কিছুদিন পর বাদশা শেখ জায়েদের মৃত্যু হলে প্রকল্পটি পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকে। দীর্ঘদিন পর রাঙ্গুনিয়া থেকে পরপর তিনবার নির্বাচিত এমপি বর্তমান তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ২০১৩ সালে শেখ নাহিয়ান পরিবারের সাথে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগের মাধ্যমে জমিটিতে বিশ্বমানের হাসপাতালসহ মেডিকেল কলেজ ও নার্সিং ইনস্টিটিউট নির্মাণের ব্যাপারে রাজি করান।
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা এমরুল করিম রাশেদ জানান, ১৯৯১ সাল থেকে অনেকটা পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকা আরব আমিরাতের প্রয়াত বাদশা আল নাহিয়ানের প্রকল্পে বিশ্বমানের হাসপাতাল নির্মাণসহ বিভিন্ন সেবামূলক কার্যক্রম চালাতে নাহিয়ান পরিবারের সাথে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করেন বর্তমান তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি। একই ধারাবাহিকতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের বিভিন্ন ধাপ এগুচ্ছে। এবার প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নে মন্ত্রী তৎপর রয়েছেন বলে তিনি জানান।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি আরব আমিরাত সফরকালে বৈঠকে রাঙ্গুনিয়ায় তাদের পরিত্যক্ত জায়গায় হাসপাতাল নির্মাণ করার অনুরোধ জানালে তারা বিশ্বমানের হাসপাতাল নির্মাণের স্থির সিদ্ধান্তের কথা মাননীয় প্রধান মন্ত্রীকে জানান। তারই অংশ হিসেবে আমিরাতের আবুধাবি ফান্ড ডেভেলপমেন্টের প্রতিনিধি দল প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেন। ক্রমান্বয়ে সেখানে একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল, নার্সিং ইনিস্টিটিউট ও মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন সেবাধর্মী কর্মকা-ের পূর্ণাঙ্গ একটি কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে বলে প্রতিনিধি দল নিশ্চিত করেছেন বলে তিনি জানান।