চট্টগ্রামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে রাজপথে ব্যবসায়ীরা

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বড় দারোগাহাট ও দাউদকান্দি এলাকায় গাড়ির ওজন পরিমাপক যন্ত্র স্থায়ীভাবে বন্ধের দাবিতে দোকান-আড়ত বন্ধ রেখে মানববন্ধন করেছেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা।

রোববার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে চট্টগ্রামের সর্ববৃহৎ ভোগ্যপণ্যের বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা দোকান-আড়ত বন্ধ রেখে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেন।

পরে তারা মিছিল নিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সামনে অবস্থান নেন এবং সিটি মেয়রকে স্মারকলিপি দিয়ে তাদের দাবি পূরণের জন্য সাত দিন সময় বেঁধে দেন।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়কে ওজন স্কেল বসানোর কারণে এখানকার ব্যবসায়ীরা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়েছেন। আমদানি পণ্যের মান যাচাই সনদ এখন চট্টগ্রামের বদলে নিতে হয় ঢাকা থেকে। সর্বশেষ চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য বেসরকারি কন্টেইনার ডিপোতে পরিবহন করতে কন্টেইনারে লাগানো হচ্ছে ইলেকট্রনিক তালা। এ অবস্থায় ব্যবসার প্রতিযোগীতায় পিছিয়ে পড়ছেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা। পণ্য পরিবহনে গুনতে হয় বাড়তি খরচ। এসব অভিযোগে হাজারেরও বেশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে রোববার দুই ঘন্টার জন্য রাস্তায় নেমেছিলেন বন্দরনগরীর ব্যবসায়ীরা।

কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে আড়তদাররা অভিযোগ করেন, সড়কপথে ওজন স্কেল বসিয়ে কড়াকড়ি করায় ঢাকার ব্যবসায়ীরা চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ ভেড়াচ্ছেন না। তারা বর্হিনোঙ্গর থেকে লাইটারেজ জাহাজে করে পণ্য খালাস করে নৌপথে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন। এতে চট্টগ্রাম বন্দরও পিছিয়ে পড়ছে।
ব্যবসায়ীরা হুমকি দিয়ে বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে সাত দিনের মধ্যে ওজন স্কেল সরিয়ে নেওয়া না হলে চট্টগ্রামে পাইকারি পণ্যের বাজার এবং পণ্যবাহী যান চলাচল বন্ধ রাখা হবে।

খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক জামাল হোসেন বলেন, দেশের অন্যান্য মহাসড়কে ২০ টন পণ্য পরিবহন করা গেলেও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সেটা কমিয়ে ১৩ টন করা হয়েছে। কিন্তু পরিবহনের ভাড়া কমেনি। ২০ টনের যে ভাড়া, ১৩ টনের জন্যও একই ভাড়া নেওয়া হয়। পণ্যও কম যায়। এই অবস্থায় আমরা তো অন্যান্য অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়ে গেছি।

তিনি বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মান নিয়ন্ত্রণে ওজন স্কেল বাস্তবায়ন করেছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। এর ফলে নির্ধারিত ওজনের বেশি পণ্য নিয়ে চলাচলকারী গাড়িকে জরিমানা গুনতে হয় প্রতিদিন। এতে খরচ বেড়ে গিয়ে তা পণ্যের দামের সাথে যুক্ত হয়।

কর্মসূচিতে একাত্মতা জানিয়ে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, যেকোনো যৌক্তিক দাবি আলোচনার মাধ্যমে আদায় করা সম্ভব। মেয়র ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদেরকে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের হয়রানি বন্ধ এবং পণ্যমূল্য স্বাভাবিক রাখার জন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ওজন স্কেল স্থায়ীভাবে বন্ধের ব্যাপারে সেতুমন্ত্রী, সচিব ও জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলার আশ্বাস দেন।

কর্মসূচিতে অংশ নেন চাক্তাই শিল্প ও ব্যবসায়ী সমিতি, বাংলাদেশ সিমেন্ট আয়রন অ্যান্ড স্টিল মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, চট্টগ্রাম ডাল মিল ব্যবসায়ী সমিতি, রাইচমিল মালিক সমিতি, নবী সুপার মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতি, ইলিয়াস মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতি, খাতুনগঞ্জ চিনি ও ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতি, চট্টগ্রাম বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবসায়ী গ্রুপ, বৃহত্তর চাক্তাই খাতুনগঞ্জ শ্রমিক সমিতিসহ মোট ২৮ টি সংগঠন।