মাদারীপুরের শিবচরের ‘পাগলী’ বলে খ্যাত মানসিক ভারসাম্যহীন সালমার মেয়ে জান্নাতুল হাবিবা হুমাইরা অবশেষে একটি নিরাপদ আশ্রয় পেয়েছে। পেয়েছে একটি নতুন ঠিকানা, নতুন বাবা-মা।
গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানতে পেরে চট্টগ্রামের এক নিঃসন্তান দম্পতি শিশুটিকে দত্তক হিসেবে ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নেন। গতকাল শনিবার রাতে শিবচর উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে শিশুটিকে ওই পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এসময় শিশুটিকে উদ্ধারকারী চার বন্ধু অমি, সাগর, ইব্রাহীম, আজিজসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
চাকরিসূত্রে সিলেটে অবস্থানকারী ওই নিঃসন্তান দম্পত্তি বিচার বিভাগের ঊর্ধ্বতন পদে কর্মরত হলেও তাদের পরিচয় গণমাধ্যমকে প্রকাশ করতে চাননি।
উদ্ধারকারী চার বন্ধুর সূত্রে জানা যায়, গেলো মঙ্গলবার রাতে মাদারীপুর উপজেলার শিবচরে স্থানীয় হাতিরবাগান মাঠে কন্যাশিশু প্রসব করেন পয়ত্রিষোর্ধ্ব এক মানসিক ভারসাম্যহীন নারী। ঘটনার পর ওই চার বন্ধু কাছে এসে দেখেন, নবাগত শিশুটির চোখে-মুখে বালি লেগে আছে। বেঁচে আছে কিনা বোঝা যাচ্ছে না। নিরুপায় হয়ে তারা আশেপাশের কয়েকজন নারীর সহায়তা নেন। কিন্তু মহিলাদের অনেকে এসে জড়ো হলেও কেউ মানসিক ভারসাম্যহীন বলে তার শিশুটির নাড়ি কাটতে রাজি হচ্ছিলেন না। পরে উপায় না দেখে চার বন্ধু মিলে দ্রুত শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মা ও নবজাতককে। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সরা, শিশু ও তার মায়ের পরিচর্যা করে সুস্থ করে তোলেন।
তখন চারবন্ধু পরিচয় জানতে চাইলে অসংলগ্নভাবে নিজের নাম সালমা বলে জানান ভারসাম্যহীন নারী।
মাদারীপুরের সরকারি বরহামগঞ্জ কলেজের শিক্ষার্থী উদ্ধারকারী জাহিদ হাসান অমি বলেন, খুব কষ্ট নিয়েই ওকে বিদায় দিলাম। কারণ ওর মা যেহেতু মানসিক প্রতিবন্ধী; তার কাছে শিশুটির বেড়ে ওঠা ঝুঁকিপূর্ণ। তবে শিশুটিকে দত্তক দেয়ায় ওকে নিয়ে শংকা কাটলো। ওর ভালো একটি ভবিষ্যতের আশা করছি আমরা। এখন ওর মাকে যদি ভালো চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যেতো তাহলে ভালো হতো। আমরা চেষ্টা করবো তাকে পাবনা কিংবা ঢাকার মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে।
শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান আহমেদ বলেন, শিশুটির মা ও শিশুটি সুস্থ আছে। তাকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হয়েছে। নবজাতক শিশু ও মানসিকভাবে অসুস্থ নারীকে হাসপাতালে ভর্তির পর থেকে আমরা সব ধরনের সহযোগিতা করেছি। শিশুটির ভবিষ্যৎ চিন্তা করে একটি ভালো সামাজিক মর্যাদাসম্পন্ন পরিবার গ্রহণ করেছে। শিশুটিকে তারা সন্তানের মর্যাদায় লালন-পালন করবেন। আজ থেকে শিশুটি তাদের পরিবারের একজন সদস্য হয়ে গেলো।