কেএসআরএম এর উদ্যোগে সাতকানিয়ায় নদী ভাঙ্গন রোধ

দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্প গ্রুপ কবির স্টিল রি–রোলিং মিলস (কেএসআরএম) লিমিটেড সাতকানিয়ায় ডলু নদীর ভাঙন রোধ করে গ্রামের বিশাল এলাকা রক্ষা করেছে। এতে দক্ষিণ গাটিয়া ডেঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাঙ্গরমুখ বাজার, সড়ক ও এলাকার অসংখ্য বাড়িঘর রক্ষা পেয়েছে। সাতকানিয়ার নলুয়া ইউনিয়নের পূর্ব গাটিয়া ডেঙ্গা গ্রামের পাশ দিয়ে প্রবাহমান ডলু নদীর ভাঙন রোধে দীর্ঘ গাইড ওয়াল (প্রতিরোধ দেয়াল) স্থাপন করেছেন কেএসআরএম লিমিটেডের স্বত্ব্বাধিকারী মোহাম্মদ শাহজাহান। অথচ এলাকাবাসী দীর্ঘদিন থেকে সংশ্লিষ্টদের কাছে এ ব্যাপারে আবেদন নিবেদন করেও প্রতিকার পাননি। কিস্ত‘ কেএসআরএম লিমিটেডের মালিক নিজের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে বিশাল এলাকা জুড়ে ডলুর ভাঙন রোধ করেছেন। এমন তথ্য জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

জানা যায়, কেএসআরএম লিমিটেডের স্বত্ব্বাধিকারী মোহাম্মদ শাহজাহানের গ্রামের বাড়ি সাতকানিয়া উপজেলার নলুয়া ইউনিয়নের পূর্ব গাটিয়া ডেঙ্গা। ওই গ্রামের পাশ দিয়েই প্রবাহমান আগ্রাসী ডলু নদী। প্রতি বছর বর্ষা মেস্তসুমে ডলুর ভাঙনের কবলে পড়ে অসংখ্য বাড়ি ঘর স্থাপনা বিলীন হয়ে যায়। এতে বাস্তুহারা হয় অনেক মানুষ। সেই ধারাবাহিকতায় বছরের পর বছর ভাঙনে পূর্ব গাটিয়া ডেঙ্গা গ্রামের একটি বিশাল অংশ ডলুর গর্ভে নিশ্চিহ্ন হয়। কিস্ত‘ সেখানে ভাঙন রোধে সরকারের কোনো উদ্যোগ ছিল না। এতে ওই এলাকায় ডলু নদী পাড়ের বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে অসহায়ভাবে দিনাতিপাত করতেন। কেউ কেউ পূর্বপুরুষের ভিটাবাড়ি হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপনে অভ্যস্তÍ হয়ে পড়েন। অথচ ডলুর ভাঙন রোধের জন্য এলাকাবাসী দীর্ঘদিন থেকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বারবার আবেদন নিবেদন করেও কোনো প্রতিকার পায়নি। বারবারই আশ্বাসের বাণী শুনেই তাদেরকে নিভৃত থাকতে হয়েছে বছরের পর বছর। এরই মধ্যে বিদ্যালয়ের মাঠ, বাজার, সড়ক, ইবাদতখানা, অসংখ্য দোকান ও বাড়িঘর বিলীন হয়ে যায় ডলুর গর্ভে। এমন পরিস্থিতিতে বিষয়টি অনুধাবন করে দানবীর মোহাম্মদ শাহজাহান নিজ উদ্যোগে ডলুর ভাঙন রোধে উদ্যোগী হন। এ বিষয়ে অভিজ্ঞ প্রকেস্তশলীদের পরামর্শ ও তত্ত্বাবধানে ব্যক্তিগতভাবে ডলুর তীর ভাঙন রোধে কাজ শুরু করেন। ভাঙন রোধে শুষ্ক মৌসুমে ডলুর তলদেশ খনন করে লোহার নেট বসানোর পর দেওয়া হয় কংক্রিটের ঢালাই। এরপর সেখানে সিমেন্ট ও বালির মিশ্রণ তৈরি করে বড় বড় বস্তÍায় ভরে সারিবদ্ধভাবে স্থাপন করে গড়ে তোলা হয় চওড়া বাঁধ। পরে ওই বাঁধের ভেতরের অংশে ভরাট করা হয় বালি। এভাবে নদীর গর্ভ থেকে বিশাল এলাকা উদ্ধার ও ভাঙন ঠেকানো হয়। দীর্ঘদিন ধরে এসব কর্মযজ্ঞের মাধ্যমে মোহাম্মদ শাহজাহান ব্যক্তিগত খাত থেকে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে রোধ করেন ডলুর ভাঙন। এতে পুরো গ্রামের বিশাল এলাকা নদীর ভাঙন থেকে রক্ষা পাওয়ার পাশাপাশি অংসখ্য মানুষ তাদের পূর্ব পুরুষের ভিটা বাড়িতে নিরাপদে বসবাস করতে পারছেন। এভাবেই তিনি এলাকার হাজার হাজার মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন। রক্ষা করেছেন মাথা গোঁজার ঠাই। ভাঙন রোধে বাঁধ দেওয়া ডলুর পাড়টি এখন এলাকার দৃষ্টিনন্দন বিনোদন স্পট হিসেবে পরিচিত।
হাঙ্গরমুখ বাজারের ব্যবসায়ী আবদুছ ছাত্তার বলেন, এলাকার বিশাল এলাকা ডলুর ভাঙনের মুখে তলিয়ে গিয়ে পুরো বাজারটি নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল। শাহজাহান সাহেব বাঁধ দেওয়ার পর বালি ভরাট করে তা উদ্ধার করেন। পরবর্তীতে আবারো গড়ে তোলা হয়েছে অসংখ্য দোকানপাট। মূলত: আমরা এখন নতুন করে নির্মিত ওইসব দোকানে ব্যবসা করছি।
যোগাযোগ করা হলে কেএসআরএম লিমিটেডের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর শাহরিয়ার জাহান বলেন, কোনো দান প্রকাশ্যে করা ইসলাম সমর্থন করে না। আমরা সেই বিশ্বাস থেকে সবসময় প্রচারবিমুখ ছিলাম এসব ক্ষেত্রে। আমরা যা কিছু করেছি বা করছি তা মানুষের কল্যাণের জন্য। তাদের সন্তুষ্টির মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি অর্জনই আমাদের লক্ষ্য। লোক দেখানো কোনো সাহায্য আমরা কখনো করিনি। ডলু নদীর ভাঙন রোধে আমাদের যে কাজ, তা করেছি গ্রামের বিশাল এলাকাকে নদীর ভাঙন থেকে রক্ষা করে অসহায় মানুষের ভিটাবাড়ি রক্ষার জন্য। আমাদের সেই উদ্যোগ সফল হয়েছে। আমরা সেখানে শুধু ভাঙন রোধ করেই দায়িত্ব শেষ করিনি। তা নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণও করা হয়ে থাকে আমাদের পক্ষ থেকে।

