দক্ষিণ চট্টগ্রামে সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ

গেলো বছর দফায় দফায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ভারী বৃষ্টিপাতে বন্যায় দক্ষিণ চট্টগ্রামের অর্ধ লাখেরও বেশি কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। অনেকেই ঋণের টাকা নিয়ে আউশ, আমন ধান ও গ্রীষ্মকালে সবজির আবাদ করেছিল।

প্রাকৃতিক দুর্যোগে কৃষকের আবাদ করা ফসল নষ্ট হওয়ায় অনেকে দেউলিয়ার মতোই হয়ে পড়েছিল। সেই ক্ষতি কাটিয়ে এবার চাষিরা নেমেছে নানা জাতের আলু আবাদে। সেখানেও বিপদ দেখা দিয়েছে। সপ্তাহ খানেক পরে মাঠে আলু তুলার ধুম পড়বে।

কয়েকটি উপজেলায় আলু রোপনের পরেই চারাতে দেখা দিয়েছে ভাইরাস। অগ্রহায়ণের শুরুতে জমিতে আলু রোপণ করার কিছুদিন পর চারা গজালে কিছুদিন চারাগুলো ভাল থাকে। পরে আস্তে আস্তে আলুখেতে পাতা মোড়ানো (মোজাইক) ভাইরাস দেখা দেয়। চারা ভাইরাসে আক্রান্ত দেখে কৃষকরা কৃষি কর্মকর্তাদের কাছে ছুটে যান। কৃষি বিভাগের লোকজনের পরামর্শে খেতে কীটনাশক ছিটিয়ে চারা থেকে ভাইরাস সরানোর চেষ্টা করেন।

ভাইরাসের কারণে আলু গাছের পাতাগুলো মুড়িয়ে গাছের সতেজতা কমে যায়। ফলে গাছে আলু ধরলেও তা শিমবিচির আকারে থেকে যায়, কোনভাবেই বড় হয় না। মোজাইক ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় এ মৌসুমে আলু ফলনের লক্ষ্যমাত্রা অর্ধেকে নেমে আসতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন কৃষি বিভাগ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

চলতি সৌসুমে শঙ্খের দুই তীরে চন্দনাইশে ৫৫০ হেক্টর, সাতকানিয়ায় এক হাজার ২০০ হেক্টর, বাঁশখালীতে ৬৯০ হেক্টর, পটিয়ায় ২০৫ হেক্টর, আনোয়ারায় ৩৪ হেক্টর, বোয়ালখালীতে ৭০ হেক্টর ও লোহাগাড়া উপজেলায় ৭৮০ হেক্টরসহ চার হাজার ৬৮৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের গোল আলু রোপণ করেছেন কৃষকেরা।

চট্টগ্রাম জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, গেলো বছর  ৩০ মে’র ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে জেলায় সবজি ও আউশ ধান নষ্ট হয়ে চার হাজার ৯৫০ কৃষি পরিবারে ১১ কোটি ৭৪ লাখ ৭৯ হাজার টাকার ক্ষতি হয়।

এছাড়া ২ জুলাই থেকে ৫ জুলাই পর্যন্ত পাঁচ দিনের ভারী বৃষ্টিপাতে আউশ ধানে ১০ হাজার ১৫ কৃষি পরিবারের ক্ষতি হয় ৬৩ লাখ ৫০ হাজার ৪০০ টাকার এবং ৭৭০ পরিবারের আমন বীজতলায় ক্ষতি হয় ১১ লাখ ৪২ হাজার টাকার। ১১ জুন থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত একটানা আট দিনের ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে ১১ হাজার ৯৪৪ পরিবারের ৬৬ কোটি আট লাখ টাকার গ্রীষ্মকালীন সবজির ক্ষতি সাধিত হয়। একই সময়ে আট হাজার ৯৯৫ কৃষি পরিবারের পাকা আউশ ধানের ক্ষতি হয় ১০ কোটি ২৪ লাখ ১২ হাজার ৮০০ টাকার। ২০ জুলাই থেকে ২৫ জুলাই টানা ছয় দিনের ভারী বৃষ্টিপাতে চার হাজার ৪৮০ কৃষি পরিবারের আমন আবাদে ক্ষতি হয় তিন কোটি ৯২ লাখ ৩৬ হাজার টাকার।

একই সময়ে দুই হাজার ১৫৫ কৃষি পরিবারের ১২ কোটি ৭৭ লাখ ২ হাজার টাকার শরৎকালীন শাকসবজির ক্ষতি হয়। পাঁচ হাজার ৪৫ কৃষি পরিবারের আউশ ধানে ১০ কোটি ৫১ লাখ ৯৬ হাজার টাকা এবং তিন হাজার ৬৫০ কৃষি পরিবারের আমন বীজতলার ক্ষতি হয় দুই কোটি ৭৪ লাখ ৪ হাজার টাকার। সর্বশেষ ১০ থেকে ১৪ আগস্ট পর্যন্ত একটানা পাঁচ দিনের ভারী বৃষ্টিপাতে ১৬ হাজার ২০ পরিবারের রোপা আমনে ২৬ কোটি ৩৪ লাখ ১৮ হাজার ৪০০ টাকা এবং ৫৯০ কৃষি পরিবারের আমন বীজতলার ক্ষতি হয় ১৭ লাখ ৬৮ হাজার টাকার।

সূত্র জানায়, প্রতি বছর পাহাড়ি ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাতে দক্ষিণ চট্টগ্রামের শঙ্খ নদী তীরবর্তী হাজার হাজার কৃষি পরিবার শরৎ, গ্রীষ্ম ও শীতকালীন শাক-সবজিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

সাতকানিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা শোয়েব মাহমুদ বলেন, আলু চাষে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে খবর পেয়ে একটি টিম গঠন করে কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ভাইরাসের সংক্রামন থেকে পরিত্রাণে আলুখেতে কৃষকরা কীটনাশক ছিটিয়েছে। গঠন করা টিমের লোকজন সার্বক্ষণিক মাঠে গিয়ে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।

চট্টগ্রাম জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আমিনুল হক চৌধুরী বলেন, গেলো বছরের ক্ষতি পুষিয়ে এলাকার চাষিরা দোহাজারী জাত ছাড়াও উচ্চ ফলনশীল জাতের (উফশী) ডায়মন্ড ও কার্ডিনাল জাতের আলু আবাদ করেছেন। গেলো মৌসুমে চট্টগ্রাম জেলায় চার হাজার ৬৮৫ হেক্টর জমিতে গোলআলু চাষ হয়েছে।