পোর্ট কানেক্টিং ও এক্সেস রোডের কাজ দ্রুত শেষ করার নির্দেশ মেয়রের

পোর্ট কানেক্টিং রোড এবং আগ্রাবাদ এক্সেস রোডসহ নগরীতে জাইকার অর্থায়নে চলমান প্রকল্পের কাজ আগামী মে মাসের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। বিশেষ করে যেসব সড়ক সংস্কারের কাজ চলছে সেগুলোই দ্রুত শেষ করতে ঠিকাদার এবং প্রকল্প পরিচালককে এ নির্দেশনা দেন। গতকাল নগর ভবনে অনুষ্ঠিত প্রকল্প মূল্যায়ন সভায় এ নির্দেশনা দেয়া হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘সামনে বর্ষা আসছে। জনদুর্ভোগ এড়াতে বর্ষার আগেই কাজ দ্রুত শেষ করার দিকে আমরা জোর দিচ্ছি। তাই এ বিষয়ে আমরা প্রকল্পের মূল্যায়ন সভা করেছি। পিডিও (প্রকল্প পরিচালক) ছিল সভায়। এখানে ঠিকাদাররা তাদের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেছে। কিন্তু আমি বলেছি, পুরোনো ধ্যান-ধারণা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য। মে মাসের মধ্যেই কাজ শেষ করতে বলেছি। তারাও রাজি হয়েছে। নতুন করে আমরা ‘ওয়ার্ক শিডিউল’ (অনুসূচী) তৈরি করেছি। দু’পক্ষই এখানে স্বাক্ষর করেছে।’ অপর এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, চলমান কাজের নিয়মিত মনিটরিং করা হবে। প্রতিমাসে দুইবার করে ঠিকাদারদের সঙ্গে বসে অগ্রগতি কার্যক্রম পর্যালোচনা করা হবে।
এদিকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, জাপান সরকারের উন্নয়ন সংস্থা ‘জাইকার অর্থায়নে চট্টগ্রাম মহানগরীতে ‘সিটি গর্ভনেন্স প্রজেক্ট’ (সিজিপি) এর আওতায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে দুুটি প্যাকেজে (ব্যাচ-১ ও ২) উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলমান আছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। এরমধ্যে ব্যাচ- ১ এর আওতায় রয়েছে ১৫৬ কোটি ২৫ লাখ টাকার উন্নয়ন প্রকল্প। ব্যাচ-২ এর আওতায় রয়েছে ২২৬ কোটি ৯৯ লাখ টাকার উন্নয়ন প্রকল্প। এরমধ্যে ব্যাচ-১ এর প্রকল্পগুলোর মেয়াদ ছিল ২০১৪ সালের জুলাই থেকে ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত। কিন্তু বর্তমানে ব্যাচ-১ এ ভুক্ত প্রকল্পের মধ্যে তিনটির কাজও এখনো চলমান আছে। ব্যাচ-২ এর মেয়াদ হচ্ছে ২০১৬ সালের জুন থেকে ২০২০ সালের জুলাই পর্যন্ত। ব্যাচ-২ এর কিছু প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে অসন্তোষ আছে নাগরিকদের। নগরবাসীর অভিযোগ, ধীরগতির কাজ চলায় দুর্ভোগ বাড়ছে তাদের।
এদিকে প্রকল্পের অগ্রগতি রিপোর্ট পর্যালোচনায় দেখা গেছে, পোর্ট কানেকটিং রোড এবং আগ্রাবাদ এঙেস রোড ব্যাচ-২ এর আওতাভুক্ত। গত ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত পোর্ট কানেকটিং রোডের অগ্রগতি হয়েছে ৪৬ শতাংশ। আগ্রাবাদ এঙেস রোডের অগ্রগতি হয়েছে ৪৯ শতাংশ। একই ব্যাচভুক্ত ‘সৎসংঘ আশ্রম নিবাস থেকে সরণি পর্যন্ত ২ কিলোমিটার সড়কের উন্নয়ন কাজ চলছে ৬০ কোটি টাকায়। ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত প্রকল্পটির কাজের অগ্রগতি ৭১ শতাংশ।
এদিকে গতকাল অনুষ্ঠিত বৈঠকে সিটি মেয়র ঠিকাদারদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনারা অতীতের ধ্যান-ধারণা থেকে বেরিয়ে আসুন। অতীতে কাজ নিয়ে বসে থেকে দিনের পর দিন অতিবাহিত করার যে প্রবণতা অনেকের মধ্যে ছিল, সে মানসিকতা এখন আর চলবে না।’ মেয়র আরো বলেন, ‘ব্যক্তিগত উপকার ভোগ অথবা নিজের পকেট ভারী করার মানসিকতা নিয়ে যদি কোনো ঠিকাদার কাজ করে থাকেন, এটি মোটেও ভাল চিন্তা নয়। তাই এ চিন্তা থেকে বেরিয়ে এসে কাজ করার মানসিকতা লালন করতে হবে।’
তিনি বলেন, জাইকার অর্থায়নে পোর্ট কানেকটিং, আগ্রাবাদ একস্‌েস রোড়, পতেঙ্গা স্কুল, মহব্বত আলী স্কুল, আহমদ মিয়া স্কুল, লালদীঘি লাইব্রেরি ভবন, পশ্চিম মাদারবাড়ী ও পুর্বমাদারবাড়ী স্কুলসহ ১৭টি প্রকল্প রয়েছে। তিনি বলেন, ‘কেউ যদি চসিকের চলমান উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে নেতিবাচক কোনো কথা বলেন, অথবা এসবের বিরুদ্ধে নেতিবাচক খবর বের হয় তখন আমার খুব কষ্ট লাগে। কারণ উন্নয়ন কাজগুলো হয় জনগণের টাকা দিয়ে। তারা যদি এর কারণে কষ্ট পায় কিংবা এ নিয়ে নেতিবাচক চিন্তা তৈরি হয় তখন আমাদের বিষয়টি ভাবার যথেষ্ট কারণ আছে।’ তিনি আরো বলেন, ঠিকাদারদের কাজ নেওয়ার প্রথম যোগ্যতা হলো কাজ করার সক্ষমতা থাকা। কাজের সক্ষমতা নেই এমন ঠিকাদারের কাজ নেওয়াই উচিত না। এতে দেশের স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ব্যক্তির স্বার্থের চেয়ে দেশের স্বার্থ অনেক উর্ধ্বে।
সভায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সামসুদ্দোহা, প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমদ, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আনোয়ার হোছাইন, আলহাজ্ব আবু ছালেহ,মনিরুল হুদা, নিবার্হী প্রকৌশলী আবু সাদত মোহাম্মদ তৈয়ব, ফরহাদুল আলম, ঝুলুন কুমার দাশ, বিপ্লব দাশ, সুদীপ বসাক ও জাইকার প্রজেক্ট ডাইরেক্টর অহিদুল ইসলাম, সিনিয়র ফিল্ড ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম, মোহাম্মদ তুষার আহমদ, মোহাম্মদ নাসির উদ্দিনসহ চসিক নিবার্হী প্রকৌশলী এবং ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষে মোহাম্মদ জাকির হোসেন, ইঞ্জিনিয়ার আবির,আলী হোসেন, ইমন, সাইফুল, ইঞ্জিনিয়ার রশিদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন