তামিম ইকবালের মহাকাব্যিক ইনিংসে ঢাকা ডায়নামাইটসকে ১৭ রানে হারিয়ে বিপিএলের ষষ্ঠ আসরের শিরোপা মুঠোবন্দী করল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। এটি কুমিল্লার দ্বিতীয় শিরোপা। এর আগে ২০১৫ সালে শিরোপা জিতেছিল কুমিল্লা। অন্যদিকে টানা দ্বিতীয়বার রানার্সআপে সন্তুষ্ট থাকতে হল ঢাকাকে। প্রথম বিপিএল ফাইনাল, প্রথম শিরোপার সুবাস। ফাইনালটা যেন স্মরণীয় করতে মাঠে নেমেছিলেন তামিম। মিরপুরের মাঠে ধ্রুপদী ব্যাটিংয়ে রানে ফুলঝুড়ি ছড়িয়ে ফাইনালের মঞ্চটা নিজের করে নিলেন দেশসেরা ওপেনার। শেষ ম্যাচে ব্যাট হাতে বাজিমাত করে কাঁদালেন সাকিবকে। বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে উড়িয়ে দিলেন ঢাকার বোলিং। চোখধাঁধানো সব শটে উপহার দিলেন অসাধারণ এক সেঞ্চুরি। দারুণ সব কীর্তিতে গাঁথলেন রেকর্ডের মালা। অতিমানবীয় ইনিংসে কুমিল্লাকে উপহার দিলেন শিরোপা। অবশ্য বন্ধু তামিমের কাছে শিরোপা হাতছাড়া করলেন নতুন একটি রেকর্ড গড়লেন সাকিব। ফাইনালে এনামুল হক বিজয়কে ফিরিয়ে দিয়ে বিপিএলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ২৩ উইকেট নিয়ে উইকেট শিকারির শীর্ষে এখন ঢাকা দলপতি। চলতি আসরে তামিম নিজের ছায়া হয়েই ছিলেন প্রায়। খুলনা টাইটান্সের বিপক্ষে ৪২ বলে ৭৩ রানের ইনিংসটা ছাড়া আসর জুড়ে তিনি ছিলেন অনেকটাই নিষ্প্রভ। তবে ফাইনালের মঞ্চে এই ড্যাশিং ওপেনার ঢাকার বোলারদের ওপর তা-ব চালান। তাঁর ঝড়ো সেঞ্চুরিতে ভর দিয়ে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৩ উইকেটে ১৯৯ সংগ্রহ করে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। জবাবে শুরুটা দুর্দান্ত হলেও শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৮২ রানের বেশি সংগ্রহ করতে পারেনি ঢাকা।
মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে কুমিল্লার শুরুটা ছিলো ধীর গতির। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই মারকুটে এভিন লুইসকে (৬) এলবিডব্লিউ করেন রুবেল হোসেন। কুমিল্লার তখন রান মাত্র ৯। তামিম ইকবাল ধীর গতিতে ব্যাট চালিয়ে খেলেন প্রথম দশ ওভার। সঙ্গে এনামুল বিজয়ও খেলতে থাকেন দেখে শুনে। ১০ ওভার শেষেও কুমিল্লার রান ১ উইকেটে ৭৩। ঢাকার ফিল্ডার আর ভাগ্যের সহযোগিতা মিলিয়ে দুবার করে জীবন পেয়েছেন এনামুল হক ও তামিম ইকবাল। তবে খোলসবন্দী তামিম ইকবাল খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসেন দশ ওভার পর। প্রথম পাওয়ার প্লেতে রানের চাকা সমৃদ্ধ না হওয়ায় কুমিল্লার দর্শকরা তখনো বড় সংগ্রহের আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন। তবে সেটা মিথ্যা প্রমাণিত করলেন তামিম। বারুদ ঠাসা এক ইনিংসে উড়িয়ে দিলেন ঢাকার বোলারদের। যার সবটুকু লুকিয়ে রেখেছিলেন প্রথম দিকে। যার বিপিএলে এর আগে ছিলো না কোনও সেঞ্চুরি। একই সঙ্গে এবারই প্রথম বিপিএল ফাইনালে খেললেন কুমিল্লার হয়ে। বিদেশি তারকারা যেখানে আলোকিত করছেন বিপিএল, সেখানে ফাইনালে এক বিধ্বংসী ইনিংসেই সব অতৃপ্তি মেটালেন বাঁহাতি ওপেনার। ১১তম ওভারে শুভাগত হোমকে পিটিয়ে ফিফটিটা পেয়ে গেলেন তামিম। ৩১ বলে ৫০, বেশ আক্রমণাত্মক ইনিংস। কিন্তু তখনো আসল ঝড় আসা বাকি। ১৫তম ওভারে প্রথম ঝড় শুরু রুবেলকে দিয়ে। ২ চার ও ২ ছক্কায় ২৩ রান তুলে নিলেন তামিম। ১৭তম ওভারে আন্দ্রে রাসেলের ছয় বলে ২ চার ও ২ ছক্কা। এর মাঝে প্রথম চার ও ছক্কাতেই সেঞ্চুরি পেয়ে গেলেন ৫০তম বলেই। দ্বিতীয় ফিফটি এল ১৯ বলে। সে ওভারে এল ২২ রান। পরের ওভারে সাকিবকে পেয়ে টানা দুই বলে চার ও ছয়। ১৯তম ওভারে অবশ্য মাত্র একটি ছক্কা। শেষ ওভারেও এক ছক্কাসহ এল ১০ রান। কুমিল্লাও থামল ১৯৯ রানে। তামিমও সন্তুষ্ট হলেন ১৪১ রানেই। ৬১ বলের ঝড়ে চার ১০টি ও ছয় ১১টি। ফাইনালের মঞ্চে ছক্কাটাই এগিয়ে রাখলেন তামিম। এর আগে মাঝখান দিয়ে ভুল বোঝাবুঝিতে শামসুর রান আউট হলে অধিনায়ক ইমরুল অপর প্রান্তে থেকে সঙ্গ দিয়েছেন শুধু ১৭ রান করে। অবশ্য এনামুল বিজয় ৩০ বলে ২৪ রানে এলবিডব্লিউ হলেও ভুল সিদ্ধান্তের বলি হয়েছেন। রিভিউ না থাকায় ব্যাটে বল লাগলেও সাজঘরের পথ ধরতে হয়েছে তাকে। ঢাকার অধিনায়ক সাকিব ১ উইকেট নিতে খরচ করেন ৪৫ রান আর রুবেল খরচ করেন ৪৮ রান, বিনিময়ে তিনিও নেন একটি।
২০০ রানের বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই হোঁচট ঢাকার। ইনিংসের দ্বিতীয় বলে সুনিল নারিন শূন্য রানে ফিরে যান রানআউট হয়ে। এরপর উপুল থারাঙ্গা আর রনি তালুকদারের ৫২ বলে ১০২ রানের ভয়ংকর এক জুটি। মনে হচ্ছিল এই জুটিতেই ম্যাচটা হাতে চলে আসবে ঢাকার। ভয় ঢুকে গিয়েছিল কুমিল্লা শিবিরে। তবে ঘুরে দাঁড়িয়ে ম্যাচটা নিজেদের করে নেয় কুমিল্লার বোলাররা। ২৭ বলে ৪৮ রান করা থারাঙ্গাকে ফিরিয়ে জুটিটি ভাঙেন থিসারা পেরেরা। এরপরই ছন্দপতন ঢাকার। ওয়াহাব রিয়াজের শিকার হয়ে সাকিব আল হাসান ফিরে যান মাত্র ৩ রানে। পরের ওভারেই রানআউটের কবলে পড়েন ২৬ বলে ফিফটি করা রনি তালুকদার। ৩৮ বলে ৬ বাউন্ডারি আর ৪ ছক্কায় তিনি খেলেন ৬৬ রানের ইনিংস। এরপর হতাশ করেছেন দুই ক্যারিবীয় আন্দ্রে রাসেল আর কিয়রেন পোলার্ড। রাসেল ৩ বলে ৪ আর পোলার্ড ১৫ বল খেলে মাত্র ১৩ করে আউট হন। ১৪১ রান ৬ উইকেট হারিয়ে পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে চলে আসে ঢাকা। শেষ দিকে নুরুল হাসানের ১৮ ও মাহমুদুল হাসানের ১৫ রানে জয়ের ব্যবধান কমায় সাকিবের দল। কুমিল্লার ওয়াহাব রিয়াজ ৩টি, সাইফুদ্দিন ও পেরেরা ২টি করে উইকেট নেন।