কোরবানির বর্জ্য বিকেল ৪ টার মধ্যে অপসারণে প্রস্তুত চসিক

মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেছেন, যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৩তম শাহাদাতবার্ষিকী পালন এবং পবিত্র ঈদুল আযহার দিন কোরবানি বর্জ্য অপসারণের ব্যাপারে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। গতকাল রবিবার দুপুরে চসিক কেবি আবদুচ ছত্তার মিলনায়তনে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৫ম নির্বাচিত পরিষদের ৩৭তম সাধারণ সভার সভাপতির বক্তব্যে মেয়র একথা বলেন। মেয়র বলেন, আগামী ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় সাথে পালন করা হবে। এ লক্ষ্যে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ৩ দিনব্যাপী ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে : ১৩ আগস্ট চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত স্কুল ও কলেজসহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের জন্য ‘বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবন’ অনূর্ধ্ব ৫ শত শব্দের মধ্যে ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ অনূর্ধ্ব ১ হাজার শব্দের মধ্যে রচনা প্রতিযোগিতা, ১৪ আগস্ট সকাল ১০ টায়

চসিক কেবি আবদুচ ছত্তার মিলনায়তনে খতমে কোরআন, মিলাদ মাহফিল, এতিম শিশুদের মধ্যে তবারুক বিতরণ এবং ১৫ আগস্ট সূর্যোদয়ের সাথে সাথে প্রধান কার্যালয়, আঞ্চলিক অফিস, ওয়ার্ড কার্যালয়, কর্পোরেশন পরিচালিত স্কুল/কলেজ, হাসপাতালসহ সিটি কর্পোরেশনের অন্যান্য সকল কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন পতাকা অর্ধনমিতকরণ, কালো ব্যাজধারণ, কালো পতাকা উত্তোলন ছাড়াও সকাল ৭ টায় কর্পোরেশন পরিচালিত ফোরকানিয়া মাদ্রাসায় স্ব–স্ব উদ্যোগে মিলাদ মাহফিল ও বিশেষ মুনাজাত, সকাল সাড়ে ৮ টায় কর্পোরেশন সম্মুখস্থ বঙ্গবন্ধু চত্বরে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, সকাল ৯ টায় স্ব–স্ব স্কুল ও কলেজ মিলনায়তনে কর্পোরেশন পরিচালিত সকল বিদ্যালয়–কলেজের উদ্যোগে ছাত্র–ছাত্রীদের উপস্থিতিতে মিলাদ মাহফিল ও আলোচনা সভা, সকাল সাড়ে ৯ টায় কেবি আবদুচ ছত্তার মিলনায়তনে রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ।
মেয়র কোরবানি পশুর বর্জ্য অপসারণের প্রস্তুতির বিষয়ে বলেন, আসন্ন কোরবানি ঈদের দিন বিকাল ৪টার মধ্যে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী পুরো নগরীর জবাইকৃত পশুর বর্জ্য অপসারণের ব্যাপারে কর্পোরেশন ব্যাপক কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নগরীতে ৩৪১টি পশু জবাইয়ের স্থান নির্ধারণ করেছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে পশুবর্জ্য অপসারণে সব ধরণের প্রস্তুতি হাতে রেখেছে কর্পোরেশন। এ লক্ষ্যে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কর্পোরেশনের নির্ধারিত স্থানে পশু জবাই সংক্রান্ত তথ্য উল্লেখ করে ৪ লক্ষ ১০ হাজার লিফলেট ও ২০ হাজার ৫ শ পোস্টার এবং ৭৬ হাজার ২৩১ ব্যানার ওয়ার্ড পর্যায়ে বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন পশু কোরবানির নির্বাচিত স্থানে পানির সরবরাহ, সেবাপ্রাপ্তির বসার স্থান, তাঁবু টাঙানো এবং ব্লিচিং পাউডারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। নির্ধারিত স্থান ছাড়া উন্মুক্ত স্থান বা সড়কে পশু জবাই করা যাবে না। তবে কেউ চাইলে তার বাড়ি বা বসার আঙিনায় পশু কোরবানি দিতে পারবেন। এ লক্ষে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ঈদের দিন ও ঈদের পরের দিন মোট ২দিনে প্রতি ওয়ার্ডে টমটম আবর্জনাবাহী গাড়ি, পে–লোডার, ট্রাক্টর ওয়াগনসহ মোট ২৪১টি গাড়ি ও অবশিষ্ট ১০টি গাড়ি দামপাড়া কন্ট্রোল রুমে রিজার্ভ থাকবে। মেয়র বলেন, আগামী ২২ তারিখ ঈদুল আজহা অনুষ্ঠিত হবে। ঐদিন সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৪ টার মধ্যে পুরো নগরীতে কোরবানির দিন জবাইকৃত পশুর বর্জ্য অপসারণ এবং ঈদের পরের দিন শেষ রাত পর্যন্ত বর্জ্য অপসারণের লক্ষে ৪১টি ওয়ার্ডকে উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব, পশ্চিম–৪টি জোনে ভাগ করেছে। প্রত্যেক জোন তদারকির জন্য একটি করে ‘উপ–কমিটি’ ও ৪ সদস্যবিশিষ্ট ১টি কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম নিশ্চিতকল্পে কোরবানি ঈদের দিন সকল স্থায়ী–অস্থায়ী ৫ হাজার পরিচ্ছন্ন কর্মীর ছুটি বাতিল এবং ডোর–টু–ডোর পদ্ধতিতে বর্জ্য সংগ্রহ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্টদেরকে সকাল ৯ টার মধ্যে স্ব স্ব ওয়ার্ডে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ সমস্ত কার্যক্রম ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলরা তদারকি করবেন। দিনব্যাপী এ কর্মসূচি যাতে সুচারু ও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরিক্ষার–পরিচ্ছন্ন কার্যক্রমে নগরবাসীর সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন মেয়র।
সভায় অর্থ ও সংস্থাপন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা ও স্বাস্থ্যরক্ষা, নগর পরিকল্পনা এবং উন্নয়ন, হিসাব নিরীক্ষা ও রক্ষণাবেক্ষণ, নগর অবকাঠামো নির্মাণ ও সংরক্ষন, পানি ও বিদ্যুৎ, সমাজকল্যাণ ও কমিউনিটি সেন্টার, পরিবেশ উন্নয়ন, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি, যোগাযোগ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, দারিদ্র হ্রাসকরণ ও বসতি উন্নয়ন, বাজারমূল্য পর্যবেক্ষণ ও মনিটরিং, আইন–শৃংখলা এবং পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ বিষয়ক স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যানবৃন্দের স্ব–স্ব স্ট্যান্ডিং কমিটির কার্যবিবরণী উপস্থাপন করেন। এতে নির্বাচিত পরিষদের ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর, অফিশিয়াল কাউন্সিলরসহ সিটি কর্পোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিভাগীয় প্রধানগণ উপস্থিত ছিলেন। সভা পরিচালনা করেন চসিক ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল হোসেন। সভায় সদ্যপ্রয়াত নগরীর বিশিষ্ট ব্যক্তিদের রূহের মাগফেরাত কামনা, দেশ–জাতি ও চট্টগ্রামের সমৃদ্ধি কামনায় বিশেষ মুনাজাত করা হয়।
সভায় নাগরিকদের দ্রুত যোগাযোগের মাধ্যমে নগর সেবা প্রাপ্তি সহজতর করার লক্ষ্যে রোড কাটিং স্টপ সার্ভিস চালু, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত ১০ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নতুন ভবন নির্মাণ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। স্কুলগুলোর মধ্যে কাপাসগোলা সি/ক উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, পাথরঘাটা মেনকা সি/ক উচ্চ বিদ্যালয়, কৃষ্ণকুমারী সি/ক বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, কুসুম কুমারী সি/ক বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, পূর্ব বাকলিয়া সি/ক বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, গুল–এজার বেগম সি/ক বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, আলকরণ সুলতান আহমদ দেওয়ান সি/ক বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, বলুয়ারদিঘি সি/ক উচ্চ বিদ্যালয়, লামাবাজার সি/ক বালক উচ্চ বিদ্যালয়, অপর্ণাচরণ সি/ক বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও চরচাক্তাই সি/ক উচ্চ বিদ্যালয় রয়েছে।–বিজ্ঞপ্তি