সীতাকুণ্ডে সলিমপুর সাগর উপকূলে সরকারি কেওড়া বন উজাড় করে শিপ ইয়ার্ড নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। এ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সীতাকুণ্ড প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছে সলিমপুর এলাকাবাসী।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, মোঃ জাহাঙ্গির আলম, কায়ছারুল আলম, আমজাদ হোসেন, আশরাফুদ্দৌলা রহমান, সাহেদ কাদের, রিদোয়ান উদ্দিন সায়মন প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, আশরাফুদ্দৌলা রহমান।
লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়, সলিমপুর এলাকাটি একেবারেই সাগর উপকূলে অবস্থিত। উপকূলের প্রাকৃতিক পরিবেশ, সাগর, বনভূমি, বেড়িবাঁধ প্রভৃতি আমাদের জীবনযাত্রাকে দারুণভাবে প্রভাবিত করে। এ পরিবেশ স্বাভাবিক থাকলে আমরাও নিরাপদে থাকি আর উপকূলীয় পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্থ হলে স্থানীয় জনজীবনে এর চরম নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়। সেসময় বেড়িবাঁধ ও উপকূলীয় বনায়ন না থাকায় আমাদের এলাকায় ১০ ফুট উঁচু সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস আঘাত হানে। এতে প্রচুর প্রাণ ও সম্পাদহানি হয়। যা স্থানীয়দের মধ্যে এখনো আতংক হয়ে আছে। তবে সরকারকে ধন্যবাদ জানাতে চাই এজন্য যে, ৯১ এর ক্ষতি দেখে সরকার এখানে বেড়িবাঁধ স্থাপনের পাশাপাশি সলিমপুর ও তুলাতলী মৌজায় সুবিশাল বনভূমি গড়ে তোলে। যার ফলে ৯১ এর পরবর্তিতে আমাদের উপর দিয়ে অনেক ঝড় বয়ে গেলেও এলাকার হাজার হাজার মানুষকে বড় ধরণের বিপদের মুখোমুখি কহতে হয়নি। কিন্তু ২০১৮ সাল থেকে এ এলাকায় পরিস্থিতি বদলে যেতে শুরু করে। এসময় সলিমপুর-ভাটিয়ারী তুলাতলী মৌজার সংরক্ষিত বনায়নের মধ্যেই শিপইয়ার্ড নির্মাণের উদ্যোগ নেন শীতলপুর এলাকার এক ব্যবসায়ী আবুল কাসেম প্রকাশ রাজা। তিনি বিবিসি স্টিল নাম প্রতিষ্ঠানের নামে সেখানে ইতিমধ্যে ইয়ার্ড করার কাজ শুরু করেছেন।
লিখিত বক্তব্যে আরোও জানানো হয়, যে জায়গায় তিনি বিবিসি স্টিল শিপইয়ার্ড করতে চান সেখানে আমাদের বেশ কয়েকজন গ্রামবাসীর নিজস্ব জায়গায়, চিংড়ি ঘের আছে। তাছাড়া সলিমপুর ঝুনামার্কেট এলাকার ১নং খাস খতিয়ানে কাট্টলী বন বিটের অধীনে সুবিশাল সরকারি বনভূমিও আছে। বনায়নের মধ্যে শিপব্রেকিং ইয়ার্ড করা আইনত নিষিদ্ধ। আর বাংলাদেশ গেজেডে তুলাতুলী মৌজায় শিপব্রেকিং ইয়ার্ড নির্মাণ নিষিদ্ধ করা আছে। বন ও তুলাতলী মৌজায় শিপইয়ার্ড নিষিদ্ধ থাকায় ঐ জায়গাটি এম.এ কাসেম রাজাকে লিজ প্রদানে ভূমি অফিস তাদের সার্ভে রিপোর্টে বনায়নের তথ্যটি গোপন করে লিজ দিতে সহযোগিতা করছে। যা আমাদেরকে বিস্মিত করেছে। আর এভাবে কতিপয় সরকারি কর্মকর্তার সহযোগিতায় তথ্য গোপন করে সলিমপুর মৌজায় বিশালাকার খাস বনভূমি লিজ নিয়ে তিনি সেখানে লাঠিয়াল দিয়ে জোরপূর্বক ইয়ার্ড নির্মাণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ নিয়ে প্রতিবাদ করায় আমাদের মিথ্যা মামলায় জড়ানোর চেষ্টাসহ নানানভাবে হয়রানি করছেন। তাছাড়া তার লিজকৃত জায়গা থেকে সরকারি গাছ নিশ্চিহ্ন করতে তিনি এখন ভাড়াটিয়া লোক লাগিয়ে প্রতিদিন রাতের আধাঁরে ১০-১৫টি কিংবা আরো বেশি সংখ্যক কেওড়া গাছ কেটে গোড়া থেকে উপড়ে ফেলছেন। বিতর্কিত ব্যবসায়ী এম.এ কাসেম রাজার এসব অপচেষ্টার ফলে আমরা এখন তার কাছে নিজের সম্পদ ও আমাদের জানমাল রক্ষাকারী বনভূমি হারানোর আশংকায় উদ্বিগ্ন । এ এলাকার বনভূমি রক্ষার বিষয়টি নিয়ে আমরা সংসদ সদস্য আলহাজ¦ দিদারুল আলমের কাছেও স্মরণাসম্পন্ন হয়েছি আমরা। তিনি বনায়নে অবৈধ শিপইয়ার্ড নির্মাণ বন্ধের আশ্বাস দিলেও এখনো এম.এ কাসেম রাজা সেখানে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এ অবস্থায় ভূক্তভোগী এলাকাবাসী গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে বনভূমি ও এলাকাবাসীর সম্পদ রক্ষায় সরকারের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।