চন্দনাইশ-সাতকানিয়ায় বিক্রি হচ্ছে রোহিঙ্গাদের ত্রাণ সামগ্রী

মিয়ানমার থেকে বলপ্রয়োগে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা শরনার্থীদের জন্য বাংলাদেশ সরকারসহ দাতা দেশও বিভিন্ন সংস্থা কতৃক দেয়া বিভিন্ন পদের ত্রাণসমগ্রী এখন অবাধে বিক্রি হচ্ছে চন্দনাইশ সাতকানিয়া উপজেলার হাটবাজারগুলোতে।

প্রায় প্রকাশ্যে খোলাবাজারে পসরা সাজিয়ে কোন না কোন হাট বা বাজারে এসব সামগ্রী বিক্রি করতে দেখা যায় প্রায় প্রতিদিন। কোন কোন গ্রামেও এসব সামগ্রী ফেরি করে বিক্রি করতেও দেখা যাচ্ছে। রোহিঙ্গা শরনার্থী অথবা আগে থেকে এদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের কয়েকজনের ছোট ছোট দল মিলে বস্তায় ভরে ত্রাণের এসব সমগ্রী নিয়ে বাস ট্রাকে করে এসে দুই উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজার বা লোক সমাগম হওয়া স্থানগুলোতেই ভ্রাম্যমান দোকান খুলে বসে বিক্রি করছে। প্রায় প্রকাশ্য দিবালোকে এসব ত্রাণে প্রদত্ত মালামাল বিক্রি করলেও তাদেরকে কোন বাধাঁ বিপত্তির সম্মুখিন হতে দেখা যায়নি কখনো।

বিশেষ করে কক্সবাজারের কুতুপালং শরনার্থী ক্যাম্প থেকে আসার পথে আইন শৃংখলা বাহিনীর চেকপোস্টগুলোতে কড়াকড়ি আরোপ না থাকায় সহজেই ত্রাণের এসব মালমাল খোলাবাজারে চলে আসছে আর এলাকার লোকজনও নির্বিঘ্নে এসব সামগ্রী কিনে নিয়ে যাচ্ছে অনেকটা উৎসাহের সাথে।

গত ২১ এপ্রিল বিকেলে দোহাজারী হাজারীবাজারের মাংশের দোকানের সামনে দুই রোহিঙ্গা পিতাপুত্র মিলে ত্রাণসামগ্রী বিক্রির দোকান সাজিয়ে বসেছে। এ সময় তাদের বিক্রিত ত্রাণের মধ্যে ছিল শিশুখাদ্য সেরেলাক, লবণ, মশারী, ত্রিপলসহ আরো কয়েকটি পণ্য। এ সময় ছবি তোলার বিষয়টি টের পেয়ে দ্রুত এক রোহিঙ্গা বস্তা নিয়ে সরে গেলেও পাশাপাশি একইস্থানে পিতাপুত্র মিলে দু’জনেই নির্বিঘ্নে ত্রাণের মালামাল বিক্রি করতে দেখা যায়। তাদের সাথে কথা বলতে চাইলে তারা কোন কথা না বলে নির্বাক হয়ে এ প্রতিবেদকের দিকে চেয়ে থাকে।

দোহাজারী বাজারে ত্রাণের সামগ্রী বিক্রেতাদের কাছ থেকে শিশুখাদ্য সেরেলাক কিনে নেয়া গনমাধ্যম কর্মী মোহাম্মদ এরশাদ ও স্থানীয় কৃষক লীগ নেতা নবাব আলী জানালেন ইটালীতে প্রস্তুতকৃত দেড় কেজি ওজনের প্রতি প্যাকেট সুপার সিরিয়াল গ্লাস নামের ৬ মাসের বেশী বয়সী শিশুদের জন্য খাদ্য হিসাবে দেয়া সেরেলাক মাত্র ৯০ টাকায় কিনে নিয়েছেন। যা এমনিতেই দোকান থেকে কিনতে গেলে চার থেকে সাড়ে চারশ টাকা লাগার কথা। ভ্রাম্যমান রোহিঙ্গাশপের আশেপাশে দাড়ানো লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায় এসব ত্রাণসামগ্রী অধিক সস্তায় পাওয়া যাওয়ার কারনে মানুষ এগুলো কিনে নিয়ে যাচ্ছে।

এ লোকগুলোর সাথে কথা বলে আরো জানা যায় রোহিঙ্গারা একেক সময় একেক ধরনের মালামাল বিক্রি করতে নিয়ে আসে। যেগুলোর মধ্যে চাল, ডাল, পাউডার দুধ, হাড়িপাতিলসহ নানা তৈজষপত্র, তাবু, পরিবারের প্রয়োজনীয় মালামাল এমনকি কাপড়চোপড়ও থাকে। কোন কোন এলাকায় গ্রামে গ্রামে ঘুরে ফেরি করে ত্রাণের এসব সামগ্রী বিক্রি করা হচ্ছে এমনটিও বললেন অনেকেই। আবার বিভিন্ন এলাকার এদেশীয় লোকজন রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে গিয়ে বিভিন্ন ত্রাণসামগ্রী সস্তায় কিনে নিয়ে এসে চন্দনাইশ সাতকানিয়ার হাটবাজার বা জনাকীর্ণ স্থানসমুহে উচ্চমুল্যে বিক্রি করতেও দেখা গেছে।

দুই উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সাথে কথা বলে জানা যায় দুই উপজেলার প্রায় প্রতিটি হাট বা বাজারে রোহিঙ্গারা অথবা এখানকার একশ্রেণীর ব্যবসায়ী নামধারীরা ত্রানের এসব মালামাল নিয়মিত বিক্রি করছে। সাতকানিয়ার কালিয়াইশ ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান মেম্বার মোহাম্মদ ইসমাইল বাবু, সাবেক মেম্বার এস এম জসীম উদ্দীন জানান তাদের এলাকায় প্রায় প্রতিদিন রোহিঙ্গাদের ত্রাণের কোন কোন সামগ্রী বিক্রি করতে আসছে অচেনা লোকজন।

সাবেক দোহাজারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বেগ জানান দোহাজারী হাজারীবাজারে প্রায় প্রতিদিনই রোহিঙ্গা শরনার্থীদের জন্য দেয়া ত্রাণের নানা পদের মালামাল প্রকাশ্যে বিক্রি করতে দেখা যায় স্বীকার করে বলেন এলাকায় জনসাধারনের মাঝে এসব মালামালের গ্রাহক চাহিদা থাকায় দিনে দিনে ত্রান সামগ্রী বিক্রির বাজার বেড়ে উঠছে। সূত্র : দৈনিক আজাদী