রক্তদাতারা এগিয়ে আসুন। সমস্যা তলপেটে অপারেশন, রক্তের গ্রুপ- ও পজেটিভ, পরিমান ১ ব্যাগ, স্থান-চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। তারিখ, সময় ও মুঠোফোন নাম্বার দিয়ে ফেসবুক স্ট্যাটাসে রক্তের সন্ধান চান শহীদুল ইসলাম নামে রাঙ্গুনিয়া ব্লাড ব্যাংকের এডমিন (প্রশাসক)। ২ ফ্রেব্রুয়ারি) স্ট্যাটাসটি দেয়া হয়। স্ট্যাটাসের নিচে প্রচুর কমেন্ট। স্ট্যাটাস দেয়ার পর রক্তদাতাদের সাড়া আসে। জোগাড় হয়ে যায় রক্ত। এ গ্রুপের ১০ জন তরুন এডমিন ফেসবুকে এভাবে স্ট্যাটাস দিয়ে সাধারণ মানুষদের নিয়মিত রক্তদানে সহায়তা করে আসছেন। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে রাঙ্গুনিয়া ব্লাড ব্যাংক নামে গ্রুপটি চালান। এ গ্রুপে ১০ হাজার সদস্য রয়েছেন। রাঙ্গুনিয়া ছাড়াও চট্টগ্রামের বাইরেও অনেকেই রক্তের সন্ধান চান এ গ্রুপের মাধ্যমে। একই নামে সংগঠনের পক্ষ থেকে দেয়া হয় দুস্থদের শীতবস্ত্র, ঈদবস্ত্র , শিক্ষা সামগ্রী ও ক্যান্সার রোগীদের আর্থিক সহায়তা। সামাজিক কাজ করার পাশাপাশি এ সংগঠনের ৬৫ জন তরুণ সদস্য নিয়মিত রক্তদাতা। যারা সব সময় সক্রিয় থাকেন এ ফেসবুক গ্রুপে। এলাকার কোথাও কোনো অসুস্থ রোগীর জরুরী রক্তের প্রয়োজন হলে ছুটে যান এ সংগঠনের সদস্যরা। রাঙ্গুনিয়াসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতালে প্রতি মাসে রোগীকে ১৫ ব্যাগ রক্ত সরবরাহ করেন তারা। এভাবে গত কয়েক বছরে অন্তত ৮শ ব্যাগ রক্ত দিয়েছে সংগঠনটির সদস্যরা। রক্ত পেয়েছেন গর্ভবতী মা, থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত রোগী, বøাড ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী, কিডনি ডায়ালসিস, রক্ত স্বল্পতা, দুর্ঘটনার শিকার মানুষসহ বিভিন্নজন। সংগঠনের এড্মিন হাবিবুর রহমান বলেন, ২০১৫ সালের তারা চট্টগ্রামের বিভিন্ন রক্তদাতা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাথে জড়িত থেকে কাজ করে আসছে। রক্ত দিয়ে এলাকার সাধারণ মানুষের জীবন বাঁচানোর লক্ষ্য নিয়ে ইলিয়াছ হায়দার, শহীদুল ইসলাম, ফয়সাল আসিফ, দিলশাদ হৃদয়সহ কয়েকজন তরুন সংগঠিত হয়। ২০১৭ সালের ১২ নভেম্বর রাঙ্গুনিয়া ব্লাড ব্যাংক নামে স্বেচ্ছাসেবী এ সংগঠনের যাত্রা শুরু হয়। তিনি আরো বলেন, সংগঠনটি এখন ফেসবুক পেইজ ও গ্রুপের মাধ্যমে তাদের কর্মকান্ড চালান। সারাদেশে তাদের নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠেছে। এ নেটওয়ার্ক যোগাযোগের মাধ্যমে নিয়মিত রক্তদান করে যাচ্ছে সদস্যরা। এছাড়া বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিনা মূল্যে ব্লাড গ্রুপিংয়ের মাধ্যমে রক্ত সংগ্রহ করেন তারা। সংগঠনের পক্ষ থেকে গত ৩ বছরে ৬৫টি রক্তদান কর্মসূচি, বিনামূল্যে ব্লাড গ্রুপিং, থ্যালাসেমিয়া সচেতনতামূলক প্রচারপত্র বিলি করা হয়। আগামী মাস থেকে রাঙ্গুনিয়ায় স্কুল ও কলেজে রক্তদানে উৎসাহিত করতে সচেতনতামূলক সভা করবে তারা। সংগঠনের অন্য এডমিন শহীদুল ইসলাম বলেন, মানুষ যখন রক্তের জন্য খুব বিপদে পড়ে যান তখন আমরা এগিয়ে যাই জীবন বাঁচাতে। কারো জীবন বাঁচাতে পারলে, মুখে হাসি ফোটাতে পারলেই আমাদের চেষ্টা সার্থক বলে মনে হয়। শুধু রক্তদান নয় সংগঠনের সদস্যরা বিভিন্ন সামাজিক কাজে অংশ গ্রহন করে। রক্ত পেয়ে উপকৃত রাজা নগর ইউনিয়নের রাজার হাট এলাকার আহমদ কবির (২৬) জানান, থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর রক্ত জোগাড় করতে খুবই কষ্ট ছিল। এখন আর কষ্ট হয়না। দুই বছর ধরে সংগঠনের সদস্যরা প্রতিমাসে আমাকে রক্ত দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছে। রক্ত গ্রহনের সময় তাদের মুঠোফোনে জানালে হাসপাতালে গিয়ে রক্ত দিয়ে আসে সংগঠনের সদস্যরা। থ্যালাসেমিয়া রোগী চন্দ্রঘোনার মো. রাজু, পারুয়ার আমেনা বেগম সরফভাটার আবুল কাশেমকে গত দুই বছর ধরে সংগঠনের সদস্যরা পর্যায়ক্রমে রক্ত দিয়ে আসছেন। রক্ত পেয়ে উপকৃত উপজেলার মরিয়ম নগরের বাসিন্দা আবদুল মালেক জানান, তার স্ত্রীর অপারেশনের জন্য ৩ ব্যাগ রক্ত দেয় এ সংগঠনের সদস্যরা। তাদের দেয়া রক্ত না হলে তার স্ত্রীর জীবন বাঁচানো যেতনা বলে তিনি জানান। ব্যবসায়ী মাহাবুবুল আলম সিকদার জানান, সংগঠনের সবাই তরুণ। কারো রক্তের প্রয়োজন আমি তাদের সাথে যোগাযোগ করতে বলি। কারো হঠাৎ রক্ত প্রয়োজন হলে তাদের খবর দেয়া হয়। রক্ত দিয়ে তারা অনেকেই মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে। রাঙ্গুনিয়া সরকারি কলেজের ড. অধ্যাপক মুহাম্মদ আবদুল মাবুদ জানান, সমাজের অনেক তরুন খারাপ কাজে অযথা সময় নষ্ট করেন, বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। সংগঠনের সদস্যরা অযথা সময় নষ্ট না করে এলাকায় মানুষের জরুরী রক্তের প্রয়োজন হলে ছুটে যান। যেকোনো গ্রুপের রক্ত তারা সংগ্রহ করে দেন কিংবা রক্ত দাতা খুঁজে নেন। তাদের এসব কর্মকান্ড সত্যিই প্রশংসনীয়।