ক্রিড়া ডেস্ক: মিরপুর টেস্টের প্রথম সেশনের খেলা তখনো শেষ হয়নি। ততক্ষণে বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্স ছাপিয়ে আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে ওঠেন সাদমান ইসলাম অনিক। হবেন নাই বা কেন? সৌম্য সরকারের সঙ্গে ইনিংস উদ্বোধন করতে নেমে মিরপুরের শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে যে অনিন্দ্য সুন্দর সব শটের পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন তরুণ এই ব্যাটসম্যান।
অভিষেক ম্যাচেই ভক্ত-সমর্থক থেকে শুরু করে ক্রিকেটপ্রেমীদের মন জয় করে নেওয়া সাদমান ক্রিকেটার হওয়ার মন্ত্রটা পেয়েছেন মূলত বাবা শহিদুল ইসলামের কাছ থেকে। কেবল তাই নয়, বাবার দেখানো পথে হেঁটে পেয়েছেন সাফল্য। শুক্রবার প্রথমদিনের খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই জানিয়েছে বাঁহাতি এই ওপেনার।
এ প্রসঙ্গে সাদমান বলেন, ‘বাবার ভূমিকা অবশ্যই আছে। আব্বু সব সময়ই ক্রিকেটে সহযোগিতা করেছে। আমি সব সময় ক্যাম্পে যেতাম। অনূর্ধ্ব-১৫ ও ১৭ ক্যাম্পে সব সময় আমাকে নিয়ে যেত। তখন আমি ছোট ছিলাম। তখন থেকেই আমার ইচ্ছা ছিল খেলোয়াড় হবো।’
শহিদুল ইসলামের পরিচয় তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) গেম ডেভেলপমেন্ট বিভাগের সহকারী ব্যবস্থাপক। ১৯৯৮ সাল থেকে বিসিবির সঙ্গে সম্পৃক্ত তিনি। ২০০৪ থেকে কর্মরত গেম ডেভেলপমেন্ট বিভাগে। তার কাজ বয়সভিত্তিক ক্রিকেট পরিচালনা, ক্রিকেটার তুলে আনা এবং পরিচর্যা করে জাতীয় দলের জন্য প্রস্তুত করা।
সাদমানও দীর্ঘ সময় এই প্রক্রিয়ার অধীনে ছিলেন। তবে অবাক করা ব্যাপার হল, বিসিবির অনেকেই জানতেন না, সাদমান-শহীদুল সম্পর্কে বাবা-ছেলে। চার বছরেরও বেশি সময় বাবার অধীনে ছিলেন সাদমান। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে ছেলের সঙ্গে শুরু থেকেই দূরত্ব বাজায় রেখে গেছেন শহীদুল ইসলাম।
ছেলেকে অনুপ্রেরণার যুগিয়েছেন মাঠের বাইরে থেকে। বাবার কাছ থেকে ক্রিকেটার হওয়ার যে মন্ত্র ছোটবেলায় পেয়েছিলেন সেটা এখনও অব্যাহত আছে জানিয়ে তরুণ এই ক্রিকেটার বলেন, ‘যেভাবে আব্বু খেলার জন্য বলছে, আমি একাডেমি কিংবা স্কুল ক্রিকেট থেকে ওভাবে তৈরি হয়েছি। তিনি আমাকে অনেক সমর্থন করেছেন খেলার জন্য। কীভাবে খেলতে হবে, কীভাবে ক্রিকেটারদের লাইফ সেট করতে হয় সেগুলো আমাকে এখনো বলে। নিজেকে চেষ্টা করি ওভাবে রাখার।’
চট্টগ্রাম টেস্টের জন্য শুরুতে ১৩ সদস্যর দল ঘোষণা করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। দুদিন পর হঠাৎ করেই দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয় সাদমানকে। উইন্ডিজের বিপক্ষে দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টে বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানের অভিষেক না হলেও ঢাকা টেস্টে তার অভিষেক একরকম নিশ্চিত হয়ে যায়।
হলোও তাই। ৯৪তম ক্রিকেটার হিসেবে টেস্ট ক্যাপ পান তরুণ এই ব্যাটসম্যান। মাঠে নেমেই চমক উপহার দেন। প্রথম বল থেকেই টেস্ট মেজাজে খেলতে থাকা বাঁহাতি এই ওপেনার শট খেলছেন বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে। ২৪ রানের জন্য সেঞ্চুরি না পাওয়ার আক্ষেপ নিয়ে মাঠ ছাড়লেও ২৪ বছর বয়সী এই তরুণ রাঙিয়েছেন নিজের অভিষেক ম্যাচ।
১৩তম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে অভিষেক ম্যাচের প্রথম ইনিংসেই তুলে নিয়েছেন হাফ সেঞ্চুরি। আউট হওয়ার আগে ১৯৯ বলে ছয় চারে খেলেন ৭৬ রানের অনবদ্য ইনিংস। অভিষেক ইনিংসে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় তিনি রয়েছেন সাত নম্বরে।
আলোকিত সাতকানিয়া/এইচএম