রাজশাহীর খেলোয়াড়েরা আজ খেলতে নেমেছিলেন জার্সিতে মায়েদের নাম লিখে। এটিই তাঁদের ভীষণ উজ্জীবিত করেছে। সেই অনুপ্রেরণায় তাঁরা হারিয়ে দিয়েছেন শক্তিশালী ঢাকাকে।
‘অনিশ্চয়তার খেলা।
মায়ের মমতা মেখে গায়
রাজারা কেমন জিতে যায়!’
মুগ্ধ করা এই পঙক্তিমালা ক্রীড়া লেখক ও কোচ জালাল আহমেদ চৌধুরীর। আজ রাজশাহী কিংস জেতার পর ফেসবুকে লিখেছেন তিনি। টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত খেলছে ঢাকা ডায়নামাইটস। ঢাকা পর্বে নিজেদের চার ম্যাচের চারটিই জিতেছে। ঢাকা মাটিতে নামল সিলেটে এসে রাজশাহীর কাছে হেরে। অসাধারণ ব্যাটিং লাইনআপ থাকার পরও রাজশাহীর দেওয়া ১৩৭ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে পারেনি গতবারের রানার্সআপরা।
উজ্জ্বল পরিসংখ্যান আর শক্তিমত্তায় এগিয়ে থেকেই ম্যাচটা খেলতে নেমেছিল ঢাকা। কিন্তু রাজশাহী যে আজ অন্য মন্ত্রে নেমেছিল মাঠে। রাজশাহীর সব খেলোয়াড়ের সঙ্গে ছিলেন যে তাঁদের মায়েরা। কালই রাজশাহী ফ্র্যাঞ্চাইজি ঘোষণা করে, মায়েদের প্রতি সম্মান জানাতে আজকের ম্যাচটা তারা খেলতে নামবে জার্সিতে নিজ নিজ মায়ের নাম লিখে। ম্যাচের আগে যে খেলোয়াড় তালিকা সরবরাহ করা হয়েছে সেখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে কার মায়ের নাম কী।
মা, মমতাময়ী যখন মননে আর অনুপ্রেরণায়, বাড়তি একটা শক্তি যেন ভর করেছিল রাজশাহীর খেলোয়াড়দের ওপর। এই বিপিএলে নিঃসন্দেহে সবচেয়ে ফেবারিট ঢাকা ডায়নামাইটস। দলটাও কী দুর্দান্ত ছন্দে। রাজশাহী এক ম্যাচ জেতে তো এক ম্যাচ হারে। দলটির খেলোয়াড়দের মায়েরা প্রশ্ন করতেই পারতেন, ‘তোমরা কি পারবে ওদের হারাতে?’ উত্তরটা মিরাজ-মোস্তাফিজরা রবি ঠাকুরের কবিতার সঙ্গে মিলিয়েই দিয়ে দিয়েছেন, ‘আমি বলছি ভয় করো না মা গো।’
দলপতি মেহেদী হাসান মিরাজ তো কাল আনুষ্ঠানিকভাবেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, ‘আমরা ম্যাচটা জিততে চাই।’ অলক্ষ্যে মায়েরা উজ্জীবিত করেছেন বলেই রাজশাহী ১৩৬ রানের ছোট পুঁজি নিয়েও জিতেছে। আর সেই জয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন আরাফাত সানি। বাঁ হাতি এই স্পিনার ৪ ওভারে ১ মেডেন দিয়ে ৮ রানে পেয়েছেন ৩ উইকেট।
জার্সিতে মায়ের নাম লেখা বিশ্ব ক্রিকেটে বিরল না হলেও বিপিএলে প্রথমবারের মতো তো অবশ্যই। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী দলের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসা আরাফাত সানি জয়টা উৎসর্গ করলেন মায়েদের প্রতি, ‘মায়ের নাম নিয়ে খেলা সব সময় গর্বের বিষয়। আমরা শুরুতে জানতাম না। আমাদের ম্যানেজমেন্টের আগ থেকে একটা পরিকল্পনা ছিল এটা নিয়ে। সবচেয়ে বড় কথা, আমরা আজকের ম্যাচটি জিতেছি। আর আজই মায়ের নামে জার্সি পরে ম্যাচ খেলেছি। অবশ্যই সব মাকে জয়টা উৎসর্গ করেছি। ওপরওয়ালা আমাদের মায়েদের দোয়া কবুল করেছেন বলে আমরা জিতেছি। যেহেতু ঢাকা খুব ভালো খেলছে। ওরা টানা জিতে আসছে। এ দলের সঙ্গে খেলাও অনেক চাপের। বড় একটা ম্যাচে জিতেছি, এটা আমাদের বাড়তি পাওয়া।’
রাজশাহী যদি জয়ের ধারাটা ধরে রাখতে পারে তাদের মায়েরাও নিশ্চয়ই আরও খুশি হবেন।