বাংলাদেশের স্বাধীনতার মূল দলিল ৭ই মার্চের ভাষণ-নেলসন ম্যান্ডেলা

মো: মাহমুদ হাসান, অধ্যক্ষ ও সমাজ গবেষক : সারা বিশ্বের রাষ্ট্রনায়ক, সমরনায়ক, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, ইতিহাসবিদ, সমাজতত্ত্ববিদ, রাজনীতি বিশ্লেষকগণ বাঙ্গালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণ বিচার-বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ণ ৭ই মার্চ, ১৯৭১ সাল হতেই করে চলেছেন, এখনো করছেন; আগামী দিনগুলোতেও এ ভাষণ নিয়ে আরো অনেক গবেষণা হবে বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। এমনকি কবি, সাহিত্যিক, শিল্পীদেরও অনেক অমর সৃষ্টি হয়েছে, এ ভাষণের মহিমা ভিত্তি করে। বর্তমান প্রজন্মকে জাতির পিতা সম্পর্কে গভীরভাবে জানতে অনুসন্ধিৎসু হতে আগ্রহী করে তুলতে তরুণদের প্রতি আবেদন জানানোর লক্ষ্য নিয়ে এ নিবন্ধে একটু আলোকপাতের চেষ্টা।

১লা মার্চ ১৯৭১ হতেই ক্ষমতাবান সরকারসমূহ ও বিশ্ব-সমপ্রদায়ের নজর ছিলো ঢাকায়:

বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সে সময় এমন ছিল যে, কোনো কোনো বিদেশি পত্রিকাও তখন জানিয়েছিল, ৭ই মার্চ শেখ মুজিব হয়তো পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা ঘোষণা করবেন।

১৯৭১ সালের ৫ই মার্চ লন্ডনের ‘দ্য গার্ডিয়ান’, ‘সানডে টাইমস, ‘দি অবজারভার’ এবং ৬ই মার্চ ‘ডেইলি টেলিগ্রাফ’ পত্রিকায় ৭ই মার্চে স্বাধীনতা ঘোষণার পূর্বাভাস দেয়া হয়। ৬ই মার্চ ’৭১ লন্ডনের ‘ডেইলি টেলিগ্রাফ’ পত্রিকায় ছাপা হয় “শেখ মুজিবুর রহমান আগামীকাল (৭ মার্চ) পূর্ব পাকিস্তানের একতরফা স্বাধীনতা ঘোষণা করতে পারেন।”

বিশ্বের খ্যাতিমান গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা ঢাকায়:

বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ বিশ্বের ক্ষমতাবান সরকারসমূহ ও বিশ্ব-সম্প্রদায় গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছিল। সকল আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম প্রতিনিধিরা ঢাকায় উপস্থিত থেকে ভাষণের বিবরণ প্রদান করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলো ‘নিউজউইক’ সাময়িকীর বিখ্যাত রিপোর্ট, যেখানে বঙ্গবন্ধুকে উল্লেখ করা হয়েছিল ‘পোয়েট অব পলিটিক্স’ (রাজনীতির কবি) হিসেবে। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ শুধুমাত্র বাংলাদেশের মানুষের কাছেই নয়; বিশ্ব নেতৃবৃন্দ ও বিশ্বের বিভিন্ন প্রভাবশালী গণমাধ্যমেও এ ভাষণকে একটি যুগান্তকারী দিকনির্দেশনামূলক ভাষণ হিসাবে মূল্যায়ণ করা হয়েছে।

বিশ্ব নেতৃবৃন্দের মূল্যায়ণে বাঙ্গালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ভাষণ:

সারা বিশ্বের রাষ্ট্রনায়ক, সমরনায়ক, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, ইতিহাসবিদ, সমাজতত্ত্ববিদ, রাজনীতি বিশ্লেষকগণ বাঙ্গালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণ বিচার-বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ণ ৭ই মার্চ, ১৯৭১ সাল হতেই করে চলেছেন, এখনো করছেন, এবং আগামী দিনেও করবেন। এমনকি কবি, সাহিত্যিক, শিল্পীদেরও অনেক অমর সৃষ্টি হয়েছে, এ ভাষণের মহিমাকে ভিত্তি করে। যদিও দু:খের সাথে বলতে হয়, আমরা বাঙ্গালীরাই এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে। বিশ্বনেতৃবৃন্দের এই ধরণের কিছু বক্তব্য ও বিশ্লেষণ এখানে তুলে ধরা হলো:

(১) সারা বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা বলেছেন, ‘৭ই মার্চের ভাষণ আসলে বাংলাদেশের স্বাধীনতার মূল দলিল।’ (নোট: দীর্ঘদিন লড়াই, সংগ্রাম ও ২৭বছর কারাভোগের মাধ্যমে কৃষ্ণাঙ্গদের ভোটাধিকার আদায় করে দক্ষিণ আফ্রিকার নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট, সুদীর্ঘকাল দক্ষিন আফ্রিকায় বর্ণবাদের অবসান ঘটিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠাকারি এবং শান্তিতে নোবেল বিজয়ী)।

(২) কিউবার মহান বিপ্লবের অবিসংবাদিত নেতা ফিদেল ক্যাস্ট্রো বলেছেন, ‘৭ই মার্চের শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ শুধুমাত্র ভাষণ নয়, এটি একটি অনন্য রণকৌশলের দলিল।’

(৩) যুগোস্লাভিয়ার প্রেসিডেন্ট যোশেফ মার্শাল টিটো বলেছেন, ‘৭ই মার্চের ভাষণের তাৎপর্যপূর্ণ দিক হলো, এই ভাষণের মাধ্যমে শেখ মুজিব প্রমাণ করেছেন পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তানীদের কোন রকম বৈধতা নেই। পূর্ব পাকিস্তান আসলে বাংলাদেশ।’

