মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক-দুটো পরীক্ষাতেই উত্তীর্ণ হয়েছেন জিপিএ-৫ পেয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষাতেও রেখেছেন কৃতিত্বের ছাপ। পড়াশোনা শেষে সরকারি কর্মকর্তা হওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে নিয়মিত যেতেন সেমিনার-লাইব্রেরিতে। অ্যাকাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি সাহিত্য কিংবা ইতিহাসের বইয়ে ডুবে থাকতেন সারাক্ষণ।
স্বপ্ন সত্যি করতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী শারমিন আক্তারের এতসব চেষ্টাই যেনো এখন বৃথা হওয়ার পথে!
বইয়ে ডুবে থাকা মেয়েটি হঠাৎ করেই ‘নিউমোনিয়া টাইপ টু রেসপিরেটরি ফেইলিওর সেপটিসেমিয়া উইথ সেপটিক শক’ এবং ‘হাইপোআলবুনেমিয়া’ রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন হাসপাতালের আইসিইউয়ে।
চোখের সামনে একমাত্র মেয়েটি মৃত্যু পথযাত্রী হলেও শারমিনের বাবা মো. শামসুজ্জামানের কিছুই করার নেই। মেয়েকে বাঁচাতে শেষ সম্বল ২ কাঠা জমি বিক্রি করে কয়েক লাখ টাকা যোগাড় করলেও ইতোমধ্যে শেষ হয়ে গেছে তার পুরোটাই। আর্থিক সাহায্যের জন্য শেষ বয়সে কার কাছে ধর্না দেবেন-তা ভেবেই সময় কাটছে অসহায় এ বাবার।
মো. শামসুজ্জামান জানান, সারাদিন কৃষিকাজ করে যা রোজগার হতো, তা দিয়েই ছেলে-মেয়েকে পড়াশোনা করিয়েছি। নিজের কষ্ট হলেও ওদের বুঝতে দিইনি। আশায় ছিলাম, পড়াশোনা শেষ করে তারা সংসারের হাল ধরবে। কিন্তু তার আগে আল্লাহ আমাকে, আমার মেয়েকে ‘পরীক্ষায়’ ফেললেন। মেয়েকে বাঁচাতে এখন আমি কী করবো? কার কাছে যাবো? কে সাহায্য করবে আমাকে? এসব বলতে বলতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
শারমিন আক্তারের বড় ভাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহিনুর আলম জানান, ২য় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে গত ৫ জানুয়ারি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে শারমিন। প্রাথমিকভাবে তাকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি করা হলেও পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ৮ তারিখ অবস্থার অবনতি হলে বিকেলে তাকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন হাসপাতালের এইচডিইউয়ে (হাই ডিফেন্সিভ ইউনিট) ভর্তি করা হয়।
তিনি বলেন, ১১ তারিখ শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি ঘটলে লাইফ সাপোর্টে তাকে ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে আইসিইউয়ে (ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট) রেসপিরেটরি মেডিসিনের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. চন্দ্র প্রকাশ দোকওয়ালের তত্বাবধানে তার চিকিৎসা চলছে।
ডাক্তারের উদ্ধৃতি দিয়ে শাহিনুর জানান, শারমিন নিউমোনিয়া টাইপ টু রেসপিরেটরি ফেইলিওর সেপটিসেমিয়া উইথ সেপটিক শক এবং হাইপোআলবুনেমিয়া রোগে আক্রান্ত। এটি এক ধরনের ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনজনিত রোগ। এ রোগের ব্যাকটেরিয়া রক্তের মাধ্যমে শরীরের সব অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে। এতে বিভিন্ন অঙ্গ বিকল (মাল্টি অর্গান ফেইলিওর) হয়ে পড়ে। ইতোমধ্যে ব্যাকটেরিয়া শারমিনের ফুসফুস এবং যকৃত ফাংশনকে প্রায় অকেজো করে দিয়েছে। তার অক্সিজেন সেটারেশন রেইট, যকৃতের অ্যালবুমিন সিনথেসিস ফাংশন এবং কিডনির ইলেকট্রোলাইট ইমব্যালেন্স সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে।
তিনি বলেন, ডাক্তাররা জানিয়েছেন-শারমিনের রোগের চিকিৎসা প্রক্রিয়া দীর্ঘমেয়াদি এবং জটিল। এ জন্য প্রায় ২৫-৩০ লাখ টাকা প্রয়োজন। এত টাকা এত কম সময়ে কীভাবে যোগাড় হবে তা ভেবে পাচ্ছি না।
শারমিনের হঠাৎ এমন রোগে আক্রান্ত হওয়া মেনে নিতে পারছেন না তার বিভাগের সহপাঠী এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও। সমাজের বিত্তবানদের কাছে আর্থিক সহযোগিতা দেওয়ার অনুরোধের পাশাপশি নিজেরাও সংগঠিত হয়ে চেষ্টা করছেন শারমিনের জন্য আর্থিক সাহায্য সংগ্রহের।
বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুলতানা সুকন্যা বাশার জানান, প্রথম বর্ষ থেকেই শারমিন নিয়মিত ক্লাসে আসতো। শ্রেণি কার্যক্রমে তার উপস্থিতিও ছিলো প্রাণবন্ত। বই পড়তে দারুণ পছন্দ করতো। সারাক্ষণ বইয়ে ডুবে থাকা মেয়েটির হঠাৎ এমন দশা মেনে নিতে পারছি না। আশা করি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সমাজের বিত্তবানরা শারমিনের চিকিৎসায় এগিয়ে আসবেন।
বিভাগের চেয়ারম্যান ড. এএসএম বোরহান উদ্দীন জানান, শারমিন আমাদের মেধাবী শিক্ষার্থী। তাকে বাঁচাতে বিভাগের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা আমরা করছি। উপাচার্য স্যারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকেও আর্থিক সাহায্য পেতে আমরা চেষ্টা করছি। তবে যেহেতু শারমিনের চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি এবং ব্যয় সাপেক্ষ, তাই সমাজের বিত্তবানদের কাছেও আমাদের আবেদন থাকবে-শারমিনের চিকিৎসায় তারাও আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে এগিয়ে আসবেন, মেধাবী এ শিক্ষার্থীর পাশে দাঁড়াবেন।
সাহায্য পাঠানোর ঠিকানা:
ব্যাংক হিসাব নম্বর: ০২০০০০২৯ ১০৩৯৮, হিসাবধারীর নাম: শাহিনুর আলম, অগ্রণী ব্যাংক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। বিকাশ নম্বর: ০১৮৫৭-৫১৫০২৯, রকেট নম্বর: ০১৭১৮-৭২২৫৪৮-২। যোগাযোগ: শাহিনুর আলম, মোবাইল নম্বর: ০১৭৫১-১৯৩১৫৫