টানা ভারি বৃষ্টিতে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম ও এর আশপাশের এলাকার অনেক সড়ক-অলিগলি পানিতে তলিয়ে গেছে। নিচু এলার বসতিতেও পানি ঢুকে পড়েছে। সব থেকে বেশি প্লাবিত হয়েছে সীতাকুন্ডের নিম্নাঞ্চল। এ ছাড়া রাউজান ও ফটিকছড়ি উপজেলার বেশকিছু এলাকাও এখন পানির নিচে।
সোমবার (২৩ জুলাই) গভীর রাত থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টি মঙ্গলবার (২৪ জুলাই) বিকেল পর্যন্তও চলছে। এই বৃষ্টিকে ভারি বর্ষণ বলছে আবহাওয়া অফিস।
নগরীর পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ডিউটি অ্যাসিস্ট্যান্ট মো. ওবায়দুল্লাহ জানান, মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ৯০ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এই বৃষ্টিপাত বুধবার (২৫ জুলাই) পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে, টানা বৃষ্টির মধ্যে ভোর ৪টা ৪১ মিনিটে সাগরে জোয়ার তৈরি হয়। এরপর ভোর থেকেই নগরীর নিচু এলাকার মূল সড়ক ও অলিগলি ডুবতে শুরু করে।
নগরীর হালিশহর, আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা, মুরাদপুর, ষোলশহর দুই নম্বর গেইট, বাকলিয়া, চকবাজার, প্রবর্তক মোড়, বাদুরতলা, বহদ্দারহাটসহ বিভিন্ন এলাকা কোথাও হাঁটু পানি, কোথাও কোমর পানিতে ডুবে আছে।
জলমগ্ন শহরের বিভিন্ন সড়ক দিয়ে যন্ত্রচালিত ছোট যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। বাস, প্রাইভেট কারসহ বড় যানবাহন চলাচলেও বেগ পেতে হচ্ছে। এজন্য বিভিন্ন সড়কে মারাত্মক যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে নগরীর হালিশহর থেকে কাজির দেউড়িতে আসার জন্য রিকশায় ওঠেন কর্মজীবী নারী আয়শা পূর্ণ। রিকশা পানি ঠেলে কিছুদূর যাবার পর বিকল হয়ে যায়।
আয়শা পূর্ণ বলেন, এক কিলোমিটারেরও বেশি পথ পানির ভেতরে হেঁটে উঁচু সড়কে ওঠার পর একটা সিএনজি অটোরিকশা পেয়েছি। সেটাতে অফিসে এসেছি।
নগরীর মুরাদপুর এলাকা ভোর থেকে ঠাঁই জলমগ্ন হয়ে আছে। মুরাদপুর এলাকায় কর্মজীবীদের অফিসে যেতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। স্কুলের ছাত্রছাত্রী ও তাদের অভিভাবকদেরও পড়তে হয় দুর্ভোগে।
নগরীর বাকলিয়ায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়ায় সেগুলো নির্ধারিত সময়ের আগে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে, জেলার সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ড, বাঁশবাড়িয়া, মুরাদপুর, ভাটিয়ারি, পৌর সদরের বিভিন্ন এলাকা পানিতে প্লাবিত হয়েছে।
পৌর সদরের বাসিন্দা সাংবাদিক মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, রাস্তাঘাট, স্কুলকলেজ এমনকি ঘরের ভেতরেও পানি ঢুকে পড়েছে। বিভিন্ন শিল্পগ্রুপ সীতাকুণ্ডে নির্বিচারে পাহাড় কাটছে। এর ফলে পাহাড়ি ঢলের জায়গা সংকুচিত হয়ে পানি সরাসরি বসতিতে এসে যাচ্ছে।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) হাবিবুর রহমান বলেন, সীতাকুণ্ডে পানি জমলেও বেশিক্ষণ থাকে না। রাউজান ও দফটিকছড়িতে পানি উঠছে। সাতকানিয়া-চন্দনাইশ নিয়েও আশঙ্কা আছে। তবে সড়ক-মহাসড়কগুলো এখনও ঠিক আছে।
এদিকে, টানা বৃষ্টিতে পাহাড় ধসের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসরতদের সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান।