ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রধান বিরোধী জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহবায়ক ড. কামাল হোসেন ভোট নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ফের আলোচনায় (সংলাপ) বসার আহবান জানানোর একদিন পরেই সরকারের তরফে ইতিবাচক সাড়া মিলল। গতকাল রবিবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানালেন, ৩০ ডিসেম্বরের ভোটের আগে যেসব রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে সংলাপ হয়েছিল, তাদের সঙ্গে ফের আলোচনায় বসবেন প্রধানমন্ত্রী।
ওবায়দুল কাদের বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দেশের সব রাজনৈতিক দলকে সংলাপের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। ঐক্যফ্রন্ট ও যুক্তফ্রন্টসহ ৭৫টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে গণভবনে সংলাপ হয়েছিল। এখন নির্বাচন শেষ হয়েছে, তাই যাদের সঙ্গে সংলাপ হয়েছিল, তাদেরকে ফের আমন্ত্রণ করা হবে। তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাদের আপ্যায়নের ব্যবস্থা থাকবে। তিনি আরো বলেন, একসঙ্গে সবাইকে দাওয়াত দেওয়া হবে। সেটা খুব শিগগিরই জানিয়ে দেওয়া হবে। সব রাজনৈতিক দল গণভবনে আমন্ত্রিত হবে। ঐক্যফ্রন্ট আছে, যুক্তফ্রন্ট আছে, ১৪ দল আছে, জাতীয় পার্টি আছে, অন্যান্য যেসব দল আছে, সবাইকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। যাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী সংলাপ করেছিলেন, তাদেরকে চিঠি দিয়ে আমন্ত্রণ জানানো হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ‘জাতীয় সংলাপ’ করার আহবানের পরেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তরফে এমন বার্তা দেওয়া হল। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমন্ত্রণ জানানো হলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট কী সংলাপে যাবে ? এ ব্যাপারে গতকাল বিএনপি ও গণফোরামের দু’জন নেতাকে ফোনে যোগাযোগ করার পর তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আগে আমন্ত্রণ হোক, তারপরে দল ও জোটে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এদিকে ওবায়দুল কাদেরে কাছে সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিলো কবে নাগাদ এ সংলাপ হতে পারে? তবে সে বিষয়টি স্পষ্ট করেননি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এক প্রশ্নে কাদের বলেন, সংলাপে আসলে আমরা বিভিন্ন বিষয় আলোচনা করতে পারি। বিএনপির প্রতি আমাদের অনুরোধটা রিনিউ করতে পারি। বলতে পারি, সংসদে আসুন। সম্পর্কটা রিনিউ করতে পারি।
নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের প্রার্থী করা ‘ভুল’ ছিল বলে যে স্বীকারোক্তি কামাল হোসেন দিয়েছেন, সে বিষয়েও ওবায়দুল কাদেরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সাংবাদিকরা। জবাবে এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, জামায়াত মানে বিএনপি, বিএনপি মানে জামায়াত। কামাল হোসেন সাহেব জেনেশুনে কেন ভুল করলেন, সেই ভুলের খেসারত তাকেই দিতে হবে।
বিএনপিসহ কয়েকটি নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত দল নিয়ে গতবছর ১৩ অক্টোবর গণফোরাম সভাপতি কামাল হোসেনের নেতৃত্বে সাত দফা দাবিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামের নতুন জোট গঠন করা হয়। জাতীয় সংসদ ভেঙে, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি ছিল এই জোটে সাত দফার মধ্যে। ভোটের তফসিল ঘোষণার জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতির মধ্যেই ওই সাত দফা দাবিতে সংলাপের আহ্বান জানানো হয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে। অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তাদের আলোচনায় বসার আহবানে সাড়া দিয়ে আমন্ত্রণ জানান তাঁর সরকারি বাড়ি গণভবনে। পরে কামাল হোসেন নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে গণভবনে আলোচনায় বসেন আওয়ামী লীগ নেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারপরের ঘটনা হল- একে একে বিভিন্ন দল ও জোটের সঙ্গে ভোট নিয়ে সংলাপ করেন শেখ হাসিনা। সাত দফার একটি দফা পূরণ না হলেও ‘আন্দোলনের অংশ হিসাবে’ নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দেয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট তথা বিএনপি।
৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে মাত্র আটটি আসন পাওয়া ঐক্যফ্রন্ট শপথ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে অবিলম্বে পুনঃনির্বাচনের দাবি জানায়।