(৪) গ্রেট বৃটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হীথ বলেছেন, ‘পৃথিবীর ইতিহাসে যতদিন পরাধীনতা থেকে মুক্তির জন্য সংগ্রাম থাকবে, ততদিন শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণটি মুক্তিকামী মানুষের মনে চির জাগরুক থাকবে। এ ভাষণ শুধু বাংলাদেশের মানুষের জন্য নয়, সারা বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের অনুপ্রেরণা।’

(৫) পশ্চিমবঙ্গের প্রয়াত সিপিএম নেতা ও সাবেক মূখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু বলেছেন, ‘৭ই মার্চের ভাষণ একটি অনন্য দলিল। এতে একদিকে আছে মুক্তির প্রেরণা। অন্যদিকে আছে স্বাধীনতার পরবর্তী কর্ম-পরিকল্পনা।’

(৬) রেসকোর্স ময়দানের সেই ঐতিহাসিক ভাষণের পরপরই ঢাকাস্থ মার্কিন কনসাল জেনারেল আর্চার ব্লাড লিখেছেন,‍ “রোববার ৭ই মার্চ প্রদত্ত মুজিবের ভাষণে তিনি যা বলেছিলেন, তার চেয়ে লক্ষণীয় হলো তিনি কি বলেননি। কেউ কেউ আশঙ্কা করছিলেন, আবার কেউ কেউ আশা করেছিলেন যে, তিনি বাংলাদেশকে সরাসরি স্বাধীন ঘোষণা করবেন। এর বদলে বাঙালির মুক্তি ও স্বাধীনতার লক্ষ্যে শান্তিপূর্ণ অসহযোগ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান তিনি জানালেন।” আর্চার ব্লাড ঢাকায় অবস্থান করে পরিস্থিতির গুরুত্ব ও বঙ্গবন্ধুর ভাষণের মর্মার্থ ও তাৎপর্য গভীরভাবে অনুধাবন করতে পেরেছিলেন।

বিশ্ব বিবেকের বিচারে মুজিবের ভাষণ ছিলো ভৌগলিক স্বাধীনতার পাশাপাশি মানুষের মুক্তির দলিলও:

(১) ১৯৭৪ সালে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী শন ভ্যাকব্রাইড বলেছেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমান বুঝতে পেরেছিলেন, কেবল ভৌগলিক স্বাধীনতাই যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন মানুষের মুক্তি ও বেঁচে থাকার স্বাধীনতা। সাম্য ও সম্পদের বৈষম্য দূর করাই স্বাধীনতার সমার্থক। আর এ সত্যের প্রকাশ ঘটে ৭ই মার্চের ভাষণে।’

(২) অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেন বলেছেন, ‘তিনি ছিলেন মানব জাতির পথ প্রদর্শক।…তাঁর সাবলীল চিন্তাধারার সঠিক মূল্য শুধু বাংলাদেশ নয়, সমস্ত পৃথিবীও স্বীকার করবে।’

(৩) নিউজ উইক, পত্রিকার নিবন্ধ ‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‘‌দ্য পয়েট অব পলিটিক্স’ এ বলা হয়েছে, ৭ই মার্চের ভাষণ কেবল একটি ভাষণ নয়, একটি অনন্য কবিতা। এই কবিতার মাধ্যমে তিনি ‘রাজনীতির কবি হিসেবে স্বীকৃতি পান।’

(৪) ১৯৭১ সালে দ্যা ওয়াশিংটন পোস্টের এক ভাষ্যে বলা হয়, ‘শেখ মুজিবের ৭ই মার্চের ভাষণই হলো বাংলাদেশের স্বাধীনতার মৌলিক ঘোষণা। পরবর্তীতে স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়েছে ঐ ভাষণেরই আলোকে।’

(৫) বিবিসি-১৯৭১এই মন্তব্য করেছে, ‘পৃথিবীর ইতিহাসে জন আব্রাহাম লিংকনের গেটিসবার্গ ভাষণের সঙ্গে তুলণীয় এই ভাষণটি। যেখানে তিনি একাধারে বিপ্লবী ও রাষ্ট্রনায়ক।’

(৬ রয়টার্স এর বিশ্বখ্যাত প্রতিনিধি ১৯৭১এ মন্তব্য করেছেন-“বিশ্বের ইতিহাসে এ রকম আর একটি পরিকল্পিত এবং বিন্যস্ত ভাষণ খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে একই সংগে বিপ্লবের রূপরেখা দেয়া হয়েছে এবং সাথে সাথে দেশ পরিচালনার দিকনির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।’

(৭) ১৯৭১ সালেই এএফপি বলেছে, ‘৭ই মার্চের ভাষণের মধ্যদিয়ে শেখ মুজিব আসলে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তিনি বাঙালিদের যুদ্ধের নির্দেশনাও দিয়ে যান। ঐ দিনই আসলে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।’

(৮) ১৯৭২ সালে আনন্দবাজার পত্রিকার এক নিবন্ধে বলা হয়, ‘উত্তাল জনস্রোতের মাঝে, এ রকম একটি ভারসাম্যপূর্ণ, দিকনির্দেশনামূলক ভাষণই শেখ মুজিবকে অনন্য এক ভাবমূর্তি দিয়েছে। দিয়েছে অনন্য মহান নেতার মর্যাদা।’

(৯) ১৯৯৭ সালে টাইম ম্যাগাজিনে বলা হয়েছে, ‘শেখ মুজিব ৭ই মার্চের ভাষণের মাধ্যমেই আসলে বাংলাদেশর স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন। ঐ ভাষণে গেরিলা যুদ্ধের কৌশলও ছিল।’

শেখ মুজিবের ৭ই মার্চের ভাষণের সাম্প্রতিক মূল্যায়ণ- বিশ্বের সেরা ভাষণগুলির অন্যতম:

