চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া উপজেলার শঙ্খ নদের চরে জমিতে আগাম শীতকালীন সবজি চাষে সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি কৃষক-কিষাণীরা কাজ করে যাচ্ছেন। এ যেন শঙ্খচরজুড়ে সবজি চাষের প্রতিযোগিতা। শত শত নারী-পুরুষ সমানতালে কাজ করে যাচ্ছেন। কেউ বীজ বপন করছেন, কেউ চারা রোপণ করছেন, কেউ রোপিত চারায় পানি দিচ্ছেন।
এত কাজের পরও কোনো ক্লান্তি নেই। সবারই লক্ষ্য শীত মৌসুম আসার আগেই বাজারে সবজির চালান পাঠিয়ে একটু বেশি দামে বিক্রি করে বাড়তি লাভ করা।
কৃষকরা বলছেন, চলতি বছরে প্রকৃতি এ অঞ্চলের সবজি চাষিদের সাথে বিরূপ আচরণ না করায় তারা একটু আগেভাগে শীতের সবজি চাষে নামতে পেরেছেন। তারা আশা করছেন, চলতি বছরে রেকর্ড পরিমাণ সবজি উৎপাদন হবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, শঙ্খ নদের দুই পাড়ের বিশাল বিশাল চর সবুজে ভরে উঠছে। বিশেষ করে চন্দনাইশ উপজেলার ধোপাছড়ি, দোহাজারী, বৈলতলী, বরমা এবং সাতকানিয়া উপজেলার পুরানগড়, বাজালিয়া, ধর্মপুর, কালিয়াইশ, খাগরিয়া, নলুয়া, চরতি ইউনিয়নের কমপক্ষে ৪০টি গ্রামের লক্ষাধিক কৃষক সারা বছর শুধুমাত্র সবজি চাষ করেই জীবিকা নির্বাহ করেন। চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া উপজেলার শঙ্খ উপকূলবর্তী সবগুলো চর ও জমির ৫০ হাজার একর জমিতে বেগুন, মুলা, ঢেঁড়স, বরবটি, শিম, ঝিঙে, শসা, করলা, চিচিঙ্গা, কচু, পেঁপে, লাউ, লালশাকের চাষ করা হচ্ছে। সপ্তাহখানেক পর শুরু হবে ফুলকপি ও বাঁধা কপি রোপণ।
জানা যায়, শঙ্খপাড়ের ১১ ইউনিয়নের ৫০টিরও বেশি গ্রামের লক্ষাধিক কৃষকের আগাম শীতকালীন মৌসুমি ফসলের এই চাষই হচ্ছে একমাত্র আয়ের উৎস। লালুটিয়া চরে চাষ করা সবজি চাষি নুরুল ইসলাম জানান, তিনি এবার প্রায় আড়াই একর জমি মালিকের কাছ থেকে খাজনায় নিয়ে ঢেঁড়শ, মুলা ও বেগুনের চাষ করেছেন। চাষ করতে তাকে ধারদেনা করে খরচ করতে হয়েছে আড়াই থেকে তিন লক্ষাধিক টাকা। আর কয়েকদিন পর ক্ষেত থেকে সবজি তোলা শুরু করার আশা করছেন তিনি। তিনি জানান, সঠিকভাবে সবজি বিক্রি করতে পারলে চলতি মৌসুমে তার আয় হতে পারে ১৫ লক্ষাধিক টাকা।
লালুটিয়া চরে চাষ করা আলী হোসেন, আইনুল হক, জাগির হোসেন, মোহাম্মদ মুছা, আবুল কালাম আবু, জহুর মিয়া, নুরুল হক, শামসুল ইসলাম মেম্বার, আবদুল আলম, মোজাহেরুল হক, আহমদ শফি, নুরুল ইসলাম, আলী আহমদ, হোসেন আলী, অবদুস ছবুর, মোজাম্মেল হক, জাফর আহমদসহ শত শত কৃষক শুনিয়েছেন চলতি বছরের আগামী শীতকালীন সবজির চাষ করে লাভের আশার কথা।
চাষিদের দেয়া তথ্য মতে, প্রতি একর সবজির খেত থেকে চার থেকে পাঁচ লাখ টাকার সবজি বিক্রি সম্ভব। তাদের দেয়া হিসাব অনুযায়ী, শুধুমাত্র কাটগড়, কালিয়াইশ, দোহাজারী, চাগাচর ও লালুটিয়া চরের ১০ হাজার একরের মতো জমি থেকে সবজি বিক্রি করে চলতি বছর আয় হবে প্রায় ২৫ কোটি টাকা।
চাষিরা বলেন, তাদের অনেকে কৃষি ব্যাংক, গ্রামীণ ব্যাংক, বিভিন্ন এনজিও এবং ঋণদান সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে আগাম সবজির চাষ করে থাকেন।
চন্দনাইশ উপজেলায় দোহাজারী পৌরসভার দায়িত্বে থাকা উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মৃণাল কান্তি দাশ বলেন, চলতি বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ এলাকার সবজি চাষিরা আগেভাগে শীতকালীন সবজি চাষে নামতে পেরেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চলতি বছর এ অঞ্চলে মৌসুমি সবজির বাম্পার ফলন হওয়ার আশা করছেন তিনি।