চট্টগ্রামে পরিচ্ছন্ন কর্মীদের জন্য আবাসিক ভবন

চট্টগ্রামে সিটি কর্পোরেশন এলাকা দিনে রাতে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখে অনেক পরিচ্ছন্ন কর্মী। শহরবাসীর ঘরবাড়ির আশপাশ ও রাস্তাঘাট তারা নিয়মিত পরিস্কার রাখলেও তাদের থাকার কোন ঘর নেই। এইসব পরিচ্ছন্ন কর্মীদের জন্য
সেবক কলোনী নামে ৪টি বহুতল আবাসন ভবন নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। আজ সোমবার (২০ জুলাই) চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে এইসব আবাসিক ভবনের নির্মাণ উদ্বোধন করেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। এসময় মেয়র বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রান্তিক মানুষের আর্থ সামাজিক নিরাপত্তার স্তম্ভ। প্রধানমন্ত্রীর একান্ত ইচ্ছা ও প্রণোদনায় চট্টগ্রাম নগরীর পরিচ্ছন্ন কর্মীদের জন্য বাসযোগ্য অত্যাধুনিক আবাসন ভবন নির্মাণ উদ্যোগ সমাজের কর্মজীবী প্রান্তিক জনগোষ্টির বাসস্থানের মৌলিক অধিকার পূরণের একটি ভিত্তি ও সোপান। এই অধিকার আদায়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আমার নিবেদনে তিনি সাড়া দিয়ে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ ও প্রকল্প প্রস্তাবনা পত্র চার বার কাটছাট করে তা চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠির আর্থসামাজিক নিরাপত্তার পথিকৃৎ হলেন এবং সমাজ প্রগতির-সফল রাষ্ট্র নায়ক হিসেবে হিমালয় সম উচ্চতায় উন্নিত হলেন। তাই শেখ হাসিনা প্রান্তিক মানুষের আর্থ সামাজিক নিরাপত্তার স্তম্ভ। নগরীর ৩২ নং আন্দরকিল্লা ও ৩৩ নং ফিরিঙ্গীবাজার ওয়ার্ডে অবস্থিত সেবক কলোনীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বরাদ্দকৃত প্রায় ১শ ১১ কোটি টাকায় ৪টি-প্রতিটি ১৪ তলা বিশিষ্ট অত্যাধুনিক পরিচ্ছন্নকর্মী ভবন নির্মাণকাজ শুরু হয়। তিনি আরো বলেন, বহুকাল আগে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলে উত্তর প্রদেশের খরা কবলিত এলাকাগুলোতে কর্মচ্যূত হরিজন শ্রেণীর বেশকিছু পরিবারকে এতদ:অঞ্চলে নিয়ে আসা হয়েছিল। পরে এইসব কৃষক পরিবারের সদস্যরা পেশা বদল করে পরিচ্ছন্নকর্মী হিসেবে নিযুক্ত হয়ে নাগরিকদের সেবা দিয়ে আসছিলেন। এদের জীবনমান ছিল অত্যন্ত নিম্ন মানের এবং তারা অচ্যূত হিসেবে গণ্য হয়ে নিন্দনীয় সামাজিক বৈষম্যের শিকার হয়ে দীর্ঘকাল অবহেলা ও অবজ্ঞায় কাটিয়েছেন। আজ পরিচ্ছন্নকর্মী হিসেবে হরিজন সম্প্রদায়ের পাশাপাশি বেশকিছু বাঙালি পরিবারও এই পেশায় যুক্ত হয়েছেন এবং তারা সকলেই ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সেবাদানকারী পরিচ্ছন্নকর্মী হিসেবে বেতন-ভাতা ভোগ করছেন। মেয়র বলেন, আমি আমার ছাত্র জীবন থেকেই লক্ষ্য করেছি যে, তাদের বাসস্থান বা কলোনীগুলোর অবস্থা খুবই শোচনীয় এবং অপরিচ্ছন্ন ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তারা জীবনধাণ করছেন। আমার পূর্বসূরী মেয়র হিসেবে যাঁরা ছিলেন তাঁরাও চেষ্টা করেছেন সেবক শ্রেণীর জীবনমান উন্নয়নে। আমি তাঁদের কাছে প্রাণিত হয়ে পরিচ্ছন্ন কর্মীদের জীবনমান উন্নয়নের