গার্ড অব অনার দিয়ে কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার গ্রামের বাড়িতে ফায়ারম্যান সোহেল রানার নামাযে জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় ঢাকা থেকে সোহেল রানার লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স ইটনা উপজেলার চৌগাঙ্গা ইউনিয়নের কেরুয়াইল গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায়।সোহেল রানার লাশ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছার পর হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। অপেক্ষায় থাকা হাজারো মানুষ একনজর সোহেল রানার মরদেহ দেখতে ভিড় জমান। সোহেল রানার বাবা-মা, পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়-স্বজনসহ উপস্থিত অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন।
সোহেল রানার অকাল মৃত্যু সহ্য করতে না পেরে বাবা নূরুল ইসলাম বারবার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলছিলেন, ‘আমার সোহেল বলেছিল আমি একটু সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে নেই। তারপর আম্মার সঙ্গে আপনাকে আমি হজ করতে পাঠাব। সেই সুযোগ সে পেল না। এখন তো সে বিদায় নিয়ে চলেই গেল। এখন আমাদের কে নিয়ে যাবে।’মা হালিমা খাতুন বুক চাপড়ে আর্তনাদ করে বারবার মাটিতে লুটিয়ে পড়ছিলেন। সঙ্গে থাকা স্বজনরা কোনোমতেই তাঁকে শান্ত করতে পারছিলেন না। তিনি শুধু বারবার বিলাপ করে বলছিলেন, ‘শেষ বার যাওয়ার আগে পুত আমাকে বারবার বলে গিয়েছিল, মা বৈশাখ মাস শুরুর আগেই আমি ১৫ দিনের ছুটি নিয়ে চলে আসব। শুনে আমি বলেছিলাম, বাপ, তোর তিন ভাই বাড়িতে আছে। তোকে ধান কাটতে আসতে হবে কেন। সে উত্তর দিয়েছিল, একজন এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে, আরেকজন সামনে বছর এসএসসি দিবে, ধান কাটলে তাদের লেখাপড়ার ক্ষতি হবে। তাই আমি নিজেই আসব।’শোকাহত প্রতিবেশীরা জানান, বড় বোনের বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর বাকি ছোট তিন ভাইয়ের মধ্যে সোহেল রানা ছিলেন সবার বড়। একমাত্র উপার্জনক্ষম হওয়ায় অভাবের সংসারে তাদের সবার আশা ও ভরসার জায়গা ছিল তাদের প্রিয় বড় ভাই সোহেল। তিন ভাই উজ্জ্বল, রুবেল ও দেলোয়ারের লেখাপড়ার খরচ তিনি বহন করতেন। ছুটি কাটিয়ে গত ২৩ মার্চ কর্মস্থলে ফিরে যান সোহেল রানা। যাওয়ার আগে বলে গিয়েছিলেন, পয়লা বৈশাখ বাড়িতে ফিরে সবাইকে নিয়ে বৈশাখি উৎসব করবেন।মঙ্গলবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় স্থানীয় চৌগাঙ্গা ফাজিল মাদ্রাসা মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে সোহেল রানাকে দাফন করা হয়। হাজার হাজার মানুষ তাঁর জানাজা ও দাফনে অংশ নেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ইটনা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল হাসান চৌধুরী, জেলা প্রশাসক মো. সারোয়ার মুর্শেদ চৌধুরী, পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদ, ফায়ার সার্ভিসের ময়মনসিংহ বিভাগীয় উপ-পরিচালক দুলাল মিয়া।গত ২৮ মার্চ বনানীর এফ আর টাওয়ারের আগুন নেভাতে ও আটকে পড়া ব্যক্তিদের উদ্ধারকাজে অংশ নেওয়ার সময় গুরুতর আহত হন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কুর্মিটোলা স্টেশনের ফায়ারম্যান সোহেল রানা। পরে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সুচিকিৎসার জন্য তাঁকে সিঙ্গাপুর পাঠানো হয়। সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়।