গত সাড়ে চার দশক যাবত বিশ্বের বিভিন্ন শক্তিশালী গণমাধ্যম, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, রাজনীতি গবেষক, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, ইতিহাসবিদ বাঙ্গালী জাতির পিতা ও অবিসংবাদিত নেতা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ’কে বিশ্বের অন্যতম ভাষণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এর কয়েকটি এখানে উল্লেখ করা হলো:

(১) রাজনীতি বিষয়ক গবেষক মাহবুবুল আলম (‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনীতি ও জীবনধারা’ নামক প্রায় সাত শত পৃষ্ঠার একটি গবেষণা গ্রন্থের রচয়িতা-যে বইটি ২০১৩ সালে অমর একুশের গ্রন্থমেলায় ‘জনতা পাবলিকেশনস’ থেকে প্রকাশিত), তাঁর ৭ই মার্চ ২০১৫ সালে প্রকাশিত ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণের সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ’ নিবন্ধে উল্লেখ করেছেন, “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এ প্রাজ্ঞ ও কৌশলী ভাষণ পৃথিবীর অনেক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আব্রাহাম লিংকনের গেটিসবার্গে প্রদত্ত ভাষণের চেয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণকে তুলনা করে বলেছেন, আব্রাহাম লিংকনের প্রদত্ত ভাষণটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত ও লিখিত ভাষণ, প্রকৃতপক্ষে শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণটি ছিল তাৎক্ষণিক এবং অলিখিত। সে হিসাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণটি আব্রাহাম লিংকনের ভাষণটিকেও ছাপিয়ে গেছে। তাই এই ভাষণটি যুগোত্তীর্ণ। যুগে যুগে এ ভাষণ নিপীড়ত, লাঞ্ছিত স্বাধীনতাকামী মানুষের প্রেরণা ও উদ্দীপনা হিসাবে কাজ করবে। এই কারণেই বঙ্গবন্ধুর এ ঐতিহাসিক ভাষণটি সারা বিশ্বের সমসাময়িক রাজনৈতিক বরেণ্য ব্যক্তিত্ব, রাজনীতির ছাত্র ও রাজনৈতিক গবেষকদের দ্বারা প্রশংসিত।“ (নোট: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের গেটিসবার্গে প্রদত্ত ভাষণ-The Getsburg Address-১৯৭৭-৭৮ সালে বাংলাদেশের সকল শিক্ষাবোর্ডে ইংরেজী বিষয়ে নবম ও দশম শ্রেণীতে তথা ১৯৭৯ এর এসএসসি তে পাঠ্য ছিলো)।

(২) ২০১৭ সালের ৭ই মার্চ প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ প্রেস ডট কম’ অনলাইন পত্রিকায় প্রকাশিত ‘বিশ্বের সেরা ভাষণের তালিকায় ৭ই মার্চের ভাষণ’ শিরোনামের এক সংবাদ এ লেখা হয়েছে, “বিশ্বজুড়ে সেরা ভাষণগুলো তালিকায় রয়েছে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ। খ্রিস্টপূর্ব ৪৩১ সাল থেকে ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সেরা ভাষণ নিয়ে ২২৩ পৃষ্ঠার একটি বইয়ে স্থান পেয়েছে এই ভাষণ। ইংরেজিতে অনুদিত ‘উই শ্যাল ফাইট অন দ্য বিচেস- দ্য স্পিচেস দ্যাট ইন্সপায়ার্ড হিস্টরি’ নামের এই বইটি সংকলন করেছেন জ্যাকব এফ. ফিল্ড। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার উইনস্টন চার্চিলের ভাষণ দিয়ে শুরু করা সংকলনের শেষ ভাষণটি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগ্যানের। বইটির ২০১ পৃষ্ঠায় ‘দ্য স্ট্রাগল দিস টাইম ইজ দ্য স্ট্রাগল ফর ইন্ডিপেন্ডেন্স’ শিরোনামে স্থান পেয়েছে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ। ২০১৪ সালে যুক্তরাজ্য থেকে বইটি প্রকাশিত হয়।“

(৩) জ্যাকব এফ. ফিল্ড এর বইটির উল্লেখ করেছে আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘অগ্রনী রিসার্চ’ও, তাদের গবেষণা ভিত্তিক নিবন্ধ “7th March” research: Understanding Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman’s speech in historical and global context, http://www.7thmarch.com/research/ তে উল্লেখ করেছে, “When the liberal daily, The Guardian, published a compendium of 14 great speeches of 20th Century in 2007, it was expected – especially by its non-Euro-American readership – that it would be relatively global in its selection. Only a handful of speeches by non-Westerners, even less of those made in non-European languages, were included. Even the figures in this tiny minority are selected primarily for their star roles in Euro-American popular culture. It is sad that this is still the case in our presumably globalised world that anything that merits to be called ‘great’ needs to be of the West or at least widely recognisable by its public. Of course great historical moments are coming to pass – often propelled and expressed by great speeches – outside the West, beyond its concerns and interests. One such moment was the liberation of Bangladesh and the speech that encapsulated its spirit and launched the final phase of its realisation; Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman delivered on 7th March 1971. Despite its far-reaching significance it was less than 20 minutes long”.

(৪) আরেকটি খ্যাতনামা আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান OMICS-International, an international resersch organization, তাদের ওয়েব সাইটে উল্লেখ করেছে, শেখ মুজিব “এবারের সংগ্রাম, মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম” বলে একদিকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন, আবার প্রদেশে (পূর্ব পাকিস্তানে) জনগনকে “অসহযোগ আন্দোলন” চালিয়ে যেতে বলেছেন; অন্যদিকে “প্রত্যেক ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোলা”র আহবান জানিয়েছেন-যে যুদ্ধটি কার্যত ১৮দিন পর শুরু হয়েছিলো, পাকিস্তানী সেনাবাহিনী বাঙ্গালী জনসাধারন, বুদ্ধিজীবি, ছাত্র-ছাত্রী, রাজনীতিবিদ এবং সশস্ত্রবাহিনীসমূহের সদস্যদের উপর ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে আক্রমণ শুরুর পর হতেই। তাদের ভাষায়: Sheikh Mujib proclaimed, “Our struggle is for our freedom. Our struggle is for our independence” (Bengali: “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম”). He also announced the civil disobedience movement in the province, calling for “every house to turn into a fortress”. The war eventually began 18 days later, when the Pakistan Army launched Operation Searchlight against Bengali civilians, intelligentsia, students, politicians and armed personnel.

