পৃথিবীর উন্নত দেশসমূহের নবজাগরণ এবং শিল্পোন্নয়ন, অর্থনৈতিক, বানিজ্যিক উত্তরনের সাফল্য এসএমই( Small and Medium Enterprise) এর পথ ধরেই। ছোট ও মাঝারি শিল্পে যেহেতু অনেক মানুষের মেধা,শ্রম,বিনিয়োগ ও উদ্ভাবনী শক্তি জড়িত তাই এতে সব মানুষের অংশগ্রহণ সহজ হয়। চীন,জাপান, ভারত, মালয়েশিয়া, জার্মানী সহ এশিয়া, ইউরোপের অনেক দেশে এসএমই শিল্প বিপ্লবের সহায়ক হয়েছে। গতবছর (২০১৯) চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এ ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে জাতীয় অর্থনীতিতে এসএমই এর ভূমিকা শীর্ষক সেমিনারে বক্তাদের মাধ্যমে জানা যায় , জাপানের সমৃদ্ধ অর্থনীতির জাগরন হলো ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প তথা এসএমই বিকাশের ফলাফল। জাপানের বৃহৎ শিল্পের মূল শক্তি হলো এসএমই এর লিংকেজ প্রতিষ্ঠান। তাই জাপানের এসএমই মডেল অনুসরণ করে বাংলাদেশ দ্রুত উন্নত দেশে পরিণত হতে পারে। সেমিনারে জাইকার চীফ রিপ্রেজেন্টেটিভ হিতোশি হিরাতা বলেন, ঢাকা,চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারকে নিয়ে জাপানের অনেক বড় অর্থনৈতিক পরিকল্পনা রয়েছে, যা বিগ-বি( বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট) এর সাথে সম্পর্কিত। জাপান বিশ্বাস করে দক্ষিণ এশিয়ায় বাণিজ্যিক উত্থান পর্বের এ সময়ে বাংলাদেশে বিনিয়োগের এখনই উপযুক্ত সময়। যেখানে এসএমই ব্যবসা ও শিল্পোদ্যোগ বড় ভূমিকা রাখতে পারে। এতে লক্ষ কর্মসংস্থানের পাশাপাশি পূজিঁর ব্যাপক বিকাশ হবে। জাপান বাংলাদেশে এসএমই তে টেকনিক্যাল সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম বলেন, এসএমই তে জাপানি উদ্যোগকে সবরকমের সরকারি বেসরকারি সহযোগিতা দেয়া হবে। ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন ফর স্মল এন্ড মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজেস ইন এশিয়া (আইকোসা) এর এই সেমিনারের যৌথ আয়োজনে ছিল জাপান বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ,বাংলাদেশ এওটিএস এলুমনি সোসাইটি, চট্টগ্রাম এওটিএস এলুমনি সোসাইটি এবং চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ। সেমিনারে ব্যবসায়ীদের মতামত পর্ব সন্চালনায় ছিলেন জাপান বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর প্রেসিডেন্ট সালাহ্উদ্দিন কাশেম খান। তিনি বলেন জনবহুল বাংলাদেশে প্রেক্ষিতে এসএমই খুবই প্রাসঙ্গিক ও সময়োপযোগী। চট্টগ্রামে জাপানের অনারারি কনসাল জেনারেল মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম তার স্বাগত বক্তব্যে তৃণমূল পর্যায়ে বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রামের মত পশ্চাৎপদ এলাকায় এসএমই এর প্রয়োজনীয়তাকে গুরুত্ব দেন। সেমিনারে প্রজেক্টর শোর মাধ্যমে এসএমই বিষয়ক গবেষনা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইকোসার চেয়ারম্যান নাউহিরো কোরোসি, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এনআরবির সাবেক চেয়ারম্যান ড. আবদুল মজিদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সেলিম উদ্দিন, অধ্যাপক ড. সালেহ জহুর। ড. আবদুল মজিদ জাপানের ৯টি