টেকনাফে সাড়া জাগিয়েছে মুরগির খামার হতে উৎপন্ন বায়ো গ্যাসকে সিএনজি তে রূপান্তরের একটি প্রকল্প। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন না হলেও ইতিমধ্যে কার, মাইক্রো মালিকরা এ স্টেশন থেকে গ্যাস সংগ্রহ করে তাদের চাহিদা পূরণ করছে। সরকারী-বেসরকারি আর্থিক সহায়তা ছাড়া শুধু মাত্র ব্যক্তি উদ্যোগে প্রায় আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পটি এখন আলোর মুখ দেখেছে। দীর্ঘ চার বছর ধরে ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এ ধরনের একটি অনিশ্চিত কাজ বাস্তবায়ন করতে পেরে বেশ খুশি প্রকল্পের উদ্যোক্তা কবির আহমদ।
এক সময় প্রাকৃতিক সম্পদ ও পর্যটনের সম্ভাবনার সীমান্ত শহর ছিল টেকনাফ। কালের পরিক্রমায় ইয়াবা শহরে পরিগণিত হতে থাকে টেকনাফ । সম্প্রতি এই শহরের কয়েক কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণ মেরিন ড্রাইভ সড়কের অতি সন্নিকটে প্রায় এক যুগ ধরে মুরগীর খামারের ব্যবসা পরিচালনা করছেন স্থানীয় কবির আহমদ। ১২ বছরে খামারের সংখ্যা বাড়তে থাকে। কয়েক কিলোমিটার এলাকায় তার রয়েছে ৬ টি খামার। যেখানে প্রায় ৪৫ হাজার মুরগি ডিম দিচ্ছে। এসব মুরগীর বিষ্টা নিয়ে বেকায়দায় পড়ে কবির আহমদ। এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে উঠে দূগর্ন্ধে। এ থেকে এলাকাকে রক্ষা করতে উদ্যোগী হয় খামারী কবির আহমদ। চার বছর অক্লান্ত চেষ্টার পর সফলও হন তিনি। টেকনাফ সদর ইউনিয়নের খোনকার পাড়া এলাকায় মেরিন ড্রাইভ সড়কে মুরগির খামারের পাশেই গড়ে তুলেন সাগর ফিলিং ষ্টেশন।
কবির আহমদ বলেন, সহকর্মী এক খামারীর পরামর্শে গড়ে তোলে ব্যায়ো গ্যাস প্রকল্প। এতে তিনি একদিকে পরিবেশ রক্ষা করবেন অন্যদিকে উৎপাদিত ব্যায়ো গ্যাস এলাকায় বিক্রি করবেন।
কিন্তু উৎপাদিত গ্যাস কোথাও কাজে লাগাতে পারছিলেন না। সিদ্ধান্ত নিলেন আরো বেশী আর্থিক ঝুঁকি নেবেন। ব্যায়ো গ্যাসকে সিএনজি জাতীয় গ্যাসে রূপান্তরের। তাই চেষ্টা করতে লা্গলেন চার বছর ধরে। দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যায়ো গ্যাস প্রকল্প দেখে আসেন । বিভিন্ন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিলেন কিন্তু কোন কাজ হচ্ছিল না। সর্বশেষে ভারত সফর করে অভিজ্ঞতা শেয়ার করলেন। এখানে এসে তা প্রয়োগ করলেন। সফল হলেন। চলতি বছরের প্রথম থেকে ্এ প্রকল্প আলোর মুখ দেখতে পেলো। খরচ হলো প্রায় আড়াই কোটি টাকা। কোন সরকারি-বেসরকারি সংস্থা হতে আর্থিক সহযোগিতা না নিয়ে খামারের আয়ের টাকা দিয়েই এ সাফল্য অর্জন করেছেন বলে জানান কবির আহমদ। এখন প্রতিদিন তার সিএনজি স্টেশন হতে ১৫/২০ হাজার টাকার গ্যাস বিক্রি করছেন। ১০ টি সিলিন্ডারে বায়ো গ্যাস হতে সিএনজি রূপান্তন করে তিনি কার-মাইক্রোতে সীমিত আকারে গ্যাস সরবরাহ দিয়ে যাচ্ছেন। তার দাবি এটি দেশে প্রথম এ ধরনের একটি প্রকল্প। টেকনাফের মাইক্রো চালক নুরুল আলম বলেন, অন্যান্য সিএনজি গ্যাস হতে ব্যায়োগ্যাস একটু হালকা মনে হয়। একটু এডজাস্ট করে দিতে হয়। তখন পুরোপুরি ঠিক হয়ে পরিস্কার ভাবে গাড়ি চালানো যায়। তিনি আরো বলেন, আমাদের গাড়িগুলোতো সিএনজি ফরম্যাটে এডজাস্ট করা থাকে। যখন বায়োগ্যাস ব্যবহার করা হয় তখন টুনিং একটু পরিবর্তন করে দিলেই হয়। গাড়ী চালক নুরুল আলম বলেন, টেকনাফে এই গ্যাস পাওয়ার ফলে গাড়ি মালিকরা অনেক সাশ্রয় মূল্যে ভাড়া যেতে পারছেন। টেকনাফ হতে বায়োগ্যাস নিয়ে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম যায়। আর সেখান হতে সিএনজি গ্যাস নিয়ে টেকনাফ আসছি এখন আমরা। এতে আমরা আর্থিকভাবে অনেক লাভবান হচ্ছি।
এলাকার যুবক বশির আহমদ বলেন, প্রথম প্রথম এলাকার অনেকে উদ্যোক্তা কবির আহমদকে ভারসাম্যহীন ভাবতে শুরু করে। কিভাবে এত দিন ধরে লাখ লাখ টাকা খরচ করছে এখানে। কেউ চিন্তাও করেনি। বায়োগ্যাস উৎপাদন করে তা রূপান্তর করে গাড়িতে জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে । কিন্তু চার বছর ধরে অদম্য চেষ্টায় সফল হয়েছে। এখন এখানে প্রতিদিন অনেক কার-মাইক্রো গ্যাস নিতে আসে। সাগর ফিলিং স্টেশনের মালিক কবির আহমদ বলেন, এ প্রকল্পটি ছড়িয়ে দিতে পারলে গোটা দেশে আরো অনেক উদ্যোক্তা তৈরী হবে তাই সংশ্লিষ্টদের নজর দেওয়া দরকার বলে মনে করেন তিনি।