(৫) সম্প্রতি পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে বাঙাগালী জাতির পিতার ৭ই মার্চের ভাষণকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সন্মান ও গুরুত্বের সাথে নির্বাচিত করার বিষয়টি উল্লেখ করেছে। একইসঙ্গে বেদনাদায়ক ও মজার বিষয় হলো, এ ওয়েব পেজটিতে কমেন্টস অপশনে মন্তব্য করতে গিয়ে বর্তমান সময়ের পাকিস্তানী কিছু নাগরিক অশালীন ভাষায় বাঙ্গালী জাতির পিতাকে আক্রমণ করেছেন। বাংলাদেশের তরুণরা কি ভাবতে পারেন, ৪৬ বছর পরেও পাকিস্তানী প্রতিহিংসাপরায়ন নাগরিকদের আক্রমণের কেন্দ্রবিন্দু “শেখ মুজিবুর রহমান” কেনো? অন্য কেউ নয় কেনো?- এখানে পাকিস্তানী প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের “পাকিস্তান ডিফেন্স ওয়েবসাইট” এর লিঙ্কটিও দেয়া হলো: ঐ ওয়েবসাইটটির কিছু অংশ নিম্মরুপ:

“Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman’s historic Mar 7, 1971 speech that effectively declared Bangladesh’s independence has been selected as one of the most rousing and inspirational wartime speeches in the last 2,500 years.

The speech delivered at the Race Course Maidan (currently Suhrawardy Udyan) encouraged the Bengalis to start their nine-month long bloody struggle for freedom.

‘Ebarer Sangram Amader Muktir Sangram, Ebarer Sangram Swadhinatar Sangram’ (This time the struggle is for our freedom), is what the architect of the nation’s independence famously pronounced.

The much-talked-about inspirational speech is considered by many to be one of the world’s best.”

(৬) বাংলাদেশের জনপ্রিয় কবি নির্মলেন্দু গুণ তার কবিতায় বলেছেন, ‘কে রোধে তাঁহার বজ্রকন্ঠবাণী? গণসূর্যে মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শোনালেন তাঁর অমর- কবিতাখানী।’

(৭) রাজনীতি বিষয়ক গবেষক মাহবুবুল আলম তার উপরোল্লিখিত নিবন্ধে আরো উল্লেখ করেছেন, “বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ ইতিহাসের ম্যাগনাকার্টা”। তিনি আরো উল্লেখ করেন, “ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ, বাংলাদেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বিকেলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন রেসকোর্স ময়দানের বিশাল সমাবেশের মঞ্চে দাঁড়িয়ে চিরবঞ্চিত বাঙালিকে পাকিস্তানী শাসক-শোকদের বিরুদ্ধে মুক্তির সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার যে ডাক দিয়েছিলেন, সেই ডাকে সাড়া দিয়ে বাঙালিরা পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মরণপণ লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়ে সামিল হয়েছিল মুক্তির সংগ্রামে। সাড়ে সাত কোটি মানুষকে জাতীয় চেতনায় উদ্বেলিত ও ঐক্যবদ্ধ করে গণতান্ত্রিক সংগ্রামের মাধ্যমে অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে তিনি নিয়ে এসেছিলেন মুক্তির বারতা। সে দিনের সে ঐতিহাসিক ভাষণের অনুপ্রেরণাতেই বর্বর সামরিক শক্তির মুখোমুখি হয়ে নতুন বাংলাদেশকে আগামীর পথে অগ্রসর হওয়ার শক্তি যুগিয়েছিলো। তাই এ ভাষণ বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ দলিল।“

যারা বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ অসম্পূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করার অপপ্রয়াস চালান, তাঁদেরকে বিনয়ের সাথে বিবেচনা করার অনুরোধ করবো,-৭ই মার্চ ১৯৭১ হতে চলতে থাকা অসহযোগ আন্দোলন, ২৬মার্চ সকালে বাংলাদেশের অনেক জেলা ও মহকুমা সদরে ডিসি ও এসডিও অফিসের সামনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গঠিত সংগ্রাম পরিষদের মাধ্যমে ডিসি ও এসডিওদের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন-বাংলার পতাকা উত্তোলন এবং ২৬শে মার্চ হতে ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত্য চলা মুক্তিযুদ্ধে “জয় বাংলা” স্লোগানের পাশাপাশি “জয় বঙ্গবন্ধু” স্লোগান দেওয়া হতো কেন? “বীর বাঙ্গালী অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো” পাশাপাশি “শেখ মুজিবের পথ ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো” এ স্লোগান দেয়া হতো কেন? তরুণরা ইতিহাস বিকৃতিকারিদের কাছে এ প্রশ্নটি উত্থাপন করতে পারেন, নিজেরাও ভাবতে পারেন, কাদের প্ররোচনায় ভূল ইতিহাস প্রচারিত হয়েছে এবং ৭ই মার্চের ভাষণকে ধৃষ্টতাপূর্ণভাবে অসম্পূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করার অপচেষ্টা করা হয়েছে?