গ্রামে ডলুর ভাঙন রোধে কতো টাকা ব্যয় হয়েছে? এমন প্রশ্নের জবাব কৌশলে এড়িয়ে গিয়ে শাহরিয়ার জাহান বলেন, ‘এসব কথা কাউকে জানানোর প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করি না। আমরা যা করেছি মানবিক বিবেচনায় ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে করেছি। সুতরাং টাকার অঙ্কটা অপ্রকাশিতই থাক।’

স্থানীয়দের মতে, কয়েকবছর আগে কেএসআরএমের এমন উদ্যোগের ফলে পূর্ব গাটিয়া ডেঙ্গা গ্রামের হাঙ্গরমুখ এলাকাটি ডলুর গর্ভে বিলীন হওয়া থেকে রক্ষা পায়। রক্ষা পেয়েছে দক্ষিণ গাটিয়া ডেঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও খেলার মাঠ। সড়ক ভেঙে ইউনিয়নের অভ্যস্ত—রীণ যোগাযোগ ব্যবস্থাও নাজুক হয়ে পড়ে। কিন্তু নদীর ভাঙন রোধ করার কারণে সড়ক পুনরুদ্ধার হয়েছে। শাহজাহান সাহেবের এ উদ্যোগের আগে সেখানে সরকারিভাবে ভাঙন রোধে কোনো কাজ করা হয়নি। নিয়মানুযায়ী এসব কাজ করার কথা পানি উন্নয়ন বোর্ডের।

এ প্রসঙ্গে নলুয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আহমদ মিয়া বলেন, আমাদের এলাকার অবকাঠামো উন্নয়নে সরকারি কোনো সংস্থার অর্থের জন্য অপেক্ষা করতে হয় না। কেএসআরএম লিমিটেডের মালিক শাহজাহান নিজ উদ্যোগে এসব কাজ করে থাকেন। কিস্ত‘ এসব কাজ তিনি করেন গোপনে। এ নিয়ে কোনো প্রচার প্রচারণা তিনি কখনো করেননি। খবর আজাদী