মংডুর নাইক্ষ্যংদিয়া বিচে আবারো জড়ো হচ্ছে রোহিঙ্গা!

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা নির্যাতন শুরু হওয়ার এক বছর অতিক্রান্ত হলেও কোন পরিবর্তন দেখছেন না তারা। বরং সেখানে বিভিন্নভাবে নিগৃহীত হচ্ছেন তারা। মিয়ানমারের রাখাইনে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা এখনও আতংক উৎকন্ঠায় দিনাতিপাত করছে। চাষবাস তো দূরের কথা, এক স্থান থেকে অন্য স্থানেও যেতে পারছেন না। নেই কাজকর্ম, আর্থিক অভাব অনটন চলছে। জমানো ধান চাউল প্রায় শেষ। তাই এখন বিভিন্নভাবে বিদেশে অবস্থানরত আত্মীয়–স্বজন ও মানবাধিকার সংগঠনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সহযোগিতা কামনা করেছেন রাখাইনের রোহিঙ্গারা। সেখানে আওয়াজ উঠেছে ঘরবাড়ি ছেড়ে রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পে থাকতে হবে। কেন নিজ দেশে অনেকটা বন্দি জীবন যাপন করবে এমন মনোভাব থেকে কেউ কেউ বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার জন্য নতুন করে চিন্তা ভাবনা শুরু করেছে।

সৌদি আরবে অবস্থানরত রাখাইনের পাত্তরী কিল্লা গ্রামের মো. নূর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ ধরনের সংবাদ পোস্ট করে বলেছেন, হাজার খানেক রোহিঙ্গা গত কয়েকদিনে রাখাইনের মংডু শহরের দক্ষিণে নাইক্ষ্যংদিয়া সী–বিচে অবস্থান নিয়েছে। নাইক্ষ্যংদিয়ার কাছাকাছি রয়েছে বাংলাদেশের টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ ও সেন্টমার্টিন্স। সহজেই সাগর বা নদী পাড়ি দিয়ে তারা বাংলদেশে ঢুকে যেতে পারে। বুথিডং এলাকার সিন্ডিপ্রাং গ্রামের মো. জোবাইর জানিয়েছেন, ওখানে খাবার সংকট দেখা দিয়েছে। চিকিৎসা সেবা পাওয়া যাচ্ছে না। এভাবে কিছু দিন থাকলে মৃত্যু অবধারিত।

মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা নির্যাতনের এক বছর পূর্তি হতে না হতেই আবারো ফের নতুন করে রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। রাখাইনের বিভিন্ন গ্রামে যেসব রোহিঙ্গা এখনো রয়ে গেছে তাদেরকে বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন ও দেশ ত্যাগে চাপ প্রয়োগ করছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। এরই প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা রাখাইন ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে নাফ নদীর মিয়ানমারে সীমান্ত এলাকা নাইক্ষ্যংদিয়া নামক চরে দু’দিন ধরে তাঁবু করে অবস্থান করছে বলেও জানা গেছে।

রোহিঙ্গা সূত্রগুলো থেকে জানা যায়, গত বছর নির্মম নির্যাতনের মুখে পাহাড়ের পশ্চিম অংশের ঢংখালী, গর্জনদিয়া, গদুছড়া, খুইন্যা পাড়া, মন্নি পাড়া, সাইরা পাড়া, সিকদার পাড়া, ফাতনজা, কিলায় ঢং , হাচ্ছুরতা এবং পাহাড়ের পূর্ব পাড়ের সিন্দিপ্রাং ও পুইমালীসহ ৩’শতাধিক গ্রামের প্রায় ৭ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসলেও সে সময় বিশেষ করে শহর এলাকায় বসবাসকারী রোহিঙ্গারা পালিয়ে না এসে সেখানেই অবস্থান করছিলেন। কিন্তু গত ২৩ আগস্ট থেকে রাখাইন রাজ্যের পাহাড়ের পূর্ব পাড়ের রোহিঙ্গা অধ্যূষিত এলাকা আলিয়ং, গুদামপাড়া, জংশং, পুইমালী ও সিন্দিপ্রাং এলাকায় যেসব রোহিঙ্গা বসতি রয়েছে সেখানে মিয়ানমার সেনাবাহিনী তাদের উপর নতুন করে নির্যাতন চালাচ্ছে। শুধু তাই নয়, সেখানকার রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন ধরনের হুমকি–ধমকিসহ তাদের বাড়ির গবাদি পশু ও গোলার ধান লুট করে নিয়ে যাওয়ার খবরও পাওয়া গেছে। পাশাপাশি ওইসব রোহিঙ্গাদের রাখাইন ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে যেতেও নির্দেশ দিচ্ছে বলে জানা যায়।

মিয়ানমার সেনাদের এমন আচরণে সেখানে বসবাসরত রোহিঙ্গারা তাদের উপর আবারো সেনা ও মগদের পরিকল্পিত নির্যাতনের আশংকা করছে। রাখাইনে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের বরাত দিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা কয়েকজন রোহিঙ্গা জানান, নতুন করে শুরু হওয়া নির্যাতন ও হুমকির মুখে ইতোমধ্যে প্রায় সহস্রাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে নাইক্ষ্যংদিয়া নামক চরে জড়ো হয়েছে। গত দু’দিনে নাইক্ষ্যংদিয়ায় জড়ো হওয়া রোহিঙ্গাদের সংখ্যাও বাড়ছে। তারা যে কোন মুহূর্তে বাংলাদেশে ঢুকে পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এদিকে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নাফ নদ ও টেকনাফ সীমান্তে বিভিন্ন পয়েন্টে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। বিশেষ করে নাফ নদীতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও কোস্টগার্ডের টহল জোরদার করা হয়েছে।

টেকনাফ বিজিবি ২ ব্যাটলিয়ন অধিানায়ক লে. কর্ণেল মো. আছাদুদ জামান চৌধুরী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, মিয়ানমারের সীমান্তে কয়েকশ রোহিঙ্গা জড়ো হয়েছে এমন সংবাদ বিভিন্ন মাধ্যমে আমাদের কাছে এসেছে। তবে যাতে অবৈধ অনুপ্রবেশ ঘটতে না পারে সে লক্ষ্যে সীমান্ত রক্ষী বাহিনী তৎপর রয়েছে।