(৮) আমি মনে করি, “দাবায়া রাখতে পারবা না” এ কথাটিই যেনো গুটিকয় বাদে প্রতিটি বাঙ্গালীর মনে প্রতিশোধের, প্রতিরোধের ও শত্রু বিনাশের জন্য মুক্তিপাগল মানুষের মনে দ্রোহের আগুন জ্বালিয়েছিলো। একজন বিজ্ঞ রাজনীতিবিদ হয়েও কেনো বঙ্গবন্ধু সেদিন চাষা-মজুর-শ্রমিক সহ সাধারন মানুষের বোঝার সুবিধার্থে লোকায়ত চলিত ভাষায় তাঁর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভাষণটি দিয়েছিলেন, এর তাৎপর্য কি ছিলো? ৭ই মার্চের ভাষণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধ গবেষক মফিদুল হক লিখেছেন, “৭ মার্চের ভাষণে প্রতিরোধ আন্দোলনের এই লোকায়ত রূপ মেলে ধরবার পাশাপাশি প্রত্যাঘাতের ডাক এমন এক লোকভাষায় ব্যক্ত করলেন বঙ্গবন্ধু, যে তিনি উন্নীত হলেন অনন্য লোকনায়কের ভূমিকায়, যার তুলনীয় নেতৃত্ব জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের কাফেলায় বিশেষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। বাংলার লোকঐতিহ্য ও জীবনধারার গভীর থেকে উঠে আসা ব্যক্তি হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন জাতির অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের নেতৃত্বের ভূমিকায়। জাতীয়তাবাদী নেতা হিসেবে তিনি যে কতটা সার্থক হয়ে উঠেছিলেন তার পরিস্ফূটন ঘটেছিল সঙ্কটময় মার্চ মাসে তাঁর অবস্থান ও ভূমিকা এবং ৭ই মার্চের ভাষণের মধ্য দিয়ে। তিনি বক্তব্যে যেমন গভীরভাবে জাতীয়তাবাদী, তেমনি আন্দোলনের স্বাদেশিক রীতির নব-রূপায়ন ও প্রসার ঘটালেন সার্বিক ও সক্রিয় অসহযোগের ডাক দিয়ে, যে অসহযোগে সামিল ছিল ব্যাপক জনতা এবং সকল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। অসহযোগ আন্দোলন ও ৭ই মার্চের ভাষণের আবেদন উপচে পড়েছিল পাকিস্তানি রাষ্ট্রকাঠামোতে সামরিক-আধাসামরিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সকল বাঙালি সদস্যের ওপর এবং এর প্রতিফল জাতি লাভ করলো মুক্তিযুদ্ধের সূচনা থেকেই। বক্তৃতার রূপ হিসেবেও প্রচলিত রাজনৈতিক ভাষণের কাঠামো সম্পূর্ণভাবে পরিহার করে বঙ্গবন্ধু এমন এক সৃজনশীলতার পরিচয় দিলেন যা দেশের মাটির গভীরে শেকড় জারিত করা ও গণ-সংগ্রামের দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয়া অনন্য নেতার পক্ষেই সম্ভব হয়েছিল। এই ভাষণের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর উন্নীত হয়েছিল ওরাকলের পর্যায়ে, তিনি হয়ে উঠেছিলেন ভবিষ্যৎদ্রষ্টা এবং এই অমোঘ বাণী দেশবাসীর অন্তরে যে অনুরণন তৈরি করেছিল সেই শক্তিতে অবিসংবাদিত জাতীয় নেতা থেকে শেখ মুজিবুর রহমান পরিণত হয়েছিলেন তৃতীয় বিশ্বের জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের কাতারে সামিল আরেক অনন্য নেতায়।’

(৯) ডা. বরুণ কুমার আচার্য (বলাই) (লেখক ও সভাপতি, চট্টগ্রাম সাহিত্য সমাজ অনুশীলন কেন্দ্র) দৈনিক পূর্বকোণ পত্রিকায় ৭ই মার্চ, ২০১৫ তারিখে প্রকাশিত ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ স্বাধীনতাকামী মানুষের মুক্তির ঠিকানা’ নিবন্ধে লিখেন, “ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ বাঙালী জাতির মুক্তির পথ ঠিকানা। স্বজাতি ও স্বাধিকারবোধে উদ্দীপ্ত বাঙালির ইতিহাসের এক অনন্যসাধারণ দিন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের এইদিনে যে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন আজও এর তাৎপর্য জাতীয় জীবনে গভীরভাবে অনুভূত হয়। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভক্তির পর দুই যুগব্যাপী সংগ্রাম-সাধনার মধ্য দিয়া তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিরা মুক্তির যে মোহনায় উপনীত হয়েছিল তাকে চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে ৭ই মার্চের ঐ ভাষণ ছিল অবিস্মরণীয়। পাকিস্তানের সংখ্যাগুরু দলের নেতা হিসাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁহার ঐতিহাসিক ভাষণের মাধ্যমে একাত্তরের এইদিনে এতদঞ্চলের মুক্তিপাগল মানুষের মনে প্রত্যয়ের যে বীজ বপন করেছিলেন বিশ্বের ইতিহাসে এটি এক বিরল ঘটনা। এ দৃষ্টান্ত অন্য কোথাও নেই। এটি বাঙালীর গর্ব ও অহংকারের।“ ডা: বলাই ঐ নিবন্ধে আরো লিখেন, “গোটা পূর্ব পাকিস্তান তখন অগ্নিগর্ভ ভিসুবিয়াসের রূপ ধারণ করেছে। জনতার সাগরে তখন অশান্ত ঊর্মিমালার গর্জন, আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত হচ্ছে জনতার প্রচন্ড নাদে। সার্বিক মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় উদ্বেল জনতাশক্তি জেগে উঠেছে বঙ্গবন্ধুর জাদুকরী নেতৃত্বের প্রবল টানে। মানুষ মুক্তি চায়, সার্বিক মুক্তি। কেউই আর বদ্ধঘরে আবদ্ধ থাকবে না, মুক্ত বিহঙ্গের ন্যায় আকাশে ডানা মেলে ধরবে সবাই। যৌবন জলতরঙ্গ আর কোন বাধাই মানবে না। এই যখন অবস্থা তখন নির্যাতিত দেশের কান্ডারী হিসাবে বঙ্গবন্ধু জনতরীর হাল ধরলেন। শক্ত হাতে হাল ধরেছেন জনগণের নয়নমণি শেখ মুজিবুর রহমান। ‘মুজিব বাইয়া যাওরে, নির্যাতিত দেশের মাঝে জনগণের নাও’- এই দাবি আর আহ্বান তখন সকলের কণ্ঠে ধ্বনিত- প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।“