এসএমই বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশ প্রেক্ষিতে এসএমই বিশ্ববিদ্যালয় ও দক্ষ ব্যাংকিং সেবা প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করেন। উপরোক্ত বিশেষজ্ঞদের আলোচনা ও মতামতের ভিত্তিতে একটা বিষয় সুস্পষ্ট যে, এসএমই শিল্প বিকাশের আগে প্রয়োজন এসএমই শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ। তাই এজন্য প্রয়োজন একটি এসএমই শিক্ষালয় বা ইনস্টিটিউট। যেটি পরবর্তীতে রুপ নিতে পারে এসএমই বিশ্ববিদ্যালয়ে। এসএমইকে আন্তর্জাতিক কোয়ালিটিতে নিয়ে যেতে বেশী প্রয়োজন একটি বিশ্ববিদ্যালয়। এটি হবে বাংলাদেশের প্রথম এসএমই বিশ্ববিদ্যালয়। গবেষণায় দেখা গেছে দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতকানিয়া লোহাগাড়ার মানুষজন দেশের ব্যবসা,বানিজ্য ও শিল্প উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখছেন। তারাই বাংলাদেশের বড় উদ্যোক্তা শ্রেণী। তাই সাতকানিয়া লোহাগাড়া এলাকায় বাংলাদেশের এই প্রথম এসএমই বিশ্ববিদ্যালয়টি করা যায়। এতে স্থানীয় অধিবাসীদের পাশাপাশি প্রবাসী ও দেশ বিদেশের অনেকেই পরামর্শ ও সহযোগিতা দিতে উৎসাহিত হবেন। সাতকানিয়া লোহাগাড়া যেহেতু বাশখালী, আনোয়ারা, বান্দরবান ও কক্সবাজারের কাছাকাছি, তাই এসএমই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে এসব অন্চলে এসএমই শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠা ও শিল্প বিপ্লবে সহায়ক হবে। বান্দরবানের বিশাল অরন্যে এগ্রো ইন্ডাস্ট্রি বা কৃষি নির্ভর শিল্পের সম্ভাবনা প্রচুর। অন্যদিকে সমুদ্র উপকূলীয় বাশখালী ও কক্সবাজারে লবন,মৎস্য, খনিজ, বিভিন্ন সমুদ্র সম্পদ ও পর্যটন শিল্প সম্পর্কিত ব্যবসা বানিজ্যের বিকাশের রয়েছে যথেষ্ট সম্ভাবনা। ব্লু ইকোনমি বা সমুদ্র অর্থনীতির বিশাল সম্ভাবনা হাতছানি দিয়ে ডাকছে এসএমই শিল্প উদ্যোক্তা ও যুবশক্তিকে। আনোয়ারায় কোরিয়ান ইপিজেড সহ যে বিশেষ অর্থনৈতিক জোন গড়ে উঠছে তাতে বিশাল ব্যাকআপ দিতে পারে এসএমই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সাতকানিয়া লোহাগাড়া সহ পুরো দক্ষিণ চট্টগ্রামে বসবাস করেন বিশাল এক তরুণ উদ্যোক্তা শ্রেণী, যাদের আছে অক্লান্ত কর্মশক্তি ও স্বপ্ন পূরনের ইচ্ছাশক্তি। তাদের সাথে যোগ দিবে সারা বাংলাদেশ থেকে আসা শিক্ষার্থীরা । সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও সাধনায় মেধা, মনন, প্রজ্ঞা আর কর্মমুখরতায় জোয়ার বইবে এই জনপদে। বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে যাবে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের দ্বার প্রান্তে। গড়ে উঠবে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা। পরিপূর্ণতা পাবে তাঁরই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ভিশন ২০৪১ এর সমৃদ্ধ ও উন্নত বাংলাদেশ। তাই দক্ষিণ চট্টগ্রামে প্রস্তাবিত Satkania Lohagara University of Small & Medium Enterprise (SLU-SME) এখন যেন সময়ের দাবী।
………………………..
সরোয়ার আমিন বাবু।
প্রধান সমন্বয়কারী।
সাতকানিয়া লোহাগাড়া ইউনিভার্সিটি অব এসএমই ।
SLU – SME.
সাংবাদিক ও উন্নয়নকর্মী।
01819859983,
01715728161