পাকিস্তানকে হারিয়ে বাংলাদেশের জয়

ফেভারিটের তকমা নিয়ে ঘরের মাঠে অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ শুরু করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু প্রথম ম্যাচেই হোঁচট। ডেথ গ্রুপের আরেক শক্তিশালী দল শ্রীলংকার কাছে একেবারে অসহায় আত্নসমর্পন করে টুর্নামেন্ট শুরু করে বাংলাদেশ। ফলে শংকায় পড়ে যায় নিজেদের মাঠে এশিয়া কাপে ভাল করার সম্ভাবনাটা। তবে দ্বিতীয় ম্যাচে এসে ঘুরে দাড়াল জুনিয়র টাইগাররা। গতকাল টুর্নামেন্টে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে পাকিস্তান অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিপক্ষে ৩ উইকেটের জয়ে টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে খেলার আশা বাঁচিয়ে রাখলো বাংলাদেশের যুবারা। প্রথম ম্যাচে ব্যাট কিংবা বল কোন বিভাগেই ভাল করতে পারেনি বাংলাদেশের যুবারা। ফলে শ্রীলংকার কাছে পাত্তাই পায়নি। তবে গতকাল ব্যাটে আর বলে সমান তালে লড়েছে স্বাগতিকরা। তবে ফিল্ডিংয়ে একাধিক ক্যাচ মিস এবং লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতা কপালে চিন্তার ভাজটা একটু বড় হচ্ছে বাংলাদেশ শিবিরে। তবে পাকিস্তানের বিপক্ষে জয় তুলে নেওয়াতেই স্বস্তি বাংলাদেশ শিবিরে। বড়দের এশিয়া কাপে বাংলাদেশের কাছে হেরেছিল পাকিস্তান। গতকাল পাকিস্তানের যুবারা পারলনা সে হারের প্রতিশোধ নিতে। উল্টো হেরে বসল তারা। পাকিস্তানি যুবাদের করা ১৮৭ রানের লক্ষ্য ৪৭.২ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে পেরিয়ে যায় বাংলাদেশ। যদিও ম্যাচের শেষ দিকে শামীম হোসেন আহত হয়ে মাঠ ত্যাগ করলে বাংলাদেশের উপর একটু চেপে বসার চেষ্টা করেছিল পাকিস্তান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটা আর করতে পারেনি তারা।
জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের যুবাদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে শুরুটা ভাল করতে পারেনি পাকিস্তান। উদ্বোধনী জুটিতে ৩০ রান আসলেও বাংলাদেশের রিশাদ হোসেনের ঘূর্ণির মুখে পড়ে রানের চাকা একেবারে স্লথ হয়ে আসে পাকিস্তানের। ফলে ২৮ বল আগেই অলআউট হয়ে যায় পাকিস্তান। স্কোরবোর্ডে জমা করতে পারে মাত্র ১৮৭ রান। একপর্যায়ে ১৩২ রান তুলতেই ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে পাকিস্তান। সেখান থেকে দলকে টেনে নিয়ে যান ওয়াকার আহমেদ এবং জুনাইদ। এ দুজন ৫২ রানের জুটি গড়ে তুলে। তবে এ জুটি ভাঙ্গার পর আর দাঁড়াতে পারেনি পাকিস্তানের পরের ব্যাটসম্যানরা। মাত্র তিন রানে শেষ চারটি উইকেট হারিয়েছে পাকিস্তান। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৬৭ রান করেন ওয়াকার আহমেদ। এছাড়া ৪৯ রানের ইনিংস খেলেন ওপেনার সাইম আইয়ূব। বাংলাদেশের পক্ষে বল হাতে ৩টি উইকেট নেন লেগস্পিনার রিশাদ হোসেন। এছাড়া ১৭ রানে ২ উইকেট নেন বাঁহাতি পেসার শরীফুল ইসলাম। ১টি করে উইকেট নিয়েছেন মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী, অভিষেক দাস ও রাকিবুল হাসান।
