ম্যাচটা যতটা না ছিল ব্রাজিল-জার্মানির তার থেকে বেশি ছিল বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে জার্মানির কাছে ১-৭ গোলের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিয়ে। ব্রাজিল কি পারবে প্রতিশোধ নিতে? এমন কথাই ঘুরপাক খাচ্ছিল ফুটবলপাড়ার সর্বত্র। জার্মানির অসাধারণ দলকে টপকে সেই অসাধ্য কাজটাই সাধ্য করলেন ব্রাজিলের ফুটবলাররা। জার্মানিকে তাদের মাটিতেই ০-১ গোলের মধুর পরাজয়ের স্বাদ দিল সেলেসাওরা।
এর মধ্য দিয়ে ঘরের মাঠে চার বছর আগে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে জার্মানদের কাছে ৭-১ গোলে পরাজয়ের ক্ষতে কিছুটা হলেও প্রলেপ দিয়েছে নেইমারবিহীন ব্রাজিল।
বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের কাছে চার বছর আগের সেই পরাজয় ভূতের মতো তাড়া করছিলো পাঁচ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের। সেই হারের ক্ষত শুকাতেই এতোদিন মরিয়া ছিলো ব্রাজিল। কিন্তু গত চার বছরের মধ্যে সেই সুযোগ আর হয়ে উঠেনি। গত বিশ্বকাপের পরে এটাই ছিলো জার্মানির সঙ্গে ব্রাজিলের প্রথম দেখা। হয়তো প্রীতি ম্যাচ বিশ্বকাপের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ নয়। তবে বিশ্বকাপের আগে দলের এমন জয় তো অবশ্যই স্বস্তির নেইমার সতীর্থদের কাছে। চার বছরের পরাজয়ের ভূতকে তাড়াতে সফল হলো তিতের ছাত্ররা।
প্রথম প্রীতি ম্যাচে রাশিয়ার বিপক্ষে জয় দিয়ে শুরু করে ব্রাজিল। সেই জয়ের পরের দ্বিতীয় ম্যাচেরও জয়ের গতি ধরে রাখলো ব্রাজিল। অপরদিকে গত শুক্রবার স্পেনের সঙ্গে ড্র করছিল জার্মানি। চারদিন পরে আবারও হেরে অনেকটা হতাশায় পড়ে গেলো তারা।
স্পেনের বিপক্ষে একাদশ থেকে সাতজনকে বসিয়ে এদিন একাদশ সাজান জার্মান কোচ জোয়াকিম লো। সর্বশেষ জার্মানির কাছে ২০১৪ সালে হারার পর আর কোনো ইউরোপিয়ান দলের সাথে হারেনি ব্রাজিল।
মঙ্গলবার বার্লিনের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে নেইমারকে ছাড়াই খেলতে নামে তিতের দল। ম্যাচের শুরু থেকেই দুই দল আক্রমণ করে খেলতে থাকে। ম্যাচের ৯ মিনিটে ক্রুসের ফ্রি কিকে গোমেজ মাথা ছোঁয়ালে এলিসন ক্ষিপ্রতার সাথে সেটিকে রুখে দেন।
এরপর ১১তম মিনিটে সুযোগ পেয়ে ডি-বক্সে একা পেয়ে ঢুকে পড়েন বর্তমানে ফর্মে থাকা ফিলিপে কুতিনহো। কিন্তু তিনি শট না নিয়ে পাওলিনিয়োকে পাস দিয়ে দিলে সেই যাত্রায় ব্যর্থ হয় ব্রাজিল।
তারপরে বেশ সময় ধরে চাপ কাটিয়ে ম্যাচে লড়াই করে ব্রাজিল। কিন্তু তাদের পরিকল্পনাবিহীন শটগুলো বারবারই হতাশ করার মত ছিল। ম্যাচের ৩৬তম মিনিটে প্রতিপক্ষের সুযোগ পেয়ে ডি-বক্সে বিনা বাধায় ঢুকে পড়েন গাব্রিয়েল জেসুস। কিন্তু গাব্রিয়েলের উড়িয়ে মারা শট লক্ষবেধ করতে ব্যর্থ হয়।
তার এক মিনিট পরে ব্রাজিল সতীর্থদের আর হতাশ হতে দেননি গাব্রিয়েল জেসুস। ডান দিক থেকে উইলিয়ানের ক্রসে জোরালো হেডে দলের হয়ে প্রথম গোলটি করেন এই ম্যানচেস্টার সিটির ফরোয়ার্ড। জার্মান গোলরক্ষক কেভিন ট্র্যাপ হাত দিয়ে বল প্রায় আটকে দিয়েছিলেন। কিন্তু পেছনে পড়ে যাওয়ায় পারেননি ব্রাজিলের গোল ঠেকাতে। ফলে ১-০ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় তিতের শিষ্যরা।
দ্বিতীয়ার্ধের দশম মিনিটে দারুণ পাসিং ফুটবলে সুযোগ তৈরি করে ব্রাজিল। রক্ষণের বাধা এড়িয়ে কুতিনহোর বাড়ানো বল পেয়ে শট নেন উইলিয়ান। কিন্তু গোলমুখে ঠেকিয়ে দেন ডিফেন্ডার আন্তোনিও রুডিগার। কিছুক্ষণ পর দারুণ পজিশনে থেকে লক্ষ্যভ্রষ্ট হেডে হতাশ করেন জেসুস।
গোল পেতে মরিয়া হয়ে শেষ দিকে একটানা আক্রমণ করে যায় স্বাগতিকরা। ভালো কয়েকটি সুযোগও তৈরি করে তারা। কিন্তু পুরোপুরি রক্ষণাত্মক হয়ে পড়া ব্রাজিলিয়ানদের সামনে সুবিধা করতে পারেনি।
যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে উইলিয়ান ড্রাক্সলারের দূরপাল্লার শট আলিসন ফিস্ট করে ফেরালে হার নিয়ে মাঠ ছাড়ে চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন জার্মানি।
দুই পক্ষের তুমুল লড়াই শেষের দিকে কেউ আর সুযোগ তৈরি করতে পারেনি। যার কারণে ১-০ গোলের ব্যবধানের জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে ২০০২ সালের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।
এরই সঙ্গে তাদের টানা ২২ ম্যাচ অপরাজিত পথচলায় ছেদ পড়লো। অন্যদিকে, জয়ের ধারা ধরে রাখলো ব্রাজিল। শেষ তিন ম্যাচে জয়সহ এই নিয়ে মোট।