কুরবানির বাজারে জালনোট চাই সতর্কতা

কুরবানির ঈদ সমাগত। আগামি বুধবার দেশব্যাপী মুসলিম সম্প্রদায় পশু কুরবানির মাধ্যমে পালন করবে পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদকে সামনে রেখে এখন বন্দরনগরী চট্টগ্রামসহ সারাদেশে জমে উঠেছে কুরবানির পশুর হাট। এবার দেশের কৃষকরাই যোগান দিচ্ছেন সিংহভাগ কুরবানির পশু। বাকিটা ভারত, নেপাল ও মিয়ানমার থেকে আসছে বৈধ–অবৈধ পথে। আর্থিক লাভের আশায় অনেকে পশু কিনে আবার বিক্রি করছেন। দিন দিন জমে উঠছে পশুর হাট। কিন্তু কুরবানির হাটে প্রতিবারের মতো এবারও জাল টাকার কারবারিরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এদের রুখতে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে দরিদ্র কৃষককুল চরম ক্ষতির শিকার হবেন। সারাবছর ধরে সযতেœ পেলেপুষে বড় করা পশু কুরবানির হাটে এনে নকল টাকার বিনিময়ে প্রতারকদের হাতে তুলে দিয়ে পুঁজিপাট্টা খুইয়ে পথে বসে পড়বেন তারা। সংগতকারণে এ ব্যাপারে বহুমাত্রিক পদক্ষেপ গ্রহণের বিকল্প নেই।
দেশে সারাবছরই জালটাকার কারবারিরা সক্রিয় থাকলেও ঈদ এলে তারা বেপরোয়া হয়ে উঠে। বিশেষত কুরবানির ঈদই হয় তাদের প্রধান টার্গেট। সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে জালনোট চক্রকে পাকড়াও করতে বজ্রঘোষণা দেয়া হলেও তাদের অপকর্ম থেমে থাকে না। ঈদকে সামনে রেখে নানা কৌশলে বাজারে ছড়িয়ে দেয় জালনোট। বাণিজ্যিক লেনদেন এমনকি এটিএম বুথেও পাওয়া যায় জালটাকা। মূলত ঢাকা ও চট্টগ্রাম জালটাকার কারবারিদের কেন্দ্র হলেও তাদের নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে আছে দেশজুড়ে। যথেষ্ট সচেতনতার অভাবে অনেক ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ জালনোট চক্রের ফাঁদে পড়ে আর্থিক দ– ও জেল–জরিমানাসহ নানা ক্ষতির শিকার হয়। জালনোট বিষয়ক বিভিন্ন অনুসন্ধানী রিপোর্টে দেখা যায়, জালিয়াতচক্রের বিশাল সিন্ডিকেটের সঙ্গে কয়েকজন বিদেশি নাগরিকও জড়িত। বিভিন্ন সময়ে বেশ কয়েকজন বিদেশি জালিয়াতকারী ধরা পড়ার খবর প্রকাশিত হয়েছে গণমাধ্যমে। তারা শুধু টাকা নয়, রুপি এবং ডলারও জাল করে বাজারে ছাড়ে একই ধরনের কৌশলে। তারা মাঠপর্যায়ে জালনোট চালাতে এজেন্ট নিয়োগ করে নির্দিষ্ট কমিশনের ভিত্তিতে। জালটাকা চালানোর জন্যে তারা নিত্যনতুন কৌশল অবলম্বন করছে। জালনোটে আসল টাকার কাগজ ব্যবহার হওয়ার কারণে সাধারণ মানুষ সহজে তা সনাক্ত করতে পারে না। খালি চোখে বুঝার উপায় নেই যে, নোটটি আসল কিনা।
জালনোট সনাক্তকরণ মেশিনেও অনেক সময় জালনোট ধরা পড়ে না। কারণ জালনোট ছাপার ক্ষেত্রে জালিয়াতচক্র উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে থাকে। দেশে জালনোট সনাক্তকারী সাধারণ মেশিনগুলো নোটে ব্যবহৃত কাগজটি জাল কিনা তা সনাক্ত করতে পারলেও নোটের জলছাপ বা নিরাপত্তাসুতা জাল কিনা তা সনাক্ত করতে পারে না অনেক সময়। ফলে সনাক্তকারী মেশিনকেও ফাঁকি দিয়ে জালনোটগুলো মিশে যাচ্ছে আসল নোটের কাতারে। আর এসব জালনোট সনাক্ত না হওয়ায় দেশব্যাপী এই নোট দিয়ে লেনদেন চলছে অনেকটা অজান্তেই। এতে একদিকে সাধারণ মানুষ যেমন প্রতারণা ও হয়রানির শিকার হচ্ছে, তেমনি অন্যদিকে দেশের অর্থনীতির উপর পড়ছে প্রচ– চাপ। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে দেশে ব্যবসা–বাণিজ্য ও লেনদেনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিসহ জাতীয় অর্থনীতিতে এর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
আমরা মনে করি, জালকারী চক্রকে পাকড়াও করতে সব কৌশলই প্রয়োগ করা দরকার। পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে সচেতন করার জোরালো কমসূচিও থাকতে হবে। ঈদকে সামনে রেখে চাঁদাবাজ এবং মলমপার্টির দৌরাত্মও বেড়ে গেছে। চাঁদাবাজির কুপ্রভাবে পশুর দাম বেড়ে যাচ্ছে। এতে ক্রেতাদের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অন্যদিকে মলমপার্টির খপ্পরে পড়ে অনেকে পশুবিক্রির টাকা তো খুইয়ে বসেনই, জীবনও বিপন্ন হয়ে পড়ে। কেউ কেউ প্রতারকদের খপ্পরে পড়ে অকালে মারাও যান। এমন ঘটনা গরিব পশুবিক্রেতার জন্য যে কতটা বেদনার তা আসলে লিখে প্রকাশের মতো নয়। মহানগরীর পশুর হাট থেকে শুরু করে সারাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের হাটেও এমন মর্মান্তিক ঘটনা প্রায় প্রতিবছরই ঘটে থাকে। তাই এসব বিষয়েও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।