(১০) ১৯৭৫ এর ১৫ই আগষ্টে জাতির পিতাকে সপরিবারে বর্বরোচিতভাবে খুনের পর ইতিহাস বিকৃতি এবং জাতির পিতাকে অস্বীকার করার হীন, ঘৃন্য ও বিকৃত প্রচারণায় সামিল হয়েছিলেন যারা, লেখক আহমদ ছফা তাঁদের মধ্যে অন্যতম হিসেবে চিহ্নিত। উল্লেখ্য যে, “ব্যক্তিগতভাবে তিনি আমার পরিচিত নন, তাঁর প্রশংসা বা দুর্নাম করা কোনটিই আমার কাঙ্খিত নয়”। কিন্তু, সত্যিকারের ঐতিহাসিক ঘটনার বিশ্লেষণে করতে গিয়েই এ নিবন্ধে জ্ঞানপাপী সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে তাঁকে উদ্ধৃত করা প্রসঙ্গিক। এই আহমদ ছফাই ১৯৭৫ এর পূর্ববর্তী বিভিন্ন আলোচনা সভায় জাতির পিতা ও ৭ই মার্চের ভাষণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বলতেন এবং তিনি তাঁর বিভিন্ন লেখায়ও লিখেছেন, “বঙ্গবন্ধু হলেন বাংলার ভীম, মধ্যযুগের বাংলার লোকায়ত যে নেতা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন স্বাধীন রাজ্যপাট, নির্মাণ করেছিলেন মাটির দুর্গ, ভিতরগড়ে যে দুর্গ প্রাচীর এখনও দেখতে পাওয়া যায়, মাটির হলেও পাথরের মতো শক্ত। বাংলার ইতিহাসের এমন অনন্য নির্মাণ-কীর্তির তুলনীয় আর কিছু যদি আমাদের খুঁজতে হয়, তবে বলতে হবে ৭ই মার্চের ভাষণের কথা। যেমন ছিল মধ্যযুগের বাংলার রাজা ভীমের গড়া পাথরের মতো শক্ত মাটির দুর্গ, তেমনি রয়েছে বিশ শতকের বাংলার লোকনেতা মুজিবের ভাষণ, যেন-বা মাটি দিয়ে গড়া, তবে পাথরের মতো শক্ত”।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণের প্রেক্ষাপট:

তরুণদের উপলব্ধি করার সুবিধার্থে একটু স্মরণ করা প্রাসঙ্গিক যে, কী পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু সেই ইতিহাস বিখ্যাত ভাষণ দিয়েছিলেন। ১৯৭০ সালের ৭ই ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। ১৩টি মহিলা আসনসহ জাতীয় পরিষদে আসন সংখ্যা ছিল ৩১৩টি (৩০০+১৩=৩১৩)। এর মধ্যে অবিভক্ত পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চল-পূর্ব পাকিস্তানের আসন সংখ্যা ছিল ১৬৯টি (১৬২+৭=১৬৯)। ১৯৭০ সালের ৭ই ডিসেম্বরের এই নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের ১৬৯ আসনের মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পায় ১৬৭টি আসন। তখন আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং সাধারন সম্পাদক ছিলেন তাজউদ্দিন আহমেদ (যিনি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মুজিবনগর সরকার বা প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, গাজীপুরের মানুষ তাঁকে ১৯৭২ সাল হতে ‘বঙ্গতাজ’ অভিধায় শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। ১৯৭০ সালের ৭ই ডিসেম্বরের নির্বাচনে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের ও প্রাদেশিক পরিষদসমূহের ওই নির্বাচনে বহু রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করে। সামরিক আইনের অধীনে ওই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরপরেও বাঙ্গালীর সুদীর্ঘকালের লড়াই, সংগ্রাম, আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলন শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগই মিটাতে পারে-এ ধারনা হতেই জনগণ স্বত:স্ফুর্তভাবে আওয়ামী লীগকেই ভোট দেয়, কারন-শেখ মুজিবের ছয়দফা পাকিস্তান রাষ্ট্রকাঠামোতে বাস্তবায়ন সম্ভব নয়, এটা ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহীতে বসবাস করা রাষট্রবিজ্ঞানী হতে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামের সাধারন কৃষক-মজুর পর্যন্ত্য জানতেন। ইয়াহিয়া-মোনায়েম খানের বিরুদ্ধে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ১৬৭টি আসন পাওয়ার পর বাকি ২টি আসন পায় সমগ্র পাকিস্তানের একসময়কার প্রধানমন্ত্রী নূরুল আমীন খানের পিডিপি। ৭ই ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর তৎকালীন সামরিক প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান ১৯৭১ সালের ৩রা মার্চ ঢাকায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করেন। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের পিপিপি নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো (ভুট্টো সাহেব হিসেবে পরিচিত) এবং পাকিস্তান সামরিক চক্র সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের কাছে অর্থাৎ আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপারে ষড়যন্ত্র শুরু করে। ষড়যন্ত্রকারীদের হাতের পুতুলে পরিণত হলেন সামরিক প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান।