১৮৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই ওপেনার তানজিদ হাসান ফিরে গেলে ভয় ঢুকে যায় বাংলাদেশ শিবিরে। তবে বেশ সাবলীলভাবেই ভয়কে জয় করেন প্রান্তিক নওরোজ ও শামীম হোসেন। তবে দ্বিতীয় উইকেটে সাজিদ এবং প্রান্তিক মিলে ২৯ রানের বেশি যোগ করতে পারেননি। ২১ রান করে সাজিদ ফিরলেও দলকে টেনে নিয়ে গেছেন প্রান্তিক। তিন নম্বরে ব্যাট করতে নেমে তুলে নেন হাফ সেঞ্চুরি। সাজিদ ফিরে আসার পর প্রান্তিকের সাথে যোগ দেন অধিনায়ক তৌহিদ হৃদয়। কিন্তু তিনিও পারলেননা ইনিংসটা বড় করতে। ১০ রান করে ফিরলেন টাইগার দলপতি। ৪২ রানেই তিন উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ। এরপর চতুর্থ উইকেটে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন শামীম ও প্রান্তিক। দুজন মিলে গড়েন ৯৭ রানের জুটি। একপর্যায়ে মনে হচ্ছিলো এ জুটিতেই ম্যাচ জিতে যাবে বাংলাদেশ। তবে দলীয় ১৩৯ রানের মাথায় বিলালের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরেন প্রান্তিক। ৯৩ বলে চারটি চারের সাহায্যে তার ব্যাট থেকে আসে ৫৮ রানের ইনিংস। প্রান্তিক ফিরে গেলেও দলের দায়িত্ব নিয়ে এগুতে থাকেন শামীম। তিনিও তুলে নেন নিজের হাফ সেঞ্চুরি। তবে দলের জয় নিশ্চিত করে যেতে পারেননি তিনি। জয় থেকে মাত্র ১০ রান দূরে থাকতে ছক্কা মারার পর আহত হয়ে মাঠ ছাড়েন শামীম। তার ব্যাট থেকে আসে ১০৫ বলে ৬৫ রানের ইনিংস। যেখানে ৫টি চারের পাশাপাশি ২টি ছক্কার মার ছিল। শেষদিকে মাত্র ১০ রানের ব্যবধানে তিন উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশ শিবিরে ভীতি জাগিয়েছিল পাকিস্তান। তবে উইকেটরক্ষক আকবর আলি এক প্রান্ত আগলে রেখে দলের জয় নিশ্চিত করেই মাঠ ছাড়েন। ৩১ বলে ১৭ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। পাকিস্তানের পক্ষে ২৪ রানে ৩টি উইকেট নেন মোহাম্মদ মুসা। তবে ম্যাচ সেরা হয়েছেন বাংলাদেশের শামীম হোসেন। তার হাতে পুরস্কার তুলে দেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সহ সভাপতি আলহাজ্ব আলী আব্বাস। এসময় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক এবং বাংলাদেশ জাতীয় দলের ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজন এবং জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের ভেন্যু ম্যানেজার ফজলে বারী খান রুবেল উপস্থিত ছিলেন। আজ গ্রুপ পর্বের শেষ এবং গুরুত্বপূর্ণ এক ম্যাচে বাংলাদেশ মুখোমুখি হবে দুর্বল হংকং এর। টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে খেলতে হলে এই ম্যাচে হংকংকে বড় ব্যবধানে হারাতে হবে। সে সাথে শ্রীলংকার কাছে হারতে হবে পাকিস্তানকে। কারণ গতকালের জয়ের ফলে ২ ম্যাচে ১ জয় নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের তিন নম্বরে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। ২ ম্যাচের ২টিতেই জেতা শ্রীলঙ্কা রয়েছে সবার উপরে। বাংলাদেশের সমান ২ পয়েন্ট হলেও নেট রানরেটে এগিয়ে থেকে বাংলাদেশের উপরে অবস্থান করছেন পাকিস্তান।

তথ্যসূত্রে- দৈনিক আজাদী