পূর্বশর্ত হিসেবে তাদের আবাসন সংস্থানের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিয়ে তা বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করি। চলমান করোনা পরিস্থিতির কারণে চট্টগ্রাম সহ সারা দেশে মেগা প্রকল্পগুলোর কাজ কিছুটা হলেও গতি হারিয়েছে। কিন্তু চট্টগ্রামে সেবক কলোনীতে পরিচ্ছন্ন কর্মীদের আবাসন ভবন নির্মাণ কাজের জন্য বরাদ্দ আংশিক কমিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন অব্যাহত রাখার উদ্যোগ চলমান রয়েছে। এজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি শুধু ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানানোটাই যথেষ্ট নয়, তাঁর এই জনকল্যাণমূখি চেতনাকে আমরা যাঁরা রাজনীতি করি তাঁদের অন্তরে ধারন করতে পারলে সমাজ প্রগতির ধারা তীব্রতর হবে। তিনি পরিচ্ছন্ন কর্মীদের উদ্দেশ্যে আরো বলেন, সম্প্রতি পরিচ্ছন্ন কাজের গতি বাড়াতে ডোর টু ডোর আবজর্না সংগ্রহে প্রায় ২ হাজার পরিচ্ছন্ন কর্মী নিয়োগ দান করেছি। এই নিয়োগে সেবক কলোনীর কর্মীদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। তিনি জানান, ১৪ তলা বিশিষ্ট ৪ টি ভবনের প্রতিটি ফ্লাটে একেক পরিবারের জন্য অন্যান্য স্পেসসহ থাকার জন্য ৪৩৫ বর্গফুট আয়তন থাকছে। এছাড়াও প্রতিটি ভবনে এই আয়তনের মধ্যে দু’টি বেড রুম, লিভিং কাম ডাইনিং স্পেশ, কিচেন ও ওয়াসরুম থাকবে। প্রতিটি ভবনের নীচতলায় স্কুল, কমিউনিটি সেন্টার, কির্ডস জোন, উপাসনালয়, ২টি লিফট, ৪০০ কেভি জেনারেটর, ট্রান্সফরমার ও অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা সরঞ্জাম থাকবে। চট্টগ্রাম নগরীতে এই পরিচ্ছন্নকর্মী ভবন একটি সর্বাধুনিক বাসযোগ্য আবাসন হিসেবে পরিচালিত হবে। ৩২ নং আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী ও ৩২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিল্পবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন, আলহাজ্ব ইসমাইল বালী সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর আঞ্জুমান আরা বেগম, লুৎফুন্নেছা দোভাষ বেবী, মেয়রের একান্ত সচিব মোহাম্মদ আবুল হাশেম, তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী মনিরুল হুদা, ঝুলন কান্তি দাশ, নির্বাহী প্রকৌশলী ফরহাদুল আলম, সহকারী প্রকৌশলী সালমা বেগম, মো. মিজবাউল আলম, মো. রিফাতুল আলম, উপ-সহকারী প্রকৌশলী তানজিম ভূইয়া, ঠিকাদার আশীষ কুমার দাশ, দিদারুল আলম, সায়েম রিজভীসহ হাজী নাসির আহমেদ, হাজী মাহমুদুর রহমান বাবুল, মোহাম্মদ ইসহাক মিয়া, মঞ্জুর আলম,মঞ্জুর মোরশেদ, ছগির আহম্মদ, মোহাম্মদ ইউনুস, খোরশেদ আলম রহমান, তাজউদ্দিন রিজভী, তানভীর আহমেদ রিংকু, জাহাঙ্গীর আলম, খালেক হোসেন, আব্দুল আজিজ, এনামুল হক, আব্দুল মতিন, আব্দুল গফুর সুমন, মো. মহিউদ্দিন, অসিউর রহমান, মো. পারভেজ, নুরুল আজিম, আকতার মিয়া, সরওয়ার সরকার, সামিউল হাসান, মো. আজম, অনিন্দ্য দেব, মো. নজরুল,মো. নাবেদ, প্রমুখ। মুনাজাত পরিচালনা করেন ফিরিঙ্গীবাজার জামে মসজিদের সহকারী ইমাম হাফেজ আব্দুল আওয়াল ও গীতা পাঠ করেন আকাশ বাবু উপস্থিত ছিলেন।