১৯৭১ সালের ১লা মার্চ দুপুর ১টা ৫ মিনিটে আকস্মিক এক বেতার ঘোষণায় ৩রা মার্চ অনুষ্ঠেয় জাতীয় পরিষদ অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করা হয়। জাতীয় পরিষদ অধিবেশন স্থগিত হওয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গর্জে ওঠে বাংলাদেশ (পূর্ব পাকিস্তান)। ৩রা মার্চ পল্টনে ছাত্রলীগ ও শ্রমিক লীগের সভায় প্রধান অতিথি বঙ্গবন্ধু আবেগজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমি থাকি আর না থাকি, বাংলার স্বাধিকার আন্দোলন যেন থেমে না থাকে। বাঙালির রক্ত যেন বৃথা না যায়। আমি না থাকলে-আমার সহকর্মীরা নেতৃত্ব দিবেন। তাঁদেরও যদি হত্যা করা হয়, যিনি জীবিত থাকবেন, তিনিই নেতৃত্ব দিবেন। যেকোনো মূল্যে আন্দোলন চালাইয়া যেতে হবে-অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।” এই সভাতেই আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন-বাংলার পতাকা উত্তোলনের পূর্বে ছাত্রনেতা খসরু (পরবর্তীতে মুক্তিযোদ্ধা ও চলচ্চিত্র অভিনেতা) গান ফায়ার করেন, আনুষ্ঠানিকভাবে “আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি” গাওয়ার মাধ্যমে পাকিস্তানের চাঁদতারা খচিত পতাকার বদলে “স্বাধীন-বাংলা”র পতাকা “ততকালীন পূর্ব-পাকিস্তান ভূখন্ডের মানচিত্র সহ লাল-সবুজ পতাকা” উত্তোলন করেন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যলয়ের ছাত্রনেতা ও ‘মি. ইষ্ট পাকিস্তান’ খেতাব পাওয়া বিশিষ্ট ক্রীড়াবিদ হাসানুল হক ইনু। ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ এর সদস্য শাহজাহান সিরাজ “স্বাধীনতার ইশতেহার” পাঠ করেন। এসব ঘটনাগুলি সেসময়ের পত্রিকা, রেডিওতে যেমন ব্যাপক প্রচারিত হয়েছে, পরবর্তীতেও যারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লিখেছেন, তারাও হুবহু একই রকমভাবে উল্লেখ করেছেন। সম্প্রতি ততকালীন ডাকসু ভিপি ও কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ এর সদস্য আ.স.ম. আব্দুর রবের একটি বক্তব্য বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বকে আরো মহিমান্বিত করে তুলেছে; এবং রব সাহেবেদেরই লুকিয়ে রাখা ইতিহাসকে আলোয় এনেছে। তিনি বলেছেন, এবং তার একটি ব্লগেও তিনি লিখেছেন, “জয়বাংলা বাহিনীর ছাত্র-ছাত্রীদের সম্মিলিত ব্রিগেড বঙ্গবন্ধুকে সামরিক কায়দায় অভিবাদন জানানোর পর আমি নীলডাউন হয়ে বঙ্গবন্ধুর হাতে স্বাধীন বাংলার পতাকা হস্তান্তর করি”। উল্লেখ্য যে, ১৯৭১ এর এ কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ এর সদস্য ছিলেন চারজন; ততকালীন ছাত্রলীগের সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকী, যিনি ৩রা মার্চ, ১৯৭১ এর “স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ” এর পল্টনের সভায় ছিলেন সভাপতি, ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক শাহজাহান সিরাজ, যিনি ঐ সভায় “স্বাধীনতার ইশতেহার” পাঠ করেন, ততকালীন ডাকসু ভিপি আ.স. ম. আব্দুর রব, যিনি বঙ্গবন্ধুকে সামরিক কায়দায় জয়বাংলা বাহিনীর অভিবাদন প্রদানে নেতৃত্ব দেন এবং আনুষ্ঠানিকভাবে বঙ্গবন্ধুরই পূর্ব অনুমোদিত পতাকা জনসমক্ষে আনুষ্ঠিানিকভাবে বঙ্গবন্ধুর কাছে হস্তান্তর করেন, এবং ততকালীন ডাকসু এর সাধারন সম্পাদক (জিএস) আব্দুল কুদ্দুস মাখন। এ চারজনকে ১লা মার্চ, ১৯৭১ অসহযোগ আন্দোলন শুরুর দিন হতে “বঙ্গবন্ধুর চার খলিফা” হিসেবে অভিহিত করা হয়।

বঙ্গবন্ধু আগেই ঘোষণা করেছিলেন, ৭ই মার্চ রোববার রেসকোর্স ময়দানে তিনি পরবর্তী কর্মপন্থা ঘোষণা করবেন। ৪ঠা মার্চ থেকে ৬ই মার্চ সকাল ৬টা থেকে ২টা পর্যন্ত সারা দেশে হরতাল পালনের আহ্বান জানান বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দুর্বার গতিতে অসহযোগ আন্দোলন এগিয়ে চলল। সারা দেশে তখন একজন মাত্র কার্যকর নেতা। তিনি হচ্ছেন দেশের শতকরা ৯৮জন মানুষের ভোটে নির্বাচিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দেশের সামরিক শাসন চালু থাকলেও সামরিক সরকারের কথা তখন কেউ শুনছে না। শেখ মুজিবের কথাই তখন (মার্চ, ১৯৭১) আইন। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে সমগ্র বাংলাদেশ পরিচালিত হচ্ছে। সেই আন্দোলনমুখর পরিস্থিতিতে ঘনিয়ে এল ৭ই মার্চ। সবার দৃষ্টি ৭ই মার্চের দিকে। ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে কী বলবেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ভাবিয়ে তুলল, পাকিস্তান সামরিক চক্রকেও। কারণ তারা বুঝে গেছে, বাংলাদেশের মানুষের ওপর তাদের আর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। দেশ পরিচালিত হচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতা শেখ মুজিবের কথায়। এই অবস্থায় ৭ই মার্চ শেখ মুজিব যদি রেসকোর্সের জনসভায় স্বাধীনতা ঘোষণা করে বসেন। চিন্তিত পাকিস্তান সামরিক চক্র কৌশলের আশ্রয় নিল। ৭ই মার্চের একদিন আগে, অর্থাৎ ৬ই মার্চ জে. ইয়াহিয়া খান টেলিফোনে কথা বলেন, পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা, আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে। পূর্ব পাকিস্তান সামরিক সরকারের তৎকালীন তথ্য কর্মকর্তা মেজর সিদ্দিক সালিকের ‘Witness to Surrender’ গ্রন্থে এসব তথ্য রয়েছে। ৬ই মার্চ জেনারেল ইয়াহিয়া তার দীর্ঘ টেলিফোন আলাপে আওয়ামী লীগ নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বলার চেষ্টা করেন, ‘তিনি (বঙ্গবন্ধু) যেন এমন কোনো কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করেন, যেখান থেকে ফিরে আসার উপায় আর না থাকে।’ ৭ই মার্চ রেসকোর্সে জনসভার বক্তব্য কী হবে- এ নিয়ে ৬ই মার্চ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির দীর্ঘ বৈঠক হয়। জনসভায় বঙ্গবন্ধু কী বলবেন-এ নিয়ে বিভিন্নজন বক্তব্য রাখেন। একপক্ষের মত, বঙ্গবন্ধু যেন জনসভায় সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা প্রদান করেন। অন্যপক্ষ স্বাধীনতার সরাসরি ঘোষণা পরিহার করে আলোচনার পথ খোলা রাখার পক্ষে মত প্রদান করেন। সভা ৭ই মার্চ সকাল পর্যন্ত মুলতবি রইলো। ছাত্রলীগ এবং আওয়ামী লীগের স্বাধীনতাকামীরা বিভিন্নভাবে চাপ দিচ্ছিলেন বঙ্গবন্ধুকে ৭ই মার্চের জনসভায় স্বাধীনতা ঘোষণা করার জন্য। এ পরিস্থিতির চাপে ভীতসন্ত্রস্ত পূর্ব পাকিস্তান সামরিক সদর দপ্তর থেকে বিভিন্নভাবে শেখ মুজিব ও আওয়ামী লীগকে এই মেসেজ দেয়া হয় যে, ৭ই মার্চ যেন কোনোভাবেই স্বাধীনতা ঘোষণা না করা হয়। ৭ই মার্চ জনসভাকে কেন্দ্র করে কামান বসানো হয়, রেসকোর্স ময়দান (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) এর চার পাশে। এমনকি আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রও প্রস্তুত রাখা হয়। মেজর সিদ্দিক সালিক তার গ্রন্থে লিখেছেন, পূর্ব পাকিস্তানের জিওসি ৭ই মার্চের জনসভার প্রাক্কালে আওয়ামী লীগ নেতাকে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, “পাকিস্তানের সংহতির বিরুদ্ধে কোনো কথা বলা হলে তা শক্তভাবে মোকাবেলা করা হবে। বিশ্বাসঘাতকদের (বাঙালি) হত্যার জন্য ট্যাংক, কামান, মেশিনগান সবই প্রস্তুত রাখা হবে। প্রয়োজন হলে, ঢাকাকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়া হবে। শাসন করার জন্য কেউ থাকবে না, কিংবা শাসিত হওয়ার জন্যও কিছু থাকবে না।” এমন এক কঠিন সংকটময় পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ৭ই মার্চ রেসকোর্সে তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের সামরিক কর্তৃপক্ষকে চারটি শর্ত দিয়ে ভাষণের শেষাংশে বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন, “এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা।”

আশার আলো: বিশ্বের সকল যুগের সেরা ভাষণ হিসেবে জাতির পিতার ভাষণ সংরক্ষণে উদ্যোগ

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ বিশ্বের ৪০টি ভাষায় অনুবাদ হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ‘‘দ্যা স্পিচ বিহাইন্ড দ্যা লিবারেশন অব বাংলাদেশ” শীর্ষক এ প্রকাশনা বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। ৪০টি দেশের দূতাবাস কর্তৃপক্ষ প্রকাশনাটিকে সূচারুরূপে অনুবাদে সহায়তা দিয়েছেন। ক্রিয়েশন এন্ড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (সিডিএফ) এ প্রকাশনার সার্বিক দায়িত্ব পালন করেছে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব অর্জনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণের গুরুত্ব এবং প্রভাব নির্ণয়ে লন্ডনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা অগ্রণী রিসার্চ ‘৭ই মার্চ রিচার্স প্রজেক্ট’ নামে একটি গবেষণা কাজ শুরু করেছে। তারা চান বিশ্বের অন্যান্য শ্রেষ্ঠ ভাষণগুলোর সাথে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের তুলনার মাধ্যমে ইতিহাসে এর স্থান নির্নয় করতে।

(নোট: জাতির পিতার ভাষণ নিয়ে কিছু লেখা বা মন্তব্য করা আমার পক্ষে ধৃষ্টতার নামান্তর! যেহেতু, ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ আমি ছিলাম ৭ বছরের শিশু; তবুও এ ক্ষুদ্র প্রয়াস, শুধু তরুণদের সত্য ইতিহাস অনুসন্ধানে উতসাহিত করার আবেদন জানানোর লক্ষ্য নিয়ে। যদি উক্ত ঐতিহাসিক ঘটনাসমূহের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণকারি বা কোন গবেষক বা, ইতিহাসবিদ কারো দৃষ্টিতে এই নিবন্ধের কোন অংশে ভুল তথ্য উপস্থাপন হয়েছে এমন ধরা পড়ে, দয়া করে অবহিত করলে, তা সংশোধন করবো।)