চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের জন্য ২ হাজার ৪২৫ কোটি ৪২ লাখ ৮২ হাজার টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে সিটি করেপারেশনের কেবি আবদুস ছাত্তার মিলনায়তনে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন এ প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করেন। এটি মেয়র নাছিরের চতুর্থ বাজেট।
একই সঙ্গে বিগত ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের ৮৮৩ কোটি ৩৮ লাখ ৭০ হাজার টাকার সংশোধিত বাজেটও উত্থাপন করেন তিনি। ২০১৭-২০১৮ প্রস্তাবিত বাজেটের ৩৮ শতাংশ পূরণ করতে পেরেছে চসিক। আরও ৬৮ শতাংশ ঘাটটি ছিল এই সংশোধনী বাজেটে।
মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে নিজস্ব উৎস থেকে আয় ধরা হয়েছে ৬৯৪ কোটি ৯২ লাখ ৮২ হাজার টাকা, সরকারি অনুদান আশা করা হয়েছে ১ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা এবং অন্যান্য উৎস থেকে আয় ধরা হয়েছে ৫০ কোটি ৩০ লাখ টাকা।
মেয়র বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে সিডিএ ৫ হাজার ৬ শত কোটি টাকার মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। একাজে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সিটি করপোরেশন সহযোগিতা করছে। গত তিন বছরে জলাবদ্ধতা নিরসনে নগরীর প্রতিটি সড়কের পাশে পরিকল্পিত ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে।
আ জ ম নাছির আরো বলেন, সিটি করপোরেশনের আবশ্যিক সেবা কার্যক্রম হচ্ছে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, রাস্তাঘাট সংস্কার ও মেরামত এবং সড়ক বাতির মাধ্যমে আলোকায়নের ব্যবস্থা করা। এর বাইরেও শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক কর্মকা- পরিচালনা করে থাকে। প্রতি বছর শিক্ষাখাতে ৪৩ কোটি টাকা ও স্বাস্থ্যখাতে ১৩ কোটি টাকা যা মোট ৫৬ কোটি টাকা ভর্তুকি প্রদান করার নজির বাংলাদেশে আর কোনো সিটি করপোরেশনের নেই। এছাড়া বিভিন্ন প্রকল্পের ফিরিস্তি তুলে ধরা হয় বাজেটে। এই বাজেটকে বাস্তবধর্মী বাজের বলেও মন্তব্য করেন মেয়র নাছির।
চসিক সূত্রে জানা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য ২ হাজার ৪২৫ কোটি ৪২ লাখ ৮২ হাজার টাকার প্রস্তাবিত মোট বাজেটের মধ্যে চসিকের নিজস্ব খাত থেকে আয় ধরা হয়েছে ৬৯৪ কোটি ৯২ লাখ ৮২ হাজার টাকা। এর মধ্যে বকেয়া কর ও অভিকর ১৯১ কোটি ৮ লাখ, হাল কর ও অভিকর ১৪৪ কোটি ৩৪ লাখ, অন্যান্য করাদি ১৩৩ কোটি ২ লাখ, ফিস ৯৯ কোটি ৮০ লাখ, জরিমানা ৫০ লাখ, সম্পদ হতে অর্জিত ভাড়া ও আয় ৭৩ কোটি ১০ লাখ, লভ্যাংশ ৫ কোটি, বিবিধ আয় ২৩ কোটি ৪২ লাখ, ভর্তুকি ২৪ কোটি ৬৫ লাখ ধরা হয়েছে।
এছাড়া ত্রাণ সাহায্য ২০ লাখ, উন্নয়ন অনুদান ১ হাজার ৬৮০ কোটি ও অন্যান্য উৎস ৫০ কোটি ৩০ লাখসহ মোট আয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৭৩০ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
অন্যদিকে, বাজেটে বেতনভাতা ও পারিশ্রমিক, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ, ভাড়া-কর ও অভিকর, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও পানি, কল্যাণমূলক ব্যয়, ডাক তার ও দূরালাপনী, আতিথেয়তা ও উৎসব, বীমা, ভ্রমণ ও যাতায়াত, বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা, মুদ্রণ ও মনিহারি, ফিস বৃত্তি ও পেশাগত ব্যয়, প্রশিক্ষণ ব্যয়, বিবিধ ব্যয় ও ভা-ারখাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৪২ কোটি ৮৭ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এছাড়া ত্রাণ ব্যয়, বকেয়া দেনা, স্থায়ী সম্পদ, উন্নয়ন (রাজস্ব ও এডিপি) ও অন্যান্য ব্যয় খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৮৮০ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহার সভাপতিত্বে বাজেট অধিবেশনে প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা নাজিয়া শিরিন, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী, সচিব মো. আবুল হোসেন, প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন, কাউন্সিলর নাজুমল হক ডিউক, মো. গিয়াস উদ্দিন, আবিদা আজাদ, আবদুল মালেক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বাজেট অনুষ্ঠানে মেয়রের পক্ষে আয়-ব্যয়ের হিসাব উপস্থাপন করেন অর্থ বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর শফিউল আলম।
এরআগে বাজেট পেশ উপলক্ষে বিশেষ সাধারণ সভায় সভাপতিত্ব করেন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। এ বিশেষ সাধারণ সভায় বাজেট প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। পরে ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরের বাজেট অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা। সাংবাদিক ও কাউন্সিলরদের উপস্থিতিতে মেয়র ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরের বাজেট বক্তব্য উপস্থাপন করেন।