গ্লাসগো থেকে পর্তুগালের রাজধানী লিসবনে যাওয়ার সময় আকাশপথে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়া আফ্রিকান শিশুর পাশে দাঁড়িয়ে শিশুটির মা এবং বিমানভর্তি যাত্রীদের উৎকণ্ঠার অবসান ঘটালেন চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার সন্তান ডাঃ ফরহাদ উদ্দিন হাসান চৌধুরী মারুফ।
রোববার গ্লাসগো থেকে পর্তুগালের রাজধানী লিসবনের পথে হঠাৎ বিমানের ভিতর ৬ মাস বয়সী আফ্রিকান কন্যাশিশু অসুস্থ হয়ে পড়ে। বিমানে বাচ্চাটির শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় এবং মুখে ফেনা চলে আসে। এ অবস্থায় বিমানের ভিতর বাচ্চার মা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মাঝে কান্নার রোল পড়ে যায়। উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে বিমানের অন্যান্য যাত্রী ও ক্রুগণ। দিকবিদিক ছুটোছুটির এ সময়টাতে একজন বিমান-ক্রু এনাউন্স করে জানতে চাইলেন বিমানযাত্রীদের মাঝে কোনো চিকিৎসক আছে কিনা?
আর তখনই বাচ্চাটির কাছে ছুটে যান ওই বিমানের যাত্রী চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার সন্তান ডাঃ ফরহাদ উদ্দিন হাসান চৌধুরী মারুফ। তিনি পরীক্ষা করে দেখলেন বাচ্চাটি দুধ খাওয়ার পরপরই শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছে। দেখলেন বাচ্চাটির অন্য কোনো খারাপ লক্ষণ আছে কিনা। কিন্তু না। বাচ্চাটিকে সঠিক পজিশনে বুকের দুধ না খাওয়ানো এবং অধিক উচ্চতায় বাতাসের তারতম্যের জন্য বাচ্চাটির এই অবস্থা তৈরি হয়েছে পড়ে বলে নিশ্চিত হন ডা. মারুফ।
এরপর ডা. মারুফ বাচ্চাটিকে সঠিক পজিশন করার পর ধীরে ধীরে শ্বাসকষ্ট কমে যায় এবং সুস্থ হয়ে উঠে। বাচ্চার মায়ের মুখেও হাসি ফুটে ওঠে। সেই সাথে বিমানের সব যাত্রী আর ক্রুরাও স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেন।
বিমান-স্টাফ ও যাত্রীদের অভিনন্দনে ভাসতে থাকেন ফরহাদ উদ্দিন হাসান মারুফ। এরমধ্যেই সবাই জেনে গেছেন মারুফ বাংলাদেশের সন্তান। তাই সবার মুখে মারুফের প্রশংসার পাশাপাশি উচ্চারিত হয়েছে বাংলাদেশের নামও।
এ নিয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন ডা. ফরহাদ উদ্দিন হাসান চৌধুরী মারুফ। সোমবারে ভোরে দেয়া স্ট্যাটাসে এমন একটি ঘটনায় পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ পাওয়ায় সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। এদিকে, ফেসবুক বন্ধু ও শুভানুধ্যায়ীদের অভিনন্দনে ভাসছে ডা. মারুফের ফেসবুক ওয়াল। সেখানে তাকে ‘চট্টগ্রামের মানবিক সন্তান’ চট্টগ্রাম তথা ‘বাংলাদেশের গর্ব’ উল্লেখ করে মারুফের মানবিকতার ভূয়শী প্রশংসা করতে দেখা যায় অনেককেই।
প্রসঙ্গত, ডা. ফরহাদ উদ্দিন হাসান চৌধুরী মারুফ চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার বিশিষ্ট এ্যাডভোকেট মরহুম মোক্তার আহমদ চৌধুরীর সন্তান ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাঈনুদ্দিন হাসান চৌধুরীর ছোটভাই। তিনি সাতকানিয়া হাইস্কুল থেকে এসএসসি এবং ঢাকা নটরডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করার পর সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন মারুফ। সেখানে ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। নজর কাড়েন আজকের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতসহ সিলেটের শীর্ষ আওয়ামী লীগ নেতাদের।
ডাক্তারি পাশ করে ঢাকা ও চমেক হাসপাতালে সহকারি রেজিষ্টার হিসেবে কিছুদিন দায়িত্বপালন করেন মারুফ। বর্তমানে তিনি যুক্তরাজ্যের লিবারপুল স্কুল অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিন থেকে চিকিৎসাবিজ্ঞানে উচ্চতর ডিগ্রি নিচ্ছেন।