বিপিএলের চলতি আসরটা মোটেও ভালো যাচ্ছিল না ওপেনার তামিম ইকবালের। ধারাবাহিকভাবে রান করে যাওয়া তামিমের ওপর দর্শকদের প্রত্যাশা বেশি থাকে। কিন্তু তার ব্যাট থেকে বড় স্কোর আসছিলই না। যা নিয়ে নিজেই নিজের দুশ্চিন্তার কথা জানিয়েছিলেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের এই ড্যাশিং ব্যাটসম্যান।
প্রথম ম্যাচে ৩৪ বলে ৩৫ রান করে দলকে জিতিয়েছিলেন তামিম। কিন্তু এরপর থেকেই তার ব্যাটে রান নেই। পরের চার ম্যাচে যথাক্রমে ৪, ২১, ০, ০! তামিম ইকবালের নামের সঙ্গে এই ইনিংস কোনোভাবেই মানানসই নয়।
সেই বেমানান চিত্রটা নামের পাশে আর লম্বা হতে দিলেন না তামিম। ব্যাট হাতে ঝলক দেখালেন দেশসেরা ওপেনার। তামিম ঝলকে আলোকিত হল দলও। খুলনা টাইটানসকে ৩ উইকেটে হারিয়ে রোমাঞ্চকর জয় পায় তারা। ছয় ম্যাচে এটি তামিমদের চতুর্থ জয়।
টানা চার হারের পর আগের ম্যাচেই শক্তিশালী ঢাকা ডায়নামাইটসের বিপক্ষে প্রথম জয় পেয়েছিল খুলনা টাইটানস। সেই জয় তাদের তাতিয়ে দিয়েছিল বলেই মনে হয়। আগে ব্যাট করে তাই ১৮১ রানের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিল মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল।
খুলনা টাইটানসের দেয়া ১৮২ রানের টার্গেটে ব্যাটিংয়ে নেমে দুর্দান্ত শুরু করে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। উদ্বোধনীতে ১১৫ রানের জুটি গড়েন তামিম ইকবাল ও এনামুল হক বিজয়। এই বিপিএলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জুটি এটি।
এর আগে উদ্বোধনীতে ১১৬ রানের জুটি গড়েন ডায়নামাইটসের দুই বিদেশি ক্রিকেটার হযরতউল্লাহ জাজাই ও সুনীল নারিন। বিপিএলের দ্বিতীয় ম্যাচে রাজশাহী কিংসের বিপক্ষে এই রান করেন তারা।
সবশেষ দুই ম্যাচে শূন্য রানে আউট হওয়া তামিম, সিলেটের বিপক্ষে শুক্রবার অসাধারণ ব্যাটিং করেন। চলতি বিপিএলে তুলে নেন প্রথম ফিফটি। একের পর শটে বল বাউন্ডারি ছাড়া করেন তিনি। ২৮ বলে তুলে নেন হাফসেঞ্চুরি।
লাসিথ মালিঙ্গার স্লো বল স্লো খেলতে গিয়ে মিড উইকেটে ধরা পড়েন তামিম। বিদায় নেয়ার আগে ৪২ বলে ১২টি চার ও এক ছক্কায় ৭৩ রান করেন ফেরেন তামিম।
তামিম ফিরতেই যেন ছন্দ হারায় কুমিল্লা। স্কোর বোর্ডে আর ১৪ রান যোগ হওয়ার পর আউট হন এনামুল হক বিজয়। অনেক ধীরে ব্যাট করা বিজয় ৩৭ বলে করেন ৪০ রান। এক রান করে শামসুর রহমান রানআউট হলে কিছুটা চাপে পড়ে কুমিল্লা।
তবে ঝড় তুলে দলের চাপ বেশ খানিকটা কমিয়েছিলেন ইমররুল কায়েস। তাকে জুনায়েদ খানের বলে থামতে হয় তাকে। ফেরার আগে অবশ্য ১১ বলে তিন ছক্কা ও এক চারে খেলে যান ২৮ রানের ঝকঝকে ইনিংস।
ইমরুল ফেরার সুবিধান করতে পারেননি লিয়াম ডাউসনও। পাকিস্তানি পেসার জুনায়েদের দ্বিতীয় শিকার হয়ে তিনি ফেরেন ৪ রান করেই। কুমিল্লা দ্রুত তিন উইকেট হারালে ম্যাচ জমে যায়। শেষ তিন ওভারে দরকার পড়ে ২৯ রানে। আর শেষ দুই ওভারে ১৯। ব্যাটে তখন শহিদ আফ্রিদি ও থিসারা পেরেরা। ১৯তম ওভারে জুনায়েদ খানের প্রথম বলেই বিশাল ছক্কা মারলেন আফ্রিদি। ম্যাচ ঝুঁকে গেল কুমিল্লার দিকে।
কিন্তু পরের বলেই আউট আফ্রিদি। আবার জমে গেল ম্যাচ। কিন্তু তখনও যে ক্রিজে আছেন পেরেরা। প্রথম ম্যাচে যিনি ২৬ বলে ৭৪ রানের ইনিংস খেলে নিজের সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছিলেন। জুনায়েদের চতুর্থ বলে চার মেরে ম্যাচ নিজের পক্ষে নিলেন পেরেরা। পরের বলে এক রান। কিন্তু শেষ বলে আবার আউট জিয়াউর রহমান। ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে শূন্য রানেই ফেরেন তিনি।
শেষ ওভারে কুমিল্লার প্রয়োজন হয় ৮ রানের। প্রথম বল ওয়াইড। পরের বল ডট। দ্বিতীয় বলে এক রান নেন সাইফউদ্দিন। তৃতীয় বলে চার মেরে ম্যাচ নিজেদের পক্ষে নিয়ে আসেন পেরেরা। আর চতুর্থ বলে বিশাল ছক্কা মেরে ম্যাচ শেষ করেন দুই বল আগেই। তাদের স্কোর দাঁড়ায় ৭ উইকেটে ১৮৬। পেরেরা এক ছক্কা ও দুই চারে ৭ বলে ১৮ রানে অরপাজিত থাকেন।
খুলনার হয়ে ৩২ রানে চার উইকেট নিয়ে সফল বোলার জুনায়েদ খান। একটি করে উইকেট নেন মাহমুদউল্লাহ ও মালিঙ্গা।
এর আগে জুনায়েদ সিদ্দিকের ৭০ রানে ভর করে ১৮১ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়ে খুলনা টাইটানস।