মাথায় টাক মানেই দুশ্চিন্তা। টাক নিয়ে দুশ্চিন্তাহীন মানুষ পাওয়া কঠিন। নারী-পুরুষ সকলের কাছেই এটা এক ধরনের আতঙ্ক। টাক নিয়ে দেশে প্রথমবারের মতো গবেষণা শুরু করেছেন দুই নারী চিকিৎসক। তারা হলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগের ডা. মোছাম্মৎ নাসরিন সুলতানা ও ডা. সুবর্ণা আফরিন। চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ডা. নাসরিন সুলতানা ‘নারী-পুরুষের মাথায় থোকা থোকা টাক সমস্যার ধরন ও প্রকোপ নির্ণয়’ শিরোনামে গবেষণা করছেন। আর ডা. সুবর্ণা আফরিন গবেষণা করছেন ‘মহিলাদের মাথায় ক্ষতবিহীন টাকের ধরন ও প্রকোপ নির্ণয়’ শিরোনামে। গত ৮ সেপ্টেম্বর থেকে দুজনে গবেষণার স্যাম্পল সংগ্রহ শুরু করেছেন। বিভাগীয় প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ রফিকুল মওলার তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে এ গবেষণা কার্যক্রম।
এ বিষয়ে ডা. মোহাম্মদ রফিকুল মওলা বলেন, মাথায় টাক সমস্যার সমাধানে দেশে প্রথমবারের মতো আমরা গবেষণা শুরু করেছি। গবেষণা কার্যক্রম সম্পন্ন করতে দুই বছর সময় লাগবে। আশা করছি, একটি সমাধানে পৌঁছাতে পারব।
চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিদিন ৫০ থেকে ১০০টা চুল পড়ে যাওয়া স্বাভাবিক। রক্তশূন্যতা, সন্তান প্রসবের পর, দীর্ঘমেয়াদি জ্বর, অসুস্থতা বা মানসিক চাপ এবং হরমোনজনিত কারণে চুল পড়ে। চিকিৎসা করলে এক্ষেত্রে অনেক সুফল পাওয়া যায়। হঠাৎ মাথার কোনো অংশে চুল পড়ে যাওয়াকে অ্যালোপেসিয়া এরিয়াটা বলা হয়। এরও চিকিৎসা আছে। অনেকের বংশগত কারণে বেশি চুল পড়ে। আবার ভুল শ্যাম্পু, স্প্রে বা অয়েন্টমেন্ট ব্যবহারের কারণেও চুল পড়ে। চুল পড়া বা টাকের পরিচর্যায় প্রথম দিকে কিছু স্প্রে বা ওষুধ, ভিটামিন ইত্যাদি দিয়ে চুল পড়া কমানোর চিকিৎসা করা হয়। পরবর্তী আধুনিক চিকিৎসা হলো পিআরপি। চুল পড়া সমস্যায় বিচলিত হয়ে পড়েন নারী-পুরুষ সকলেই। এ আতঙ্ক চিরতরে দূর করতে হলে সমস্যার সঠিক কারণ খুঁজে বের করা প্রয়োজন।
চুল পড়া বা বিভিন্ন ধরনের টাকের কারণ, প্রকোপ ও এর সমাধান খুঁজতে শুরু হওয়া গবেষণা কার্যক্রমে দুই চিকিৎসক ৩৮৫ করে মোট ৭৭০ জন রোগীর কাছ থেকে স্যাম্পল সংগ্রহ করবেন দুই বছরে। ৮ সেপ্টেম্বর থেকে স্যাম্পল সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর তিন মাসে প্রতিদিন ৫/৬ জন রোগীর কাছ থেকে স্যাম্পল সংগ্রহ করা হচ্ছে।
গবেষণার সাথে সম্পৃক্ত ডা. মোছাম্মৎ নাসরিন সুলতানা ও ডা. সুবর্ণা আফরিন বলেন, মাথায় চুল পড়া বা টাক সমস্যা মানুষকে সবচেয়ে বেশি চিন্তায় ফেলে। এ সমস্যার কারণ, প্রকোপ ও সমাধান বের করার অংশ হিসেবেই আমরা গবেষণা কার্যক্রম শুরু করেছি। এতে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারব বলে বিশ্বাস করি। বহিঃবিভাগে আসা রোগীদের অবস্থা দেখে দুজনে এ ধরনের গবেষণায় মনস্থির করি।
চর্ম ও যৌনরোগ বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, বর্তমানে প্রতিদিন এ বিভাগে গড়ে ৫০০ রোগী চিকিৎসা নেওয়ার জন্য আসেন। শীত ও গরমকালে রোগীর সংখ্যা কম-বেশি হয়ে থাকে। গরমের সময় গড়ে ৬০০ রোগী চিকিৎসা নেওয়ার জন্য আসে বহিঃবিভাগে। রোগী ভর্তি করিয়ে এ বিভাগে চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা আছে ২০ জনের। আর প্রতিদিন মাথায় চুলপড়া বা টাক সংক্রান্ত রোগী আসে ১৫/২০ জন। এসব রোগীর কাছ থেকেই সংগ্রহ করা হয় গবেষণার স্যাম্পল।
গবেষণা কার্যক্রম তত্ত্বাবধানকারী চর্ম ও যৌনরোগ বিভাগের প্রধান ডা. মোহাম্মদ রফিকুল মওলা বলেন, চুলপড়া বা মাথায় টাক নিয়ে এর আগে দেশের কোথাও গবেষণা হয়নি। প্রথমবারের মতো এ ধরনের গবেষণা এক্ষেত্রে অনেক সমস্যার সমাধান এনে দেবে আমাদের সামনে। নানা কারণে বর্তমানে চুলের সমস্যা বেড়ে যাওয়ায় এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকেন সংশ্লিষ্ট রোগীরা। দুচিন্তার কথা মাথায় রেখেই এ গবেষণা।
আলাকিত সাতকানিয়